অ্যালঝাইমার্স এক ধরনের ডিমেনশিয়া। এটি একটি জটিল অসুখ। ব্যক্তির মস্তিষ্কে বিশেষ ধরনের প্রোটিন জমলে এই রোগ হতে পারে। আবার এই রোগে মস্তিষ্কের কিছু অংশ সংকুচিত হয়ে যায়। যার কারণে ব্যক্তি স্মৃতিশক্তি ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকে। চিন্তা করার ক্ষমতা হারিয়ে যায়। আচরণগত পরিবর্তন আসে। তাই এই রোগের প্রতিরোধে আগেই সাবধান হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া এই রোগের প্রথম লক্ষণ। শর্ট-টার্ম মেমোরি বা স্বল্পমেয়াদে স্মৃতি-বিভ্রাট ঘটায়। ১০ মিনিট আগের ঘটনাও লোকে ভুলে যায় কিংবা কিছুক্ষণ আগের কথা-বার্তাও ভুলে যায়। অ্যালঝাইমার্স রোগী প্রথমে ছোট ছোট জিনিস ভুলতে শুরু করে। চেনা সবকিছু অচেনা মনে হয়। তার চালচলনে পরিবর্তন আসে। সে চিন্তাশক্তি হারাতে থাকে। প্রতিদিনের কাজকর্ম ঠিকমতো করতে পারেন না। বিশেষ করে ষাটোর্ধ্বদের মধ্যেই এই রোগের উপসর্গ দেখা যায়। তবে বর্তমান সময়ে মাঝবয়সীদের মধ্যেও এই রোগ দেখা যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, বয়স যখন মাঝামাঝি পর্যায়ে এসে পৌছায় তখন থেকেই অ্যালঝাইমার্সের উপসর্গগুলো দেখা দিতে থাকে। এই উপসর্গ চেনা সহজ নয়। কারণ এগুলো তেমন কঠিনভাবে ধরা দেয় না। তাই অধিকাংশ মানুষই তা এড়িয়ে যান। তবে পরবর্তী পর্যায়ে এটি আরও ভয়াবহ হতে পারে। বিশেষ করে পরিবারে কারো যদি এই রোগের ইতিহাস থাকে তবে বয়স ৪০ পেরুলেই সাবধান হতে হবে।
ছোটখাট বিষয় ভুলে যাওয়া, মোবাইল বা চাবি কোথায় রাখলেন ভুলে যাওয়া, কারো কথা মনে না রাখা, কিছু শিখে তা পরক্ষণেই ভুলে যাওয়া অ্যালঝাইমার্স রোগের লক্ষণ হতে পারে। তাই এসব ছোট ছোট বিষয় দেখা দিলেই বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। কয়েকটি পরীক্ষা করে এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। সেই অনুযায়ী ওষুধও দেওয়া হবে। যা নিয়মিত খেয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাও নিশ্চিত করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা জানান, এই রোগ কোনোভাবেই আটকানো যায় না। তবে মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখলে এই রোগ থেকে কিছুটা প্রতিকার পাওয়া যাবে। এজন্য সুদোকু, পাজল, দাবা, ক্রসওয়ার্ডের মতো খেলাগুলো উপকারে আসতে পারে। এসব খেলা প্রতিদিন খেললে মস্তিষ্কের ব্যায়ামও হয়।
যারা মোবাইল ফোনে বেশি সময় কাটান তারাও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, যারা মোবাইল ফোনে অনবরত ভিডিও, কিংবা অন্য কোনো বিষয় নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন, তারা অন্য বিষয়ের প্রতি মনোযোগ হারিয়ে ফেলছেন। যার কারণে অন্য বিষয়গুলো মনে রাখা কঠিন হয়ে যায় এবং পরবর্তী সময়ে তা ভুলেও যায়। তাই মোবাইল ফোনে সময় না কাটিয়ে মস্তিষ্কের ব্যায়ামে বিভিন্ন ধরণের খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকা শ্রেয়। এতে রোগী দ্রুত খারাপ দিকে যায় না।
এছাড়াও প্রতিদিন ছবি আঁকতে পারেন, লেখালেখি করতে পারেন, গান, নাচ, আবৃত্তি কিংবা সৃষ্টিশীল কাজে জড়িয়ে থাকলেও অনেক উপকার পাবেন। নতুন কিছু শেখা নিয়েও ব্যস্ত থাকা ভালো উপায়। নতুন ভাষা বা বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিখতে পারেন। এতে মস্তিষ্কের পুষ্টি হয়। ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।