অসুস্থতা যেকোনো সময়ই শরীরে ভর করে। আপনি হঠাত্ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। কিংবা আপনার সামনে কেউ হয়তো অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। দুটো পরিস্থিতিই বিব্রতকর। মাঝে মাঝেই আচমকা কাউকে যদি অজ্ঞান হয়ে যেতে দেখেন, তখন আপনি হতভম্ব হয়ে পড়েন। কী করবেন, কোথায় যাবেন তা বুঝে উঠতে পারেন না। অথচ ওই সময় আপনিই হতে পারেন একমাত্র ভরসা। অজ্ঞান হওয়া ব্যক্তিকে সারিয়ে তুলতে আপনিই তার সহযোগী হতে পারেন। তাই বিচলিত না হয়ে ওই সময় আপনাকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা কিছু বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন_
· প্রথমেই সাহায্যের আবেদন করতে হবে। আশপাশের মানুষের কাছে অজ্ঞান ব্যক্তিকে সহযোগিতার জন্য সাহায্য চাইবেন। আর জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে ফোন করবেন। অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসে ফোন করতে পারেন। এছাড়াও বাংলাদেশে ৯৯৯ নম্বরে হটলাইনে ফোন করে সহযোগিতা চাইতে পারেন।
· অজ্ঞান ব্যক্তিকে রাস্তা থেকে কিংবা, ধারালো বস্তুসহ অন্যান্য ক্ষতিকর জিনিস থেকে দূরে সরিয়ে নিন। তাকে নিরাপদ স্থানে রাখুন।
· অজ্ঞান ব্যক্তিকে একদিকে কাত করে দিন। এতে মুখে, গলায় লালা থাকলে তা বেরিয়ে আসবে।
· অজ্ঞান ব্যক্তি নিশ্বাস পরীক্ষা করুন। নাকের সামনে আঙুল নিন। বুকের ওঠানামা দেখুন। রোগী শ্বাসপ্রশ্বাস নিচ্ছেন কি না দেখুন। রোগীর শ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে মুখে মুখ লাগিয়ে শ্বাস চালু করার চেষ্টা করুন।
· নাড়ির কম্পন বোঝার চেষ্টা করুন। রক্তচাপ মাপার ডিজিটাল যন্ত্র দিয়ে রক্তচাপ মেপে নিন। রক্তচাপ খুব কম থাকলে সঙ্গে সঙ্গে পায়ের দিকটা উঁচু করে দিন। হার্ট অ্যাটাক বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে অজ্ঞান ব্যক্তির রক্তচাপ কমে যাবে।
· বেসিক লাইফ সাপোর্ট দিতে পারেন। এই পদ্ধতিকে বলে সিপিআর বা কার্ডিয়ো পালমোনারি রিসাসিটেশন। এটি হার্ট ম্যাসাজ করার বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি। অভিজ্ঞ কেউ এই বিষয়ে জানলে তার সাহায্য নিন।
· অজ্ঞান ব্যক্তি ডায়াবেটিসের রোগী হলে সঙ্গে সঙ্গে মুখের ভেতরে সামান্য চিনি দিন। অনেক সময় রক্তে গ্লুকোজ কমে গেলে এমনটা হতে পারে। গ্লুকোমিটার থাকলে পরীক্ষা করে দেখুন। তবে অজ্ঞান অবস্থায় রোগীকে শরবত বা খাবার খাওয়ানো যাবে না। এতে খাবার পানি ফুসফুসে চলে যেতে পারে। বিপদ আরও বাড়বে।
অজ্ঞান হওয়ার পূর্বলক্ষণ
· চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যেতে পারে
· শরীর হঠাৎ ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে
· প্রচুর ঘাম হতে পারে
· বমি বমি ভাব ও মাথা ঘোরা অনুভব হতে পারে
· আশপাশের সবকিছু ঝাপসা দেখবে
· দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে
বিশেষজ্ঞরা জানান, নিজের মধ্যে এমন লক্ষণ দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে অবশ্যই কিছু কাজ করতে হবে।
· সঙ্গে সঙ্গে সোজা হয়ে শুয়ে পড়তে হবে। মাথার চেয়ে পায়ের অবস্থান কিছুটা উঁচুতে রেখে শোবেন। পায়ের নিচে বালিশ বা অন্য কোনো বস্তু রেখে শুতে পারেন।
· শোয়ার ব্যবস্থা না থাকলে হাঁটু ভাঁজ করে, মাথা সামনে ঝুঁকিয়ে কোনো কিছুর ওপর ভর দিয়ে বসুন।
· ডায়াবেটিস রোগীরা সবসময় পকেটে চকোলেট বা শুকনো মিষ্টি খাবার রাখুন।
· ডায়াবেটিস রোগীরা কিছুক্ষণ পর পর খাবার খাবেন। একটানা অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকবেন না।
· এক স্থানে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে থাকবেন না। হাটাচলা করুন।
· গরমে প্রচুর পানি পান করতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।