রমজান মাসজুড়ে রোজা রাখা হয়। দিনভর রোজা রেখে খাবার খাওয়া এবং পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকতে হয়। এই সময় শরীরে পানিশূন্যতা হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। পর্যাপ্ত পানি পান না করা এবং দীর্ঘসময় পানি পান থেকে বিরত থাকার কারণেই এটি হতে পারে। পানিশূন্যতার সঙ্গে সঙ্গে শরীর থেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ ইলেক্ট্রোলাইটস্ও বের হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে শুধু পানি পান করে পানিশূণ্যতা থেকে রেহাই পাওয়া যায় না। তাই অনেকেই বিভিন্ন ফলের জুস কিংবা খাবার স্যালাইন পান করেন। তবে জানেন কি, প্রতিদিন ইফতারে স্যালাইন পান করা নিরাপদ কি না।
স্যালাইনে সোডিয়াম ক্লোরাইড (লবণ), গ্লুকোজ এবং পটাসিয়াম মিশ্রিত থাকে। যা আমাদের শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স ঠিক করে। পানিশূন্যতা দেখা দিলে শুধু পানি পানে কাজ হয় না। শরীরে সোডিয়ামের ঘাটতি থেকে যায়। যা থেকে হাইপোনাট্রেমিয়া হয়। এই অবস্থায় স্যালাইন পান করলে শরীরে সোডিয়াম, গ্লুকোজ এবং পটাসিয়ামের মাত্রা ব্যালেন্স হয়। পানিশূন্যতাও দ্রুত পূরণ হয়।
স্যালাইন শরীরে পানি শোষণকে ত্বরান্বিত করে। সোডিয়াম এবং গ্লুকোজ অন্ত্রে পানির শোষণ প্রক্রিয়াকে সহজ করে। এতে শরীর দ্রুত হাইড্রেটেড হয়।
সারাদিন রোজা রেখে অনেকেই ইফতারে স্যালাইন পান করেন। এতে সারাদিনের পানির ঘাটতি মিটে যায়। কিন্তু এই অভ্যাস যেন প্রতিদিনের না হয়। কারণ যখন শরীরে স্যালাইনের প্রয়োজন হবে তখনই স্যালাইন খেতে হবে। অন্যথায় স্যালাইন পানের অভ্যাস শরীরের জন্য মারাত্মক হতে পারে। কারণ শরীরের প্রয়োজন ছাড়া ওরস্যালাইন পান করা অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, শরীরে প্রতিটি খনিজের ভারসাম্য থাকা খুবই জরুরি। অকারণে স্যালাইন পান করেন, শরীরে খনিজের ভারসাম্য বিগড়ে যেতে পারে। এতে একাধিক শারীরিক সমস্যা হতে পারে। যেমন_
অতিরিক্ত স্যালাইন পানে শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়। যা উচ্চ রক্তচাপের কারণ। এটি হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
এছাড়াও কিডনি অতিরিক্ত সোডিয়াম প্রসেস করতে পারে না। কিডনির উপর চাপ পড়ে। দীর্ঘমেয়াদে কিডনি রোগের সম্ভাবনা বাড়ে। আবার অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরে পানি ধরে রাখে। এতে হাত, পা বা মুখ ফুলে যায়। অতিরিক্ত স্যালাইন পান করলে পেটে গ্যাস, বদহজম বা ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তাই ইফতারে পানিশূণ্যতার ঘাটতি কাটাতে ডাবের পানি, ফলের রস, গুড়ের সরবত, স্যুপ খাওয়া যেতে পারে। তবে শুধু পানির প্রয়োজন হলে পানিই পান করা উচিত। অন্যথায় এসব খাবারও অতিরিক্ত খেলে শরীরের সমস্যা হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, যখনই শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের ঘাটতি হয়, শুধুমাত্র তখনই স্যালাইন পান করা উচিত। স্যালাইন পানের সঠিক পরিমাণও জানা জরুরি।