• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৮ ফাল্গুন ১৪৩০, ২৩ শা'বান ১৪৪৬

সাদা নাকি লাল আটা, কোনটি খাওয়া ভালো


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫, ১২:০৬ পিএম
সাদা নাকি লাল আটা, কোনটি খাওয়া ভালো
ছবি : সংগৃহীত

দৈনন্দিন খাদ্যতালিকার আটা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি রুটি, পরোটা, নানসহ বিভিন্ন খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত দুই ধরনের আটা বেশি ব্যবহৃত হয়—সাদা আটা (পরিশোধিত আটা) ও লাল আটা (গোটা গমের আটা)। অনেকের মনেই প্রশ্ন রয়েছে, কোনটি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?

লাল আটা নাকি সাদা আটা কোনটি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আমাদের দুই ধরনের আটার গঠন, পুষ্টিগুণ, হজমক্ষমতা ও স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব সম্পর্কে জানতে হবে।

লাল আটা কী এবং এটি কীভাবে তৈরি হয়?

লাল আটা গোটা গম পিষে তৈরি করা হয়, যার মধ্যে গমের চোকার স্তর, গ্লুটেন ও ভেতরের অংশ একসঙ্গে থাকে। এতে গমের সকল পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন থাকে, কারণ পরিশোধন বা ব্লিচিংয়ের মাধ্যমে কোনো উপাদান বাদ দেওয়া হয় না। এটি দেখতে সাধারণত হালকা বাদামি বা লালচে রঙের হয় এবং খেতেও একটু ঘন বা মোটা মনে হয়।

সাদা আটা কী এবং এটি কীভাবে তৈরি হয়?

সাদা আটা বা পরিশোধিত আটা তৈরি হয় গমের বাহ্যিক স্তর (চোকার) এবং ভেতরের প্রোটিনযুক্ত অংশ (জার্ম) বাদ দিয়ে। শুধু গমের স্টার্চযুক্ত অংশ থেকে এটি তৈরি করা হয়, যা পরে ব্লিচিং বা প্রসেসিং করা হয়। ফলে এটি দেখতে পরিষ্কার সাদা হয় এবং খেতে নরম ও হালকা মনে হয়। তবে এই পরিশোধনের ফলে গমের অনেক পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়, বিশেষ করে ফাইবার, ভিটামিন ও মিনারেল কমে যায়।

লাল ও সাদা আটার পুষ্টিগুণের তুলনা

লাল আটায় প্রচুর পরিমাণে আঁশ (ফাইবার) থাকে, যা হজমে সাহায্য করে এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে। এতে থাকা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের জন্য উপকারী। অন্যদিকে সাদা আটা পরিশোধনের ফলে বেশিরভাগ ফাইবার ও গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান হারিয়ে ফেলে। ফলে এটি দ্রুত হজম হয় এবং শরীরে সহজেই শর্করা যোগ করে, যা ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।

লাল আটার স্বাস্থ্য উপকারিতা

প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি লাল আটা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
লাল আটার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) কম, যার মানে এটি ধীরগতিতে হজম হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয় না। ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি বেশ ভালো একটি বিকল্প। অন্যদিকে, সাদা আটা দ্রুত হজম হয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি করতে পারে এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

লাল আটার উচ্চ আঁশযুক্ত বৈশিষ্ট্য হজমতন্ত্রের জন্য উপকারী। এতে থাকা ফাইবার অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত লাল আটা খেলে পেটের সমস্যা কম হয় এবং হজমতন্ত্র সুস্থ থাকে।
লাল আটার ফাইবার দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে, যা ক্ষুধা কমায় এবং ওজন কমাতে সহায়ক হয়। ওজন কমানোর জন্য যারা সুষম খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করছেন, তাদের জন্য লাল আটা একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।
লাল আটা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এটি খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়িয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষগুলোর ক্ষতি প্রতিরোধ করে এবং ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে, ফাইটোকেমিক্যাল ও পলিফেনল জাতীয় উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

সাদা আটার ক্ষতিকর দিক

সাদা আটার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এটি পরিশোধিত হওয়ার কারণে পুষ্টিগুণ হারিয়ে ফেলে। এতে থাকা ফাইবার কমে যাওয়ায় এটি দ্রুত হজম হয় এবং শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
সাদা আটা ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হতে পারে। এটি দ্রুত হজম হয়ে যায়, ফলে ক্ষুধা দ্রুত ফিরে আসে এবং বেশি খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়।

সাদা আটা নিয়মিত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে ফাইবারের অভাব থাকায় অন্ত্রের ক্রিয়াকলাপ বাধাগ্রস্ত হতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে এটি হজমতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যার কারণ হতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, সাদা আটা বেশি খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। এটি খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) বাড়িয়ে দেয়, যা ধমনীর রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে এবং উচ্চ রক্তচাপ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।
সাদা আটা খেলে শরীরে ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব হতে পারে, কারণ পরিশোধনের সময় গমের প্রাকৃতিক ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান নষ্ট হয়ে যায়।
তাহলে স্বাস্থ্যকর কোনটি?

লাল আটা স্বাস্থ্যের জন্য তুলনামূলকভাবে বেশি উপকারী। কারণ এতে উচ্চ পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। অন্যদিকে, সাদা আটা পরিশোধিত হওয়ার ফলে বেশিরভাগ পুষ্টি উপাদান হারিয়ে ফেলে এবং এটি দ্রুত হজম হয়ে রক্তে শর্করা বাড়িয়ে দেয়, যা ডায়াবেটিস ও স্থূলতার কারণ হতে পারে। তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হলে লাল আটা বেছে নেওয়াই ভালো।

লাল আটা খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা

যদিও লাল আটা তুলনামূলকভাবে বেশি স্বাস্থ্যকর, তবে কিছু বিষয় মাথায় রাখা দরকার।

যাদের গ্লুটেন সংবেদনশীলতা বা সেলিয়াক ডিজিজ রয়েছে, তাদের লাল আটার পরিবর্তে গ্লুটেন-মুক্ত কোনো বিকল্প বেছে নেওয়া উচিত।
লাল আটা বেশি আঁশযুক্ত হওয়ায় কিছু মানুষের জন্য হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। যারা হঠাৎ করেই বেশি ফাইবারযুক্ত খাবার গ্রহণ শুরু করেন, তাদের জন্য প্রথম দিকে গ্যাস বা পেট ফাঁপার সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ধীরে ধীরে অভ্যাস গড়ে তোলা ভালো।

কিডনি রোগীদের সাধারণত লাল আটার খাবার কম দিতে বলা হয়। লাল আটার তুষের অংশে উচ্চ পরিমাণে ফসফরাস এবং পটাসিয়াম থাকে, যা কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সমস্যাযুক্ত হতে পারে। কারণ তাদের কিডনিগুলি এই খনিজগুলিকে কার্যকরভাবে পরিশোধণ করতে করতে পারে না।
বাজারে অনেক ধরনের লাল আটা পাওয়া যায়, কিন্তু সেগুলোর মধ্যে কিছুতে কৃত্রিম উপাদান বা সংরক্ষণকারী মেশানো থাকতে পারে। তাই নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ডের বা ঘরে পিষে আটা খাওয়াই ভালো।
সাদা আটা কখন উপকারী হতে পারে?

সাদা আটা সাধারণত পুষ্টির দিক থেকে দুর্বল হলেও কিছু ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
যাদের দ্রুত শক্তি প্রয়োজন (যেমন অ্যাথলেট বা শিশু), তারা মাঝে মাঝে সাদা আটা খেতে পারেন, কারণ এটি দ্রুত হজম হয়ে শরীরে শক্তি সরবরাহ করে।
কিছু নির্দিষ্ট খাবারের জন্য সাদা আটার প্রয়োজন হয়, যেমন পেস্ট্রি, কেক, বিস্কুট ও নরম রুটি। তবে এগুলো স্বাস্থ্যকরভাবে তৈরি করলে ভালো হয়।
যদি কেউ দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকেন বা খুব দুর্বল অনুভব করেন, তাহলে সহজপাচ্য হওয়ার কারণে সাদা আটা সাময়িকভাবে খাওয়া যেতে পারে। তবে এটি দীর্ঘমেয়াদে গ্রহণ করা উচিত নয়।
 

Link copied!