সন্তান ৯ মাস গর্ভকালে থাকে। এই ৯ মাসই একজন গর্ভবতী নারীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত এই সময়কে চিকিৎসকেরা তিনটি ভাগে ভাগ করেন। প্রথম তিন মাস গর্ভবতীর যত্নআত্তি ভীষণ জরুরি হয়। অনেক গর্ভবতী মায়ের সাধারণ প্রশ্ন থাকে, প্রথম তিন মাস কী খাবার খেলে অনাগত সন্তান ও তিনি সুস্থ থাকবেন।
এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজধানীর ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের পুষ্টিবিদ তাসনিম আশিক। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নাইস নূর।
সংবাদ প্রকাশ : গর্ভকালে প্রথম তিন মাসকে কেন বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় বলে আপনি মনে করেন?
তাসনিম আশিক : গর্ভকালের প্রথম তিন মাসে শরীরে অনেক বদল ঘটে। ভিন্ন ভিন্ন নারীর আলাদা অভিজ্ঞতা হয়। অনেকের খাবারের স্বাদ বদলে যায়। আবার অনেকে স্বাভাবিক খাবার খেতে পারেন। গর্ভকালের সময় অন্যান্য সময়ের থেকে একদম আলাদা। খাবারে অরুচি হলেও নিজের ও অনাগত সন্তানের পুষ্টিগুণের কথা ভেবে খাবার গ্রহণ করতে হবে। প্রথম তিন মাসে ফলিক এসিড, জিংক, আয়রনের ঘাটতি কোনোভাবে করা যাবে না। এ জন্য প্রথম তিন মাস অনাগত সন্তানের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
সংবাদ প্রকাশ : কী কী খাবারে গুরুত্ব দিতে হবে?
তাসনিম আশিক : প্রথম তিন মাসে ক্যালোরি সাধারণত বাড়ে না। চার মাস পর থেকে ক্যালোরি চাহিদা বেড়ে থাকে। যারা একেবারে খেতে পারবেন না তারা এক ঘণ্টা পর পর অথবা দুই ঘণ্টা পর পর খেতে পারেন। সবুজ রংয়ের সবজি, ডিম, দুধ, চর্বিহীন গরুর মাংস এবং বিচি জাতীয় খাবার নিয়মিত খেতে হবে। যাদের একদম খেতে অনীহা তারা শুকন চিড়া, খই, টোস্ট খেতে পারেন। এছাড়া খেজুর, কলা, বাদাম, হালুয়া খেতে পারবেন। যাদের দুধ সরাসরি খেতে অনীহা তারা দুধের তৈরি পুডিং, সুজি, পায়েস খেতে পারেন। ফলের মধ্যে পেয়ারা, আমলকি, জাম্বুরা, ভুট্টার পুষ্টি উপাদান অনেক। এসব খাওয়া যেতে পারে।
সংবাদ প্রকাশ : তিন মাসের ডায়েট চার্ট কী রকম হবে? সকালে কী খাবার খেলে গর্ভবতী মায়ের জন্য ভালো?
তাসনিম আশিক : রুটি দিয়ে ডিম কিংবা সবজি। এছাড়া রঙিন সবজি দিয়ে খিচুড়িও খেতে পারবেন। সকালে খেজুর, কিসমিস খাওয়া ভালো হবে। এ ছাড়া নাস্তা খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর আপেল, নাশপতি, মিক্সড বাদাম, চিনা বাদাম কিংবা মিষ্টি কুমড়ার বীজ খাওয়া যেতে পারে। মিষ্টি দই এবং টক দই নিতে পারবেন। যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা মিষ্টি দই এড়িয়ে যাবেন।
সংবাদ প্রকাশ : দুপুরের খাবারের মেন্যু কী হবে?
তাসনিম আশিক : খাবারের গন্ধ নিতে না পারলে ভাতের সঙ্গে খেতে পারেন। মুরগীর মাংস, মাছের কাবাব, চিকেনের কাবাব, সবজি, ঘন ডাল, শাক-সবজি পরিমাণ মতো খেতে হবে।
সংবাদ প্রকাশ : বিকালের নাস্তায় কী খেলে ভালো হবে?
তাসনিম আশিক : নাড়ু অথবা বিস্কিট খাওয়া যেতে পারে। চিকেন স্যুপ, থাই স্যুপ ঘরে বানিয়ে খেলে ভালো। স্যুপে চিংড়ি মাছ খাওয়া যেতে পারে। হোম মেড ফুডকে গুরুত্ব দিলে ভালো হবে।
সংবাদ প্রকাশ : রাতের মেন্যু?
তাসনিম আশিক : দুপুরের মতোই হতে পারে। সেটা খাওয়া সম্ভব না হলে ওটস কিংবা কম তেলে রান্না করে ফ্রাইড রাইস খেতে পারবে। নডুলস খাওয়া যেতে পারে। ভাতের মাড়ের স্যুপে অনেক ক্যালোরি থাকে সেটা খাওয়া যেতে পারে। ভাতের সঙ্গে ডালের বড়া। এ ছাড়া ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিস্কুট, মিষ্টি দই, টক দুই কিংবা দুধ খাওয়া যেতে পারে।
মোটকথা সপ্তাহের সাত দিনেই মুখরোচক খাবার গ্রহণ করতে হবে। যার যেটা খেতে ইচ্ছে করবে সেটাই নিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে প্রতিদিনের খাবারে ছয়টি পুষ্টি উপাদান যেন ঠিক থাকে। সাপলিমেন্টরি হিসেবে আয়রন, ফলিক এসিড, জিংক কোনোভাবেই মিস করা যাবে না।