দেশের বেশ কয়েকটি জেলা বন্যাকবলিত। বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোতে পোকমাকড় থেকে শুরু করে পানিতে পড়ে যাওয়া সহ নানান কারণে আঘাত পেয়ে আহত হওয়ার ঘটনা বেড়ে যায়। তাই এসময় এসব বন্যাকবলিত অঞ্চলে ফার্স্ট এইড বক্স রাখা প্রয়োজন।
ফার্স্ট এইড বক্স হলো একটি বহনযোগ্য বক্স। এই বক্সে থাকা জিনিসপত্র নিয়ে প্রাথমিকভাবে ছোটখাটো দুর্ঘটনায় কেউ অসুস্থ হলে তাকে জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যায়। ফার্স্ট এইড বা প্রাথমিক চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হলো তাৎক্ষণিক ত্বরিত ব্যবস্থায় অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতিকে কমিয়ে আনা। এ জন্য ফার্স্ট এইড বক্সের কিছু উপকরণের পাশাপাশি প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণও প্রয়োজন। চলুন দেখে নেওয়া যাক প্রাথমিক চিকিৎসার বক্সে যা যা রাখবেন-
ফার্স্ট এইড বক্সে যা থাকে
পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে ফার্স্ট এইড বক্স একটু ভিন্ন হতে পারে, তবে অতিপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সব কটিতে প্রায় একই থাকে।
জীবাণুমুক্ত গজ পিস
খুবই দরকারি একটি উপকরণ গজ পিস। ক্ষত হতে রক্ত পড়া বন্ধ করে ও জীবাণুসংক্রমণ কমায় এটি। এটি ক্ষতস্থানকে নিরাপদে রাখে, ময়লা হতে দেয় না এবং ক্ষত থেকে নিঃসৃত তরল পদার্থ শুষে নেয়।
গজ ব্যান্ডেজ
খুবই দরকারি একটি উপকরণ। রোল আকারে পাওয়া যায়। যেকোনো মেডিসিনের দোকানেই পাওয়া যায়।
তুলা বা কটন
তুলা ছোট ও বড় প্যাকেট—দুভাবেই পাওয়া যায়। নিরাপত্তার জন্য প্যাকেট তুলাই ভালো।
কাঁচি
ক্ষতের পাশে প্রয়োজনে পরনের কাপড় কাটা, গজ, ব্যান্ডেজ, মাথার চুল ইত্যাদি কাটার জন্য কাঁচি দরকার।
ক্রেপ ব্যান্ডেজ
হাড় ফেটে গেলে বা কোথাও মচকে গেলে ক্রেপ ব্যান্ডেজ ব্যবহারে ব্যথা কমে, ফোলাও ক্রমে কমে আসে।
সার্জিক্যাল ব্যান্ডেজ
এসব দিয়ে সহজেই ক্ষতের ওপরে ব্যান্ডেজ আটকে রাখা যায়। তবে খুব ভালো ব্যান্ডেজ হিসেবে ব্যবহৃত হয় না।
অ্যান্টিসেপটিক লোশন বা ক্রিম
ক্ষত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে দরকার হয়। যেমন-স্যাভলন, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, পভিসেভ ইত্যাদি।
টুইজারস (TWEEZERS)
শরীর থেকে কাঁটা, কোনও ক্ষুদ্র বস্তু বা স্প্লিন্টার (SPLINTER), পোকামাকড়ের শূল ইত্যাদি সরাতে বেশ ফলদায়ক। এটি ধাতু বা প্লাস্টিকের তৈরি ও বিভিন্ন ধরনের হতে পারে।
চিমটা (ফরসেপ)
অনেক সময় ক্ষতে ক্ষুদ্র আঠালো ময়লা থাকে, যেগুলোকে তুলা দিয়ে মুছে ফেলা যায় না, আবার পানি দিয়েও পরিষ্কার হয় না। এ ক্ষেত্রে চিমটা কাজে আসতে পারে।
সার্জিক্যাল গ্লাভস
পানি বা সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেওয়ার কোনো দরকার নেই; যদি থাকে ডিসপোজেবল গ্লাভস। ক্ষত ময়লা হাত দিয়ে পরিষ্কার করার চেয়ে এটা পরে করা নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত।
জীবাণুনাশক বা অ্যান্টিসেপটিক
স্যাভলন বা ডেটল, হেক্সিসল—এমন নানা রকম অ্যান্টিসেপটিক বক্সে রাখতে পারেন। কিছু অ্যান্টিসেপটিক ক্রিমও পাওয়া যায়, যা অনেক উপকারী।
ওষুধ
গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, কিছু ব্যথানাশক ওষুধ, পেট খারাপের ওষুধ, মাথা ঘোরা, মাথাব্যথার ওষুধ, খাওয়ার স্যালাইন, বমি, জ্বরের ওষুধ, এন্টিহিস্টামিন ইত্যাদি বক্সে থাকলে বিশেষ মুহূর্তে খুবই কাজে লাগে। বার্ন ক্রিম, ব্যথানাশক মলম, অ্যালার্জির ওষুধও রাখা যায়।
পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট
এটিও বক্সে রাখা যেতে পারে। কারণ এসময় ডায়রিয়ার প্রবণতা বাড়ে। তাই পানি বিশুদ্ধ করা প্রয়োজন।
থার্মোমিটার
শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করার জন্য এর বিকল্প নেই। খুব সহজেই এটি দিয়ে জ্বর মাপা যায়। ফার্স্ট এইড বক্সের অন্যতম উপাদান এটি।
পালস অক্সিমিটার
বর্তমানে এটি একটি জরুরি উপকরণ হয়ে পড়েছে। এই সময় জ্বর, সর্দি, কাশি বেড়ে যায়। আবার শ্বাসকষ্টও হয়। তাই ফ্রাস্ট এইড বক্সে অক্সিমিটার রাখা প্রয়োজন। এটি দিয়ে সহজেই রক্তের অক্সিজেনের মাত্রা ও হৃৎস্পন্দনের মাত্রা জানা যায়।
রক্তচাপ মাপার যন্ত্র
বিশেষ মুহূর্তে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। একটু শিখে নিলে এটি দিয়ে সহজেই রক্তচাপ মাপা যায়। এখন ডিজিটাল যন্ত্র পাওয়া যায়, যা দিয়ে সহজেই রক্তচাপ মাপা যায়।
গ্লুকোমিটার
বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেশি। এমতাবস্তায় রক্তে শর্করার পরিমাণ কম- বেশি হয়। তাই প্রাথমিক চিকিৎসার বক্সে গ্লুকোমিটা রাখা উচিত।