নারীরা শারীরিকভাবে অনেকসময় অনিয়মিত পিরিয়ডের স্বীকার হন। অনিয়মিত পিরিয়ড হলো, কোনো নারীর মাসিক চক্র তার স্বাভাবিক চক্রের অনেক বেশি আগে বা পরে শুরু হলে তাকে অনিয়মিত পিরিয়ড হিসেবে ধরা হয়। পিরিয়ড নিয়মিত করার জন্য কিছু খাবার খাওয়া যেতে পারে। সেগুলো কী চলুন জেনে নিই-
অনিয়মিত পিরিয়ডের কারণ
মাসিক চক্র অনিয়মিত হওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। মানসিক চাপ, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, থাইরয়েড, বয়স ইত্যাদি ছাড়াও আরেকটি বড় কারণ হতে পারে জীবনযাপনের ধরন। কেমন খাবার খাচ্ছেন, শারীরিক পরিশ্রম, ঘুমের অভ্যাস পিরিয়ড নিয়মিত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অনিয়মিত পিরিয়ডে কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত
ওজন অতিরিক্ত হলে তা হরমোনের ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্যতা তৈরি করতে পারে। সেইসঙ্গে এটি ইনসুলিনের মাত্রা ব্যহত করতে পারে। হরমোনের এই ভারসাম্যহীনতার কারণে পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে। যেহেতু স্থুলতা এ ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে তাই এক্ষেত্রে খাবারের তালিকা নির্বাচন করতে হবে বুঝেশুনে। অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা ঠিক করতে সাহায্য করবে এই খাবারগুলো-
পেঁপে
পেঁপে কাঁচা অবস্থায় সবজি এবং পাকলে ফল হিসেবে খাওয়া হয়। পেঁপের উপকারিতার কথা সবারই জানা। এতে থাকা ক্যারোটিন আমাদের শরীরের ইস্ট্রোজেনের মাত্রা উদ্দীপিত ও নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ফলে অনিয়মিত পিরিয়ড নিয়মিত হয়। সেইসঙ্গে এটি পিরিয়ডের সময় পেট ব্যথা দূর করতেও কাজ করে।
আদা
প্রতিদিনের রান্নায় আদা তো লাগেই। তাই হাতের কাছে থাকা এই উপাদান দিয়েও সমস্যার সমাধার করতে পারবেন। আদাতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম ও ভিটামিন সি পিরিয়ড নিয়মিত করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, পিরিয়ড চলাকালীন আদা দিয়ে চা কিংবা গরম পানি পান করলেও মিলবে উপকার। এটি শরীরের বিভিন্ন ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে কাজ করে।
দারুচিনি
সুগন্ধি মসলা হিসেবে পরিচিত দারুচিনি কেবল এর গন্ধ ও স্বাদের জন্যই ব্যবহার করা হয় না। বরং এই মসলা আমাদের শরীরের জন্যও নানাভাবে উপকার করে থাকে। এটি আমাদের শরীর ভেতর থেকে গরম রাখে ও রক্ত প্রবাহ বাড়ায়। তাই অনিয়মিত পিরিয়ড থাকলে নিয়মিত দারুচিনি খেতে পারেন।
হলুদ
হলুদের অনেক উপকারিতার কথা শুনে থাকবেন। এটি নানাভাবে আমাদের সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। রান্নায় হলুদ ব্যবহার করলে তা কেবল স্বাদ, গন্ধ ও রংই বাড়ায় না; সেইসঙ্গে এটি অনেক উপকারিতাও বয়ে আনে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হলুদ খেলে তা পিরিয়ড নিয়মিত করতেও সাহায্য করে।
আনারস
মিষ্টি স্বাদের ফল আনারস অনেকের কাছেই পছন্দের। এটি খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনই উপকারী। নিয়মিত আনারস খেলে আমাদের লোহিত রক্তকণিকা এবং শ্বেত রক্তকণিকা বৃদ্ধি পায়। এটি রক্ত প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ এবং মাসিকের সময় জরায়ুর আস্তরণের ক্ষরণে সহায়তা করে। পিরিয়ড অনিয়মিত হলে আনারস খেতে পারেন। সেইসঙ্গে গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে এই ফল না খাওয়াই ভালো।
বিটরুট
অনেকটা শালগমের মতো দেখতে গাঢ় মেরুন রঙের এই সবজির উপকারিতা অনেক। এটি আয়রন ও ফলিক এসিডে সমৃদ্ধ। এটি পিরিয়ডের সময় ব্যথা কমাতে কাজ করে। সেইসঙ্গে এটি অনিয়মিত পিরিয়ড ঠিক করতেও ভূমিকা রাখে।
অ্যালোভেরা
রূপচর্চা কিংবা চুলের যত্নে অ্যালোভেরা বেশ জনপ্রিয়। এটি আমাদের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অ্যালোভেরার জুস পান করলে তা অনেকগুলো সমস্যা দূর করে। তার মধ্যে একটি হলো অনিয়মিত পিরিয়ড নিয়মিত করা। এটি হরমোনের মাত্রায় ভারসাম্য রাখে যা পিরিয়ড নিয়মিত করতে কাজ করে।
এই সময় যেসব খাবার খাবেন না
এই সময় প্যাকেটজাত খাবার, ক্যানে ভরা খাবার, ফ্রোজেন ফুড বা রেডি টু ইট ফুড খাওয়া যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা উচিত। পরিশোধিত ময়দা ও চিনি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সেইসঙ্গে বাদ দেবেন কার্বোনেটেড পানীয়। এ ধরনের খাবার হরমোনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে। যা পরবর্তীতে অনিয়মিত পিরিয়ডের মতো সমস্যা ডেকে আনতে পারে।
প্রাথমিকভাবে এসব খাবার খাওয়া যেতে পারে। যদি অনেকদিন ধরে আপনি অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যায় ভোগেন তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।