গুটি বসন্ত বা চিকেনপক্সএক ধরনের সংক্রামক ভাইরাসজনিত রোগ। যা ভ্যারিসেলা-জোস্টার ভাইরাসের কারণে হয়। এটি সাধারণত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে প্রাপ্তবয়স্করাও আক্রান্ত হতে পারেন। গুটি বসন্তে শরীরে ছোট ছোট লাল দাগ বা ফুসকুড়ি ওঠে। যা ফেটে পানি বের হয় এবং কিছুদিনের মধ্যে শুকিয়ে যায়।
এই রোগ সাধারণত নিজে থেকেই সেরে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসা ও যত্নের প্রয়োজন হয়। গুটি বসন্ত হলে জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা ও চুলকানির মতো উপসর্গ দেখা যায়। হালকা থেকে মাঝারি জ্বর থাকে। মাথাব্যথা ও শরীর ব্যথা হয়। ক্ষুধামন্দা হয়।১-২ দিনের মধ্যে ত্বকে লাল ফুসকুড়ি দেখা দেয়। ফুসকুড়িতে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া হয়। ফুসকুড়ির মধ্যে তরল পদার্থ জমা হয়। পরবর্তী সময়ে শুকিয়ে খোসা পড়ে যায়। এটি সাধারণত ১০-১৫ দিনের মধ্যে সেরে যায়। ফুসকুড়ি শুকিয়ে খোসা পড়ে গেলে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে না। তবে সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রামে থাকা উচিত।
গুটি বসন্ত হলে কী করবেন
গুটি বসন্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তবে ঘরে যত্ন ও কিছু সহজ উপায়ে রোগীকে যত্ন করা যায়।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম
গুটি বসন্ত হলে শরীল দুর্বল হয়ে যায়। তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কর্মব্যস্ততা কমিয়ে বিশ্রাম নিলে শরীর দ্রুত সেরে ওঠে।
প্রচুর পানি ও তরল খাবার
এই সময় শরীরের পানি শূন্যতা রোধ করতে বেশি করে পানি পান করুন। এছাড়া ফলের রস, স্যুপ, ডাবের পানি ইত্যাদি তরল খাবার উপকারী। এতে শরীর আর্দ্র থাকবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
চুলকানি কমানোর উপায়
গুটি বসন্তের অন্যতম বিরক্তিকর উপসর্গ হলো চুলকানি। চুলকানি কমাতে কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারেন। কোল্ড কমপ্রেস বা ঠান্ডা কাপড় দিয়ে আক্রান্ত স্থানে চেপে ধরুন। কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন। এতে ফুসকুড়ির চুলকানি ও জ্বালাপোড়া কমে। তবুও যদি না কমে, ডাক্তারের পরামর্শে এন্টি-হিস্টামিন বা চুলকানি কমানোর ক্রিম ব্যবহার করুন। খেয়াল রাখবেন, কোনোভাবেই নখ দিয়ে ফুসকুড়ি খোঁচানো যাবে না। এতে সংক্রমণ বেড়ে যাবে। চামড়ায় দাগ পড়বে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
প্রতিদিন গোসল করুন। এতে ত্বক পরিষ্কার থাকবে এবং সংক্রমণ কমবে। পোশাক ও বিছানার চাদর প্রতিদিন পরিবর্তন করুন। নখ ছোট করে কাটুন, যাতে খোঁচালে চামড়া ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
পুষ্টিকর খাবার খান
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরি। ফল, শাকসবজি ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান। মসলাযুক্ত, ভাজা ও অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার এড়িয়ে চলুন।
ওষুধ সেবন
জ্বর বা ব্যথা কমানোর জন্য ডাক্তারের পরামর্শে প্যারাসিটামল সেবন করতে পারেন। শিশুদের ক্ষেত্রে এসপিরিন এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি রে`স সিনড্রোমের ঝুঁকি বাড়ায়। ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য গুরুতর ক্ষেত্রে চিকিৎসক অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দিতে পারেন।
গুটি বসন্ত হলে কী করবেন না
· ফুসকুড়ি খোঁচাবেন না। এতে ইনফেকশন হয়ে দাগ স্থায়ী হতে পারে।
· অন্যদের কাছাকাছি অবস্থান করবেন না। রোগটি সংক্রামক। তাই ৭-১০ দিন আলাদা থাকুন।
· অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা খাবেন না। এতে জ্বর বা শারীরিক অস্বস্তি বাড়তে পারে।
· দুধ বা দুধজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন
গুটি বসন্তের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘরে চিকিৎসায় সেরে যায়। তবে কিছু লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ৫ দিনের বেশি সময় ধরে উচ্চ জ্বর থাকলে, ফুসকুড়ি থেকে অতিরিক্ত পুঁজ বা রক্ত বের হলে, শ্বাসকষ্ট বা বুকে ব্যথা হলে, তীব্র মাথাব্যথা বা অসামান্য ক্লান্তি অনুভব করলে কিংবা চোখে ফুসকুড়ি দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তার দেখাতে হবে।