• ঢাকা
  • বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩০, ২৮ শা'বান ১৪৪৬

প্রস্রাবে ইনফেকশন কী, নারীদের মধ্যে প্রবণতা কেন বেশি, প্রতিরোধের উপায়


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৫, ০৩:১৪ পিএম
প্রস্রাবে ইনফেকশন কী, নারীদের মধ্যে প্রবণতা কেন বেশি, প্রতিরোধের উপায়
ছবি : সংগৃহীত

অনেকের ক্ষেত্রে প্রস্রাবের সংক্রমণের (ইউরিনে ইনফেকশন) সমস্যা দেখা দিতে পারে। ইউরিনে ইনফেকশন হলো প্রধানত ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। ফলে যখন মূত্রনালির নিম্নাংশ আক্রান্ত হয়, তখন তাকে মূত্রথলির সংক্রমণ বলে। আর যখন এর ফলে মূত্রনালির ঊর্ধ্বাংশ আক্রান্ত হয়, তখন তাকে কিডনির সংক্রমণ বলা হয়।

সাধারণত পায়খানায় থাকা বিভিন্ন জীবাণু মূত্রতন্ত্রে প্রবেশ করে ইউরিন ইনফেকশন ঘটায়। প্রস্রাবের রাস্তা বা মূত্রনালি দিয়ে এসব জীবাণু মূত্রতন্ত্রে প্রবেশ করে। নারী-পুরুষভেদে সবারই প্রস্রাবের ইনফেকশন হতে পারে। তবে নারীদের মধ্যে এই রোগের সংক্রমণের প্রবণতা বেশি। এর কারণ হলো, নারীদের মূত্রনালি পুরুষদের মূত্রনালির তুলনায় দৈর্ঘ্যে অনেক ছোট। এ ছাড়া নারীদের মূত্রনালি পায়ুপথের খুব কাছাকাছি অবস্থিত। ফলে ব্যাকটেরিয়া পায়ুপথ থেকে মূত্রনালিতে প্রবেশ করে প্রস্রাবের সংক্ৰমণ ঘটানোর আশঙ্কা বেড়ে যায়।

শরীরের বর্জ্য পদার্থ কিডনির মাধ্যমে ছেঁকে মূত্রনালি দিয়ে মূত্র হিসেবে বের হয়ে যায়। মানুষের শরীরের দুটি কিডনি, দুটি ইউরেটার, একটি ইউরিনারি ব্লাডার (মূত্রথলি) এবং ইউরেথ্রা (মূত্রনালি) নিয়ে মূত্রতন্ত্র গঠিত। এই রেচনন্ত্রের যেকোনো অংশে যদি জীবাণুর সংক্রমণ হয়, তাহলে সেটাকে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বলা হয়। কিডনি, মূত্রনালি, মূত্রথলি বা একাধিক অংশে একসঙ্গে এই ধরনের ইনফেকশন হতে পারে।

চিকিৎসকেরা বলেন, ‘নারী-পুরুষ উভয়ের প্রস্রাবের সংক্রমণ খুবই বিব্রতকর একটি রোগ। ইউরিনে ইনফেকশন বা প্রস্রাবে সংক্রমণের কিছু সাধারণ রোগলক্ষণ আছে, যা দিয়ে সহজেই বোঝা যায় আপনি এই রোগে আক্রান্ত। যেমন প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া করা, ঘনঘন প্রস্রাব, তলপেটে ব্যথা, প্রস্রাব শেষ হওয়ার পরেও কিছু প্রস্রাব অবশিষ্ট থাকা। লালচে-হলুদাভ বা ঘোলাটে রঙের প্রস্রাব, প্রস্রাবে দুর্গন্ধ, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া। যেসব কারণে প্রস্রাবের সংক্রমণ হয়ে থাকে, সেগুলো হলো:


১. দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখা।

২. দীর্ঘ সময় পানি পান না করা।

৩. ডায়াবেটিস আক্রান্তদের রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে না থাকা।

৪. বয়স্ক নারীদের মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া।

৫. গর্ভাবস্থায় মাসিক বন্ধ থাকায় ইউরিন ইনফেকশন ঝুঁকি থাকে।

৬. দীর্ঘদিন প্রস্রাবের রাস্তায় নল পরিয়ে রাখা।

৭. বৃদ্ধ বয়সে পুরুষের প্রস্রাবের নালির পাশে প্রস্টেট বড় হয়ে প্রস্রাবের স্বাভাবিক প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করে। এতে প্রস্রাবে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।


প্রতিকারের উপায়

১. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা।

২. প্রস্রাবের সময়ে মূত্রথলি সম্পূর্ণ খালি করার চেষ্টা করা।

৩. প্রস্রাবের বেগ এলে বেশিক্ষণ ধরে না রাখা।

৪. প্রস্রাব করার সময়ে তাড়াহুড়া না করা।

৫. গোপনাঙ্গ শুকনো ও পরিষ্কার রাখা।

৬. ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা।

৭. সুগন্ধি সাবান, কেমিক্যালযুক্ত প্রসাধনী অথবা ট্যালকম পাউডার গোপনাঙ্গে ব্যবহার না করা।

যা করবেন না

১. প্রস্রাবের বেগ আসলে তা ধরে রাখবেন না

২. প্রস্রাব করার সময়ে তাড়াহুড়ো করবেন না

৩. যৌনাঙ্গে সুগন্ধি সাবান অথবা ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করবেন না

৪. সিনথেটিক কাপড়ের (যেমন: নাইলন) তৈরি আঁটসাঁট অন্তর্বাস ব্যবহার করবেন না

৫. আঁটসাঁট পায়জামা পরবেন না

৬. চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় খাবেন না। এগুলো জীবাণু বেড়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে

যেসব কনডম অথবা ডায়াফ্রামে শুক্রাণু ধ্বংস করার পিচ্ছিলকারক থাকে সেগুলো ব্যবহার করবেন না। এর পরিবর্তে ভিন্ন ধরনের কনডম ও লুব্রিকেন্ট কিংবা জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করুন।

ইউরিন ইনফেকশনের চিকিৎসা

ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ দেখা দিলে সেগুলো উপেক্ষা না করে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ডাক্তার প্রস্রাব পরীক্ষা করানোর পাশাপাশি প্রয়োজনবোধে উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন।

অ্যান্টিবায়োটিকের সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করা গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষণগুলো কমে আসতে শুরু করলেও প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধের কোর্স সম্পন্ন করতে হবে।

সাধারণত ওষুধ খাওয়া শুরু করার ২-৩ দিনের মধ্যে লক্ষণগুলো কমতে শুরু করে। যদি ওষুধের কোর্স সম্পন্ন করার পরেও লক্ষণের উন্নতি না হয় তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

Link copied!