শীতকালে পায়ের গোড়ালিতে ইনফেকশন একটি সাধারণ সমস্যা। ঠান্ডা আবহাওয়া, শুষ্ক ত্বক এবং সঠিক যত্নের অভাবের কারণে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। ইনফেকশন হলে ব্যথা, লালচে ভাব, ফুলে যাওয়া, এমনকি চলাচলেও অসুবিধা হতে পারে। পায়ের ইনফেকশন একদিকে যেমন শারীরিক অস্বস্তি তৈরি করে, তেমনি দীর্ঘস্থায়ী হলে তা বড় সমস্যার কারণ হতে পারে।
শীতে পায়ের গোড়ালিতে ইনফেকশন হলে গোড়ালিতে লালচে ভাব বা ফোলা, ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ বা রক্তপাত, ব্যথা বা জ্বালাপোড়া, তীব্র শুষ্কতা ও ফাটা ত্বক, ত্বকের চারপাশে খোসা ওঠা, ত্বকে দাগ বা চুলকানির মতো হতে পারে।
শীতে পায়ের গোড়ালিতে ইনফেকশন হওয়ার কারণ
ত্বকের শুষ্কতা
শীতকালে আর্দ্রতার অভাবে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। পায়ের গোড়ালি এই সময় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কারণ এই অংশটি স্বাভাবিকভাবেই মোটা এবং শুষ্ক হয়। শীতে বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকায় ত্বক ফাটে। ফাটা ত্বকে ময়লা ও ব্যাকটেরিয়া জমে ইনফেকশন সৃষ্টি করে। শুষ্ক ত্বকের কারণে ছোট ছোট ফাটল থেকে শুরু করে বড় ক্ষত সৃষ্টি হয়, যা ব্যথা ও ইনফেকশনের কারণ হতে পারে।
পর্যাপ্ত যত্নের অভাব
শীতকালে অনেকেই পায়ের যথাযথ যত্ন নেন না। এটি ইনফেকশনের প্রধান কারণগুলোর একটি। নিয়মিত পা পরিষ্কার না করা, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার না করা এবং পায়ে সঠিক ধরনের মোজা না পরার কারণে পায়ের গোড়ালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পায়ে জমে থাকা ময়লা এবং ব্যাকটেরিয়া সহজেই ইনফেকশন তৈরি করতে পারে।
গরম পানি এবং রাসায়নিক ব্যবহারের প্রভাব
শীতে গরম পানিতে পা ভেজানো একটি সাধারণ অভ্যাস। তবে অতিরিক্ত গরম পানি বা ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট করে। গরম পানি বা হারশ সাবানের কারণে ত্বকের সুরক্ষামূলক স্তর নষ্ট হয়। এটি ত্বককে শুষ্ক ও দুর্বল করে তোলে। দুর্বল ত্বকে সহজেই ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের আক্রমণ ঘটে।
ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাল ইনফেকশন
ফাঙ্গাস এবং ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ শীতে বেশি দেখা যায়। পায়ের গোড়ালিতে সঠিক বায়ু চলাচল না হলে এবং স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ফাঙ্গাল ইনফেকশন দেখা দেয়। এটি ক্র্যাকড হিল বা অ্যাথলেটস ফুটের মতো সমস্যা সৃষ্টি করে।
রক্ত সঞ্চালনের অভাব
শীতকালে শীতল আবহাওয়ার কারণে পায়ে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়। তীব্র ঠাণ্ডা আবহাওয়া রক্তনালীগুলো সংকুচিত করে, যা পায়ের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। পায়ের ত্বক দুর্বল হয়ে যায় এবং ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে।
পায়ের গোড়ালির ইনফেকশন প্রতিরোধে করণীয়
পায়ের পরিচ্ছন্নতা
শীতকালে পায়ের পরিচ্ছন্নতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন পা পরিষ্কার রাখতে হবে এবং ময়লা জমতে দেওয়া যাবে না। কুসুম গরম পানিতে সামান্য লবণ মিশিয়ে পা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এটি ত্বকের ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করবে।
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার
শীতে পায়ের ত্বক শুষ্ক হওয়া রোধে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। পায়ের গোড়ালিতে নারকেল তেল, অলিভ অয়েল, বা ভালো মানের ক্রিম ব্যবহার করুন। এটি ত্বক নরম রাখবে এবং ফাটা প্রতিরোধ করবে।
সঠিক জুতো ও মোজা পরুন
শীতে আরামদায়ক এবং উষ্ণ জুতো ও মোজা পরা অত্যন্ত জরুরি। কটন বা উলের মোজা ব্যবহার করুন। যা বায়ু চলাচল নিশ্চিত করে। স্যাঁতসেঁতে মোজা এড়িয়ে চলুন।
শুষ্ক ত্বক প্রতিরোধে সচেতন হোন
গরম পানি ব্যবহার সীমিত করুন এবং সাবান ব্যবহার কম করুন। হালকা গরম পানি দিয়ে পা ধুয়ে ত্বক শুকিয়ে নিন এবং সঙ্গে সঙ্গেই ময়েশ্চারাইজার লাগান।
রক্ত সঞ্চালন বাড়ানোর জন্য ব্যায়াম
পায়ে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
সহজ স্ট্রেচিং এবং হাঁটা আপনার পায়ের রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করবে।
পায়ের জন্য বিশেষ যত্ন নিন
শীতকালে পায়ের জন্য বিশেষ পেডিকিউর করুন।বাড়িতে পেডিকিউর করার সময় লেবুর রস, লবণ, এবং গ্লিসারিন ব্যবহার করুন।
ঘরোয়া প্রতিকার
কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে পা ভেজান। এটি ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করবে। মধু এবং হলুদ মিশিয়ে ক্ষতস্থানে লাগান। এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করবে। ফাটা গোড়ালিতে নারকেল তেল লাগিয়ে মোজা পরে রাখুন। এটি ত্বক নরম করবে এবং ক্ষত সেরে উঠবে।
ওষুধ ও চিকিৎসা
ক্ষতস্থানে অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম ব্যবহার করুন।
ইনফেকশন বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ ব্যবহার করুন। ফাটা বা ক্ষত থেকে পুঁজ বা রক্তপাত হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।