প্রতিদিন হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী- এটা সবারই জানা। বিশেষজ্ঞরাও এই পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে এবার এই কথাতেই সিলমোহর দিলেন গবেষকরা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার এক গবেষণা শেষে গবেষকরা জানান, প্রতিদিন অন্তত ১১১ মিনিট হাটলে ১১ বছর আয়ু বেড়ে যেতে পারে।
হাঁটাহাঁটি শরীরচর্চার অন্যতম অংশ। বলা যায়, এটি এখন সবচেয়ে বড় ‘ইন থিং’। রুটিন করে প্রতিদিন হাঁটাহাটি করেন অনেকেই। সকালে বা বিকেলে যেকোনো সময়ই হাঁটতে বের হন। এটি স্বাস্থ্য সচেতনদের অন্যতম হাতিয়ার। এটি মন ভালো করাও নতুন ট্রেন্ড। মাঠে, ময়দানে কিংবা পার্কে স্নিকার্স পরে হাঁটতে বের হচ্ছেন অনেকেই। ওজন ঝরাতে, ডায়াবেটিস কমাতে, ফ্যাটি লিভার নিয়ন্ত্রণে হাঁটাহাটি অত্যন্ত জরুরি। জেন-জি প্রজন্মের অনেকেই এখন এই রুটিনে চলছেন। তবে শুধু হাটলেই হবে না। একে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাঁধতে হবে। অর্থাত্ অস্ট্রেলিয়ার করা এই গবেষণায় বলা হয়, হেঁটে আয়ু বাড়াতে গেলে হাঁটতে হবে সময় ধরে। সারাদিনে সকালে ও বিকেলে ভাগ করে মোট ১১১ মিনিট অর্থাত্ প্রায় পৌনে দু’ঘণ্টা হাঁটতে হবে। তবেই প্রকৃত উপকার মিলবে।
বিখ্যাত বিজ্ঞানপত্রিকা ‘ব্রিটিশ জার্নাল অফ স্পোর্টস মেডিসিন’-এ কুইন্সল্যান্ডের গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির গবেষণাপত্রে সম্প্রতি এটি প্রকাশিত হয়। বিগত ১০ বছর ধরে ৩৬ হাজার চল্লিশোর্ধ্ব মার্কিন নাগরিকের উপর ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিভাগের করা স্টাডিতে এই তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। যেখানে দেখা গিয়েছে, গড়ে ১১১ মিনিট যারা প্রতিদিন হাঁটেন তারা, হাঁটাহাঁটি না-করা ব্যক্তিদের তুলনায় বেঁচে থাকার সময়সীমা প্রায় ১১ বছর বেশি। হাঁটায় কায়িক পরিশ্রম হয়। যা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির জনস্বাস্থ্য বিভাগের প্রফেসর লেনার্ট ভিরম্যান জানান, যারা সুস্থ থেকেও হাঁটাহাঁটি করেন না, তারা ভয়াবহ রোগের তুলনায় কোনও অংশে কম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না। যারা কমপক্ষে ১১১ মিনিট হাঁটেন তাদের আয়ু অন্যদের চেয়ে প্রায় ১১ বছর বেশি থাকে।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাস জানান, নিয়ম করে ১১১ মিনিট দ্রুত হাঁটা খুবই ভালো অভ্যাস। এটি শরীর ও মন ভালো রাখে। কারণ টানা জোরে হাঁটলে মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্ল্যান্ড থেকে বিটা-এন্ডরফিন নামে একটি প্রোটিনের ক্ষরণ হয়। এই রাসায়নিকটিকে হ্যাপি হরমোন বলা হয়। যা স্ট্রেস কমায়। ব্যথার উপশম করে। শরীর-মন চাঙ্গা করে। স্ট্রেস কমায়।
গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিদিন ২৫০০ স্টেপ ও ২৭০০ স্টেপ যারা হাঁটেন, তাদের হৃদরোগে মৃত্যুর আশঙ্কা অন্যদের চেয়ে কমপক্ষে যথাক্রমে ৮% ও ১১% কম থাকে। প্রতিদিন ৭০০০ স্টেপ ও ৯০০০ স্টেপ হাঁটলে সেই আশঙ্কা যথাক্রমে ৫১% ও ৬০% কমে যায়। প্রতি ১০০০ স্টেপ বা ১০ মিনিট করে অতিরিক্ত হাঁটলে ক্রমাগত মৃত্যুর ঝুঁকি কমে যায়। তাই ১১১ মিনিট হাঁটার নিয়ম করলে ১১ বছর আয়ু বেড়ে যায়।