উড়োজাহাজে বা পাহাড়ের উঁচুতে উঠলে অনেকেরই কানে তালা লেগে যায় বা কান বন্ধ হয়ে যায়। অনেকের কানে ব্যথাও করে। এ কারণে উড়োজাহাজ উঁচুতে ওঠার সময় অনেক শিশু কাঁদে, কিন্তু মুখ ফুটে বিষয়টা বলতে পারে না। এটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া হলেও পুরোপুরি অবহেলা করা ঠিক নয়, ২৪ ঘণ্টা অবধি কানের তালা না খুললে তা দুশ্চিন্তার বিষয়।
তালা লাগার কারণ
আমাদের কানের একটি অংশকে ‘মধ্যকর্ণ’ বলা হয়। এই মধ্যকর্ণে বাতাস থাকে। নাক ও মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার সময় মধ্যকর্ণের ভেতরে থাকা বায়ু নিয়ন্ত্রিত হয়। ইউসটেকিয়ান টিউবের মাধ্যমে বাতাস মধ্যকর্ণে প্রবেশ করে। মধ্যকর্ণের বাতাস ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকে বলেই আমাদের কানে তালা পড়ে না, আমরা ঠিকভাবে শুনতে পাই এবং আমাদের কান স্বাভাবিকভাবে কাজ করে। আমরা যখন সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেকটা উঁচুতে উঠি কিংবা হঠাৎ করে নিচে নামি, তখন এই বাতাসের ভারসাম্যের তারতম্য ঘটে। এর ফলেই সমস্যাটা হয়। কানে তালা লাগা একেকজনের বেলায় একেক রকম।
এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা আট কিংবা দশতলার ওপর গেলেই কানে তালা লেগে যায়। আবার মাটির নিচে গেলেও তা ঘটে। খুব উঁচুতে বা মাটি থেকে খুব নিচে নামলে বায়ুর চাপের পরিবর্তনের ফলে কানে তালা লাগার সঙ্গে সঙ্গে কানে তীব্র যন্ত্রণা হতে পারে। অনেক সময় কান থেকে অল্প পানির সঙ্গে রক্তও বেরোতে পারে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে কানের ভেতরে পানি জমে কানের পর্দা ফুটা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে কানের পর্দার স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। শ্রবণশক্তি কমে যেতে পারে। সাধারণ কয়েকটি নিয়ম মেনে চললেই এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
করণীয়
- চুইংগাম চিবোতে থাকুন বা একটু লজেন্স মুখে রেখে ক্রমাগত চুষতে থাকুন। এর ফলে নাকের টিউবটি খোলে এবং বন্ধ হয়। কান বন্ধভাব দূর করার খুব দ্রুত ও সহজতম উপায় এটি।
- এ ছাড়া মাঝেমধ্যে নাক ও মুখ বন্ধ করে হালকা করে ঢোক গিলতে হবে। তবে খুব জোরে ঢোক গিলতে যাবেন না।
- শিশুদের ক্ষেত্রে নাক, কান ও গলাবিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে নাকের ড্রপ সঙ্গে রাখুন। প্রয়োজনে বিমানে ওঠার আগে ড্রপটি দুই ফোঁটা করে শিশুর প্রতি নাকে দিয়ে দিন।
- বিমানযাত্রা শেষ হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরও যদি সমস্যাটি রয়ে যায়, তবে সেই ক্ষেত্রে দেরি না করে নাক–কান–গলা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।