কোরিয়ানদের মতো গ্লাস স্কিন পেতে মরিয়া হয়ে থাকেন অনেকেই। কোরিয়ান স্কিনকেয়ার প্রডাক্ট দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু কোরিয়ানদের ফিটনেসের দিকে কখনও তাকিয়ে দেখেছেন? তাদের তরুণ থেকে বৃদ্ধ সবাই কতটা ফিট থাকে। তাদের মধ্যে স্থূলতা কিংবা অতিরিক্ত মেদ জমে না। বয়স আট হোক কিংবা আশি, কোরিয়ানদের সবাই সব সময় ফিট। এই ফিটনেসের রহস্য কী জানেন?
কোরিয়ানরা নিজেদের ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে জানেন। তাইতো বাড়ির খাবারকেই বেশি প্রাধান্য দেন। তারা বাজারে পাওয়া প্রক্রিয়াজাত খাবার, তেল-মশলার খাবার, ফাস্টফুড এড়িয়ে চলেন। জাঙ্কফুড তাদের কাবু করতে পারে না।
কোরিয়ানরা পেট ভরে খাবার খাওয়ায় বিশ্বাসী নন। তারা খাবারের চাহিদা যতটুকু ততটুকুই খাবেন। অতিরিক্ত খাবার কখনও খাবেন না। প্লেটভর্তি ভাত না খেয়ে তারা ছোট ছোট সুশির আকারে ‘কিমবাপ’ খেয়ে থাকেন। এতে ভাতের চাহিদা মিটে যায়। আবার অতিরিক্ত খাওয়াও হয় না।
কোরিয়ানরা সবজি খেতে পছন্দ করেন। তাদের সব খাবারের সঙ্গেই ফার্মেন্টেড ডিশ থাকে। যেমন বাঁধাকপি, মূলা, ব্রাসেলস স্প্রাউটস ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের সবজিকে ফার্মেন্টেড করে রাখে। যা দিয়ে তৈরি হয় লবণাক্ত কিমচি। ফার্মেন্টেশন করায় এসব সবজিতে সৃষ্টি হয় ন্যাচারাল ভিনেগার, এনজাইম এবং ভালো ব্যাকটেরিয়া। যা আচারের মতো টক-ঝাল স্বাদের হয়। এই পদ হজমের জন্য খুবই সহায়ক হয়। শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাও বাড়ে।
সবজিপ্রিয় কোরিয়ানদের ট্রাডিশনাল খাবান কুইসিন। যে খাবারে প্রচুর সবজি থাকে। তারা মাছ, মাংস, ডিমের তুলনায় সবজি বেশি খান। প্রতিবেলায় কোরিয়ানদের মেন্যুতে থাকে র্যাডিশ কিমচি, ম্যারিনেটেড স্পিনাচ বিন স্প্রাউটস, বিবিমবাপ। যার সবকটিই সবজিবহুল খাবার। যাতে ক্যালোরি কম থাকে। তাই পেট ভরলেও ওজন বাড়ে না।
কোরিয়ানরা সামুদ্রিক মাছ খেতেও পছন্দ করেন। একটি সাধারণ কোরিয়ান খাবার হলো সি-উইড। স্যুপ থেকে শুরু করে রামেনের মতো কোরিয়ান ডিশগুলোতে এটি যুক্ত করা হয়। খাবারের শুরুতে কোরিয়ানরা অ্যাপেটাইজার হিসেবে মিয়াক-গাক নামে সি উইডের তৈরি এক ধরণের স্যুপ খান। এটি পুষ্টিকর স্যুপ। যা নতুন মায়েদেরও খাওয়ানো হয়।
জানা যায়, সি উইড প্রাকৃতিকভাবেই লবণাক্ত হয়। তাই আলাদা করে প্রক্রিয়াজাত সাদা লবণ যোগ করতে হয় না। যা তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাও নিশ্চিত করে।
কোরিয়ানরা তেল-ঝোলে ভুনা তরকারি বা ভাজাভুজি খাবার খান না। বরং সবজি, টফু আর ঝাল ঝাল গোচুজাংয়ের (মরিচের পেস্ট) বিভিন্ন স্যুপ এবং স্টু খেতে পছন্দ করেন। তাদের জনপ্রিয ডিশগুলোর মধ্যে রয়েছে কিমচি-জিগে, ডেনজং-জিগে, সুনডুবু- আর এ সবই স্যুপজাতীয় আইটেম।
কোরিয়ানরা স্বাস্থ্যের দিক থেকে খুবই সচেতন থাকেন। তাই তারা ব্যালেন্স ডায়েট করেন। যেখানে মাংসের পরিমাণ একেবারেই সীমিত থাকে। পাতলা স্লাইস বা বার্বিকিউ করে মাংস খান। এরসঙ্গে অনেক ধরনের সবজির দিয়ে বানানো সালাদ রাখেন। এতে প্রোটিন থেকে কার্বস সবকিছুরই সুষম বণ্টন হয়।
কোরিয়ানদের ফিটনেসের আরও একটি রহস্য হচ্ছে নিয়ম মেনে চলা। তারা খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রেও নিয়ম মেনে চলেন। ঘড়ির কাঁটা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়েই প্রতিদিন খাবার খাবেন এবং ঘুমানোর অনেক সময় আগেই খাবার শেষে করবেন।
কোরিয়ানরা ডেজার্ট হিসেবে তাজা ফল খেয়ে থাকেন। এর বাইরে মিষ্টি জাতীয় খাবার একদমই খান না। প্রক্রিয়াজাত চিনিযুক্ত ডেজার্ট তারা অপছন্দ করেন। তবে কোরিয়ানরা খাবারের পর প্রতিবেলায় কফি পান করবেন। যা মিষ্টি খাবারের আসক্তি আরও কমিয়ে দেয়।
স্বাস্থ্যকর খাওয়া দাওয়ার পাশাপাশি কোরিয়ানরা হাঁটতে পছন্দ করেন। কাছাকাছি দূরত্বে তারা হেঁটেই গন্তব্যে যান। পাবলিক ট্রান্সপোর্টের পরিবর্তে তারা হেঁটে বা সাইকেলে চড়ে গন্তব্যে পৌঁছান। তাছাড়া কোরিয়ান নারীরা হিল জুতার পরিবর্তে নরম ফ্ল্যাট জুতা পরতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। যাতে তারা সহজেই হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন। প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ হাঁটাহাটি করা প্রায় অধিকাংশ কোরিয়ানদেরই অভ্যাস। তাই ফিটনেসের দিক থেকে তারাই সেরা থাকেন। সূত্র: হেলদিফাই