পিরিয়ডের অস্বস্থিকর দিনগুলোতে কিছুটা স্বস্থি নিয়ে এসেছে স্যানিটারি ন্যাপকিন। আর স্যানিটারি ন্যাপকিনের দারুণ একটি বিকল্প হিসেবে এসেছে মেন্সট্রুয়াল কাপ। পিরিয়ডের দিনগুলোতে মেন্সট্রুয়াল কাপ হতে পারে আপনার স্বাস্থ্যকর আরামদায়ক মাসিকের পরিপূরক। এটি যেমন স্বস্থিকর তেমনি পরিবেশবান্ধবও। তবে পিরিয়ডের সময় ব্যবহৃত অন্যান্য সবকিছুর তুলনায় মেন্সট্রুয়াল কাপ আরামদায়ক হলেও এটি নিয়ে ভীতি এবং ভ্রান্তি রয়েছে এদেশের নারীদের মধ্যে। ফলে তারা এটি ব্যবহার করতে চান না বা ভয় পান।
মেন্সট্রুয়াল কাপ মেডিকেল গ্রেড সিলিকনের তৈরি ফানেলের মত এক ধরনের বিশেষ কাপ। কাপের মুখটা চওড়া, নিচের দিকটা আস্তে আস্তে ঢালু হয়ে সরু হয়ে গেছে অর্থাৎ মেন্সট্রুয়াল । এটি স্যানিটারি ন্যাপকিনের মতো রক্ত শুষে না নিয়ে কাপে জমা রাখে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন মেন্সট্রুয়াল কাপ
আপনার বয়স,ফ্লোর পরিমাণ ও সন্তান ধারণ করেছেন কিনা তার ওপর ভিত্তি করে সঠিক সাইজের কাপ সংগ্রহ করুন। তারপর ব্যবহার করুন। মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারের জন্য কাপটি নানা ধরনের শেপে ভাজ করা যায় যেমন—সি ফোল্ড, পাঞ্চ ডাউন, সেভেন ফোল্ড, ট্রায়াঙ্গেল, ডায়মন্ড শেপ ইত্যাদি। হাত ভালোকরে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর সি শেপে ভাজ করার জন্য মেন্সট্রুয়াল কাপের খোলা মুখ উপরের দিক করে হাতের তালুতে নিন। তারপর আরেক হাতের সাহায্যে মাঝখানে চ্যাপ্টা করে ধরে রাখুন। কাপটি ইংরেজি অক্ষর সি-র মতো ভাঁজ করার চেষ্টা করুন। শেষে শক্তভাবে ধরে যোনিপথে প্রবেশ করান। ভেতরে গিয়ে প্রসারিত হয়ে জরায়ু মুখে আটকে যায় মেন্সট্রুয়াল কাপ। এর ফলে চারদিক থেকে রক্ত লিকেজ না হয়ে কাপের মধ্যে জমা হয়। এভাবে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত লিকেজের টেনশন ছাড়া এবং চেঞ্জ করা ছাড়া ব্যবহার করা যাবে। ৮ ঘণ্টা পরে টান দিয়ে খুলে রক্ত পরিষ্কার করে নিতে হবে।
প্রতিবার পিরিয়ড শেষে কাপটি গরম পানিতে ভালো করে ফুটিয়ে মুছে শুকনো জায়গায় রাখুন। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে একটি কাপ ৮-১০ বছর ব্যবহারের উপযোগী হবে।
মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারের সুবিধা
মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারে অনেক সুবিধা রয়েছে। যেমন-
- বর্তমানে মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার সব থেকে নিরাপদ ও আরামদায়ক।
- মাসিকের সময় মেন্সট্রুয়াল কাপ ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত লিকেজের টেনশন ছাড়া টানা ব্যবহার করা যায়।
- পিরিয়ডের সময় কাপড় ব্যবহার করা অস্বাস্থ্যকর। এজন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহৃত হয়। প্রতি মাসে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে গড়ে ১৫০-২০০ টাকা হলে বছরে খরচ হয় ১৮০০-২৪০০ টাকা। ৫ বছরে খরচ হয় কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা। আর একটি মেন্সট্রুয়াল কাপ কিনতে পারবেন ৮০০-২০০০ টাকার মধ্যে, যা ব্যবহার করা যায় একটানা ৮-১০ বছর। এদিক থেকে মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহার সাশ্রয়ী।
- মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করলে এর ওপর অন্য আর কিছু ব্যবহার করতে হয় না। অন্তর্বাস পরিধানের প্রয়োজন হয় না।
- ভেজা, স্যাঁতসেঁতে অস্বিস্থিকর ভাব থাকে না।
- সঠিকভাবে মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহারে যোনিতে সংক্রমণের ঝুঁকি প্রায় থাকে না বললেই চলে।
মেন্সট্রুয়াল কাপ নিয়ে যত ভ্রান্ত ধারণা
এক কাপ ব্যবহার নিয়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণা দেখা যায়।
- অনেকেই মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারে ভয় পায়। তারা মনে করে মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করলে প্রস্রাবের সময়ে অস্বস্তি হয়। এই ধরনের কাপ এমন ভাবেই বানানো হয় যাতে সেটি শক্ত হয়ে যোনিতে আটকে থাকে। তাই মলমূত্র ত্যাগ করার সময়ে তা খুলে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা অনেকটাই কম।
- অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা আছে যে মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারে হাইমেন পর্দা ছিঁড়ে যায়, ফলে ভার্জিনিটি নষ্ট হয়। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। কারণ, কাপটি যোনিপথের সামনের দিকেই থাকে, হাইমেন পর্দার কাছেও যায় না। তাই ছেঁড়ার প্রশ্নই ওঠে না।
- মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যথার কারণ হতে পারে। মূলত এটি সিলিকন দিয়ে তৈরি। এজন্য ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা কম। গবেষণা অনুযায়ী, প্রথমে একটু অস্বস্তি লাগলেও পরে স্বাভাবিক মনে হয়।
তবে মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় সর্তক না হলে ইনফেকশন হতে পারে। তাই প্রথমবার ব্যবহারের সময় ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। কাপ কীভাবে ব্যবহার করতে হবে সেই সম্পর্কে আগে ভালোভাবে ধারণা নিতে হবে। কার ফ্লো কেমন তার উপর নির্ভর করে কাপ চেঞ্জ করতে হবে। অবশ্যই মেন্সট্রুয়াল কাপের মেয়াদ কতদিন আছে সেটি দেখে ততদিন তা ব্যবহার করতে হবে।