রমজান মাসে সিয়াম সাধনার পাশাপাশি সঠিক পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারে কী খাওয়া হচ্ছে, তা শরীরের সুস্থতা ও শক্তির উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। অনেকেই ইফতারে অতিরিক্ত ভাজাপোড়া ও ভারী খাবার খেয়ে থাকেন, যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। তাই সুস্থ থাকতে এবং সঠিক পুষ্টি পেতে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা উচিত।
ইফতারে স্বাস্থ্যকর খাবার কেন খাবেন
সারাদিন রোজা রাখার ফলে শরীরে পানিশূন্যতা, গ্লুকোজের ঘাটতি ও শক্তি কমে যেতে পারে। তাই ইফতারের সময় এমন খাবার খাওয়া দরকার যা দ্রুত শক্তি জোগাবে, শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করবে, হজমের জন্য উপকারী, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। তাই স্বাস্থ্যকর ইফতারের জন্য সঠিক খাদ্য তালিকা করে নিন।
খেজুর: প্রাকৃতিক শক্তির উৎস
ইফতার শুরু করার জন্য সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর ও সুন্নতসম্মত খাবার হলো খেজুর। এটি দ্রুত শরীরে গ্লুকোজের ঘাটতি পূরণ করে এবং প্রাকৃতিকভাবে শক্তি জোগায়। খেজুরে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি (গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, সুক্রোজ), আঁশ, খনিজ পদার্থ যেমন পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম থাকে। খেজুরের পাশাপাশি শুকনো ফল, যেমন—কাজু, বাদাম, আখরোট, কিশমিশও খাওয়া যেতে পারে।
পর্যাপ্ত পানি ও স্বাস্থ্যকর পানীয়
সারাদিন রোজা রাখার পর শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে। তাই ইফতারে পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। তবে খুব ঠান্ডা পানি না খাওয়াই ভালো। কারণ এটি হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে লেবু পানি শরীরের পানিশূন্যতা পূরণ করে ও হজমশক্তি বাড়ায়, ডাবের পানি প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ এবং শরীর ঠান্ডা রাখে, শরবত (চিনি ছাড়া) যেমন—তোকমা দানা, বেল শরবত, কিংবা তরমুজের রস। দুধ ও খেজুর মিশ্রিত পানীয় এটি শক্তিবর্ধক ও সহজপাচ্য। কিন্তু অতিরিক্ত চিনি দেওয়া শরবত, কোল্ড ড্রিংকস, কৃত্রিম জুস এবং ফ্রিজের ঠান্ডা পানীয় এড়িয়ে চলাই ভালো।
স্যুপ বা হালকা খাবার
ভাজাপোড়া বা অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবারের বদলে স্বাস্থ্যকর স্যুপ খাওয়া ভালো। যেমন— সবজি স্যুপ: এটি পুষ্টিকর এবং সহজে হজম হয়, মুরগি বা ডাল স্যুপ: প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে এবং দীর্ঘক্ষণ শক্তি জোগায়, মৌসুমি ফল: প্রাকৃতিক ভিটামিনের উৎস যেমন— আপেল, তরমুজ, কলা, আম। ফলের সঙ্গে টক দই বা দই-মধুর মিশ্রণ বানিয়ে খাওয়া আরও উপকারী হতে পারে।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধার ও পেশি গঠনের জন্য প্রোটিন দরকার। স্বাস্থ্যকর প্রোটিনের উৎস— সিদ্ধ ডিম: প্রোটিন ও ভিটামিন-বি সমৃদ্ধ, গ্রিলড বা সেদ্ধ মাছ: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যা হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী, সিদ্ধ বা গ্রিলড মুরগি: কম ফ্যাটযুক্ত প্রোটিনের ভালো উৎস, টক দই: হজমশক্তি বাড়ায় এবং ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে।
তবে অতিরিক্ত ভাজা ও মশলাদার খাবার পরিহার করা উচিত, কারণ এটি হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
ভালো শর্করা সমৃদ্ধ খাবার
ইফতারে এমন শর্করা খাওয়া উচিত যা ধীরে ধীরে শক্তি প্রদান করে এবং দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে। যেমন— আটা বা গমের রুটি: সহজে হজম হয় এবং ফাইবার সমৃদ্ধ, লাল চালের ভাত: সাদা চালের তুলনায় বেশি পুষ্টিকর, সিদ্ধ আলু: প্রাকৃতিক শর্করা এবং ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ, ওটস বা চিড়া: এটি ধীরে ধীরে গ্লুকোজ সরবরাহ করে এবং দীর্ঘক্ষণ শক্তি ধরে রাখে।
ইফতারে যে খাবার এড়িয়ে চলা উচিত
· ভাজাপোড়া খাবার: যেমন—পিয়াজু, বেগুনি, সমুচা, চপ, পুরি ইত্যাদি, কারণ এগুলো অতি তৈলাক্ত এবং হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে।
· অতিরিক্ত মিষ্টি: বেশি মিষ্টি শরবত, রসগোল্লা বা মিষ্টান্ন বেশি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
· কৃত্রিম পানীয় বা কোমল পানীয়: এগুলো ক্ষণস্থায়ী শক্তি দেয়, কিন্তু শরীরের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর।
· অতিরিক্ত মশলাদার খাবার: এটি গ্যাস, অ্যাসিডিটি ও হজমজনিত সমস্যার কারণ হতে পারে।