পিরিয়ড বা ঋতুস্রাবের সময় বেশিরভাগ নারী-ই ব্যথা অনুভব করেন। তবে সবার ব্যথা হওয়ার ধরণ এক নয়। সাধারণত তলপেট আর পেলভিক এরিয়াতে ব্যথায় বেশি কষ্ট হয়। তলপেটের সাথে সাথে এটি পিঠ, উরু, পা এবং শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে অনেক সময় এ ব্যথার তীব্রতা অনেক বেশি বেড়ে যায় এবং এর কারণে খিঁচুনি পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া মুড সুইং বা মেজাজ পরিবর্তনের পরিস্থিতি দেখা যায় এবং কেউ কেউ বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া এবং মাথাব্যথায়ও ভুগতে পারেন।
পিরিয়ডের সময় ব্যথা হয় কেন?
জরায়ুর পেশি সঙ্কোচন-প্রসারণের ফলে এবং হরমোনের হেরফেরে এই ধরনের সমস্যা হতে পারে। অর্থাৎযখন একজন নারীর পিরিয়ড শুরু হয়, তখন জরায়ু সংকুচিত হয় যাতে শরীরের ভেতর থেকে রক্ত বেরিয়ে আসতে পারে। আর তখন জমাটবাধা রক্তের নির্গমনের কারণে মাথা ঘোরার মতো অনুভূতি হয়।
চিকিৎসকেরা বলছেন, এই পুরো প্রক্রিয়াটিই হরমোনের ওঠা-পড়ার উপর নির্ভর করে। ঋতুচক্র শুরুর আগেই পেশির সঙ্কোচন-প্রসারণ শুরু হয়। ফলে শরীরে প্রদাহ বা ইনফ্লেমেশন বৃদ্ধি পায়। সেখান থেকেই এই ধরনের ব্যথা বা অস্বস্তি শুরু হতে পারে।
তবে গবেষকদের মতে, এটা একটা প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া যা দেহকে সেরে উঠতে বা পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করে। ঋতুস্রাবের সময় সব ধরণের ব্যথার জন্য দায়ী হচ্ছে প্রোস্টাগ্ল্যানডিনস যা জরায়ুকে পরিপূর্ণভাবে সেরে উঠতে সহায়তা করে এবং মাসিকের সব তরল যাতে জরায়ু থেকে বের হয়ে যায় তা নিশ্চিত করে।
কিন্তু সমস্যা তখন হয় যখন এই ব্যথা বা প্রদাহ অতিমাত্রায় হয়।
ঋতুস্রাবের ব্যথা কমাতে করণীয়
এই কষ্ট লাঘব করতে সাধারণত গরম সেঁক, ব্যথা কমানোর কিংবা প্রদাহনাশক ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পিরিয়ডের ব্যথায় গরম পানির সেঁক খুব উপকারী। হট ব্যাগের মধ্যে গরম পানি নিয়ে পেটে সেঁক দিতে পারেন।
অনেকেই মনে করেন, এই সময়ে ব্যায়াম করলে পেটে যন্ত্রণা আরও বেড়ে যেতে পারে। ক্লান্তি কিংবা দুর্বলতা বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু চিকিৎসকেরা শরীরচর্চা করার পক্ষেই। পিরিয়ডের ব্যথার কমাতে হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। সহজ-সরল যোগব্যায়াম অথবা হাঁটাচলা করতে পারেন। তবে এ সময় ভারি কোনো কাজ করা উচিত নয়। ব্যায়াম করার ফলে পেশির মোচড় কমতে প্রাকৃতিক ওষুধের কাজ করে।এই সময়ে হরমোনের হেরফেরে মনমেজাজও বিগড়ে থাকে। ব্যায়াম করলে সেই সংক্রান্ত সমস্যাও নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে সকলের শারীরিক অবস্থা এক রকম নয়। তাই ব্যায়াম করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেওয়াই শ্রেয়।
এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন খনিজের অভাব হলে ঋতুস্রাবজনিত কষ্ট বেড়ে যেতে পারে। ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের ঘাটতি হলে ঋতুস্রাবজনিত কষ্ট বেড়ে যেতে পারে। তাই এই সময়ে বেশি করে মাছ, বিভিন্ন ধরনের বীজ কিংবা বাদাম, শাকপাতা ও ফল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।