দিন দিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। মশাবাহিত এই রোগে মৃত্যু হারও বাড়ছে। বিশ্বের কয়েকটি দেশেই ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ। এরমধ্যে বাংলাদেশও অন্যতম। বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কেউ সুস্থ হচ্ছেন। কেউ আবার এই রোগের কাছে হার মেনে মৃত্যু কোলে ঢোলে পড়ছেন। যারা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন তাদেরও কিছু জটিলতা পিছু ছাড়ছে না। বলা যায়, ডেঙ্গু পরবর্তী জটিলতায় মানুষকে আরও ভুগতে হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর শরীরে বিভিন্ন অঙ্গের স্বাভাবিক কাজকে ব্যাহত করে। যা অন্যান্য অঙ্গের কার্যক্ষমতাকে নষ্ট করে। ডেঙ্গু রোগীরা সেরে উঠলেও কিছু জটিলতা থেকে যায়। যেমন, দীর্ঘদিন দূর্বলতা থাকা, ক্লান্তি, অবসাদ, মাথাব্যথা, শরীরের বিভিন্ন গিড়ায় ব্যথা, মনোযোগহীনতা, খাবারে অরুচি, মাথা ঘোরানো, নিদ্রাহীনতা, কিংবা অতিনিদ্রার মতো সমস্যা দেখা যায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এটি ‘ডেঙ্গু-পরবর্তী অবসাদগ্রস্ততা’ হিসেবে চিহ্নিত।
এছাড়া ডেঙ্গু পরবর্তী সময়ে ক্ষুধামন্দা ও পুষ্টির ঘাটতি থাকে। তাই চুল পড়া, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা যায়। অনেকের ওজনও কমে যেতে পারে। আবার ডেঙ্গু রোগের আক্রান্ত অবস্থায় ফুসফুসে পানি জমা, পেটে পানি জমা, পিত্তথলি ও মস্তিষ্কে প্রদাহের ঘটনা ঘটতে পারে। যার কারণে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, খিঁচুনি, পক্ষাঘাতগ্রস্থতা, নিউমোনিয়া, সুপার ইনফেকশনের মতো জটিলতা হতে পারে।
চিকিৎসকরা জানান, ‘ডেঙ্গু-পরবর্তী অবসাদগ্রস্ততা’পেছনে ডেঙ্গু রোগই দায়ী এছাড়া আর কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যত ভালো হবে, এসব লক্ষণও কম থাকবে। তবে বয়স, পরিবেশ, পারিবারিক ইতিহাস, মানসিক চাপও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। নারী, শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে এসব লক্ষণ বেশি। পুরুষেরা এক্ষেত্রে দ্রুত সেরে উঠতে পারে।
ডেঙ্গু-পরবর্তী অবসাদগ্রস্ততা কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তাই নিয়মিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে ডেঙ্গু পরবর্তী অবসাদগ্রস্থতার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মেনে চলা যেতে পারে। সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, তরল ও তরলজাতীয় খাবার পান, আমিষ জাতীয় খাবার গ্রহণ, আঁশযুক্ত, ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ, ফল ও ফলের রস খাওয়া, ফাস্টফুড, ভাজা-পোড়া খাবার, অতিরিক্ত চর্বি ও মসলাদার খাবার পরিহার করতে হবে।
এছাড়াও চিকিৎসকের পরামর্শে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, ভিটামিন-ডি সাপ্লিমেন্ট খেতে হবে। অন্তত ৩ সপ্তাহ বিশ্রামে থাকতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। গিড়ার ব্যথার জন্য ফিজিওথেরাপি নেওয়া যেতে পারে।