আফ্রিকার কয়েকটি দেশে কিছুটা স্মলপক্সের মতো এক ধরণের সংক্রমণ জনিত রোগের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিইএইচও)। মধ্যেই ইউরোপের দেশ সুইডেনে শনাক্ত হয়েছে এমপক্স রোগ। সুইডেনের জনস্বাস্থ্য সংস্থা এ কথা জানিয়েছে।
এমপক্সের ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয়েছিল একটি বানরের শরীরে। এ কারণেই এটি ‘মাঙ্কিপক্স’ নামে পরিচিতি পায়। এটি স্মলপক্স বা গুটিবসন্তের জন্য দায়ী ভাইরাসের একই শ্রেণিভুক্ত। তবে তা গুটিবসন্তের ভাইরাসের চেয়ে অনেকটাই কম ক্ষতিকর। ১৯৭০ সালে আফ্রিকার একটি দেশে মানবদেহে প্রথম এই ভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর আফ্রিকার কয়েকটি দেশে বিক্ষিপ্তভাবে এর সংক্রমণ ঘটতে দেখা যায়। তবে কেবল বানর নয়, ইঁদুরও এই ভাইরাসের বাহক বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। শুরুতে মাঙ্কিপক্স নামে পরিচিত এ ভাইরাসের নাম পরিবর্তন করে এমপক্স রাখা হয়েছে। প্রাণীর প্রতি বিদ্বেষমূলক দৃষ্টিভঙ্গি ছড়ানোর আশঙ্কা থেকে নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয় ডব্লিউএইচও।
যেসব অঞ্চলে প্রাদুর্ভাব বেশি
আফ্রিকার বৃষ্টিপ্রধান ক্রান্তীয় বনাঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় এ ভাইরাসের বেশি প্রাদুর্ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। বেশি আক্রান্ত দেশগুলোর একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো (ডিআর কঙ্গো)। তবে ১৫ বছরের নিচের বয়সী শিশু–কিশোরেরা এতে বেশি আক্রান্ত হয়।
এমপক্সের ধরণ
এমপক্সের দুটি প্রধান ধরন।
ক্লেড ১
ক্লেড ২।
২০২২ সালের জুলাইয়ে এমপক্সের মৃদু ক্লেড ২ ধরন প্রায় ১০০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। এর মধ্যে ছিল এশিয়া ও ইউরোপের কিছু দেশও। ঝুঁকিতে থাকা গোষ্ঠীগুলোকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনা হয় ওই সংক্রমণ। তবে এবার আরও বেশি প্রাণঘাতী ক্লেড ১-এর সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে।
যেভাবে ছড়ায়
এমপক্স শরীরে প্রবেশ করে ভঙ্গুর ত্বক, শ্বাসপ্রশ্বাস, চোখ, নাক বা মুখের মধ্য দিয়ে। এমপক্স আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে গেলে এটি ছড়ায়। যেমন-
আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করলে
আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বকের সংস্পর্শ
কথা বলা বা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।
উপসর্গ
প্রাথমিক পর্যায়ে জ্বর, মাথাব্যথা, পিঠে ব্যথা, মাংসপেশিতে টান দেখা দিতে পারে। এছাড়াও এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বরের পাশাপাশি শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুরুতে মুখে ফুসকুড়ি ওঠে। পরে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে হাতের তালু ও পায়ের তলায়। ফুসকুড়িগুলো অত্যন্ত চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। পরবর্তীতে পুঁজ ও ক্ষত সৃষ্টি হয়। সাধারণত এ সংক্রমণ নিজে থেকে সেরে ওঠে এবং তা ১৪ থেকে ২১ দিন স্থায়ী হয়। গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে সারা শরীর, বিশেষ করে মুখমণ্ডল, চোখ ও যৌনাঙ্গে ক্ষত দাগ দেখা দিতে পারে।