জ্বর হলে অনেকেরই হতে দেখা যায় জ্বরঠোসা। জ্বরের পর বা শরীরের ভেতরে জ্বর থাকলে সাধারণত এটি হয়ে থাকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে একে বলা হয় কোল্ড সোর বা ফিভার ব্লিস্টার। এটি হলে ব্যথা ও যন্ত্রণার কারণে কথা বলা বা খেতে কষ্ট হয়। কখনো কখনো বমি ভাব কিংবা বমি হওয়া; সঙ্গে থাকতে পারে মাথাব্যথা।
কেন জ্বরঠোসা হয়?
জ্বরঠোসা মূলত হারপিস সিপ্লেক্স (এইচএসভি১) ভাইরাসের সংক্রমণে হয়ে থাকে। প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষই এইচএসভি-১ এ আক্রান্ত হন। যা সুপ্ত অবস্থায় থাকে। প্রথমবার হওয়া ফিভার ব্লিস্টার সেরে যাওয়ার পর এইচএসভি-১ স্নায়ুকোষে লুকিয়ে থাকে। কোনও কারণে শরীর দুর্বল হয়ে গেলে বা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেলে পুনরায় এ ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়। শারীরিক অসুস্থতা, অত্যধিক মানসিক বা শারীরিক স্ট্রেস, ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতি (ভিটামিন বি, আয়রন, ফলিক অ্যাসিড) থেকেও দেখা দিতে পারে জ্বরঠোসা।
এমনিতে কয়েক দিনের মধ্যে নিজে থেকে কমে যায় এই ঘা। কিন্তু মাঝের কয়টা দিনের বিড়ম্বনা থেকে দ্রুত নিষ্কৃতি পেতে কিছু ঘরোয়া কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে।
- আক্রান্ত স্থানে কোল্ড কম্প্রেসন ও বরফ লাগালে ফোলা কমে যেতে পারে।
- এই ঘা কমানোর অনেক রকমের ওষুধ পাওয়া যায়। জীবাণুনাশক এই সব ক্রিম কয়েক দিনের মধ্যেই কমিয়ে দেয় ঠোঁটের ঘা। তবে ডাক্তারের পরামর্শ পরামর্শ অনুযায়ী আক্রান্ত স্থানে জীবনুনাশক ক্রিম লাগাতে হবে।
- জ্বরঠোসা হওয়ার জন্য দায়ী হচ্ছে— এইচএসভি-১ এবং হার্পস ভাইরাস এইচএসভি-২। আর এ দুই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো ক্ষমতা রয়েছে পুদিনার তেলে। এটি ব্যবহারেও দ্রুত সারবে জ্বরঠোসা।
- লবণ ও কুসুমগরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেললে প্রদাহ কমে যায়। ঘায়ের চারপাশ পরিষ্কার করতেও এটা সাহায্য করে।
- অল্প পরিমাণ অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে নিতে পারেন ক্ষতের ওপর। দ্রুত কমে আসবে ক্ষত, কমবে জ্বালাও।
- জ্বরঠোসার ঘা শুকাতে ও এর চুলকানি থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহার করতে পারেন বেকিং সোডা। বেকিং সোডা ও পানি দিয়ে পেস্ট তৈরি করে সরাসরি মুখের ঘাগুলোতে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
- অ্যাপ্ল সিডার ভিনিগার নরম কাপড়ে ভিজিয়ে ঘায়ে লাগালে অল্প সময়েই প্রদাহ অনেকখানি কমে যাবে।
- মধুতে প্রাকৃতিক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টিইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। দিনে কয়েকবার মুখের ঘাগুলোতে অল্প পরিমাণে প্রয়োগ নিরাময়ে সাহায্য করে।
- জ্বরঠোসা সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে সূর্যের আলোর ক্ষতিকর রশ্মি। তাই সূর্যের আলো থেকে ত্বককে রক্ষা করতে ব্যবহার করতে পারেন সানস্ক্রিন। রোদে বের হলে সানস্ক্রিন, বিশেষ করে ঠোঁটে সানব্লক লিপ বাম ব্যবহার করতে হবে।
- এছাড়া এসময় অতিরিক্ত মসলাযুক্ত, ঝাল, অ্যাসিডিটি আছে, এমন খাবার (যেমন জাম্বুরা, টমেটো, কমলা, মাল্টা) কয়েক দিনের জন্য পরিহার করতে হবে। ব্যথার কারণে অনেকে পানি খাওয়া কমিয়ে দেন, এটা করা যাবে না। পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে।
আর জ্বরঠোসা যেহেতু ছোঁয়াচে, তাই সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত পানির গ্লাস, চামচ, রেজার, লিপজেল, কসমেটিক সামগ্রী, তোয়ালে, টিস্যু শেয়ার করা যাবে না। এমনকি ঠোসা স্পর্শ করলে সঙ্গে সঙ্গে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।
তবে মনে রাখবেন জ্বরঠোসা এমনি এমনি সেরে গেলেও অনেক সময় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া। যেমন, যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, যেমন গর্ভবতী নারী, ক্যানসার আক্রান্ত রোগী, ডায়াবেটিসের রোগী, কেমোথেরাপি গ্রহণকারী অথবা শিশুদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।