• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নবজাতকের যত্ন নেবেন যেভাবে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৩, ০১:৪২ পিএম
নবজাতকের যত্ন নেবেন যেভাবে

পরিবারে যখন নতুন অতিথি আসে আমাদের খুশির সীমা থাকে না। সবাই প্রস্তুতি নিতে থাকে নতুন শিশুর আগমন উপলক্ষে। এতকিছুর মাঝেও থাকে কীভাবে যত্ন নিব, কখন কী করবো, কী করলে ভাল হবে সহ হাজারো রকমের চিন্তা। আর নতুন বাবা-মায়েদের জন্য নবজাতক শিশুর যত্ন নেওয়াটা চ্যালেঞ্জিংও বটে। তাহলে চলুন আজকে জেনে নেওয়া যাক, নবজাতক শিশুর যত্ন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা।

নিজের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
শিশুর সংস্পর্শে আসার আগে নিজের হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিন। সবসময় হাত ধোয়া সম্ভব না হলে জীবাণুনাশক হ্যান্ডওয়াশ অথবা ইনস্ট্যান্ট হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। এতে রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি থাকবেনা। শিশুকে কোলে নেবার পরিবারের অন্যান্যদের হাত ধুয়ে নিতে বলুন।

শিশুকে খাওয়ানোর সময়
শিশুকে সঠিক সময়ে খাওয়ানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। নবজাতক শিশুকে প্রতি ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পরপরই খাওয়ানো উচিত। অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনাকে ৮-১২ বার শিশুকে দুধ খাওয়াতে হতে পারে। শিশুর  প্রথম ৬ মাসে শিশুকে শুধুমাত্র  মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত। মায়ের দুধে রয়েছে শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি এবং অ্যান্টিবডি, যা শিশুর বর্ধন এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে। অনেক সময় বাচ্চারা বিভিন্ন কারণে দুধ পায়না কিংবা খেতে পারেনা। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে শিশুকে ফর্মুলা দুধ খাওয়াতে হবে। সেক্ষেত্রে কেনার আগে অবশ্যই দুধের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার তারি, সঠিক পরিমাণ এবং দুধের গুণগত মান যাচাই করে নিন। আর যদি কেনা দুধ খাওয়ানোর ফলে শিশুর কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয়  শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

বেবি বার্প বা শিশুকে ঢেঁকুর তোলানো
শিশুদের প্রতিবার খাওয়ানোর পর তাদের বিশেষ এক পদ্ধতিতে ঢেঁকুর তোলানো হয়। যাকে ইংরেজিতে বেবি বার্প বলে। বাচ্চারা খাওয়ার সময় বাতাস গিলে ফেলে এবং এর ফলে পেটে গ্যাস জমে যেতে পারে। আবার এই কারণে পেটে ব্যথাও হতে পারে। শিশুর পেটের এই অতিরিক্ত বাতাস বের করে দেওয়া যায় শিশুকে ঢেঁকুর তোলানোর মাধ্যমে। এর জন্য শিশুকে আস্তে আস্তে আপনার বুকের কাছে এক হাত দিয়ে ধরে রাখুন। তার চিবুক আপনার কাঁধে এলিয়ে দিন। আপনার অন্য হাত দিয়ে খুব আস্তে আস্তে তার পিঠে টোকা দিন যতক্ষণ না পর্যন্ত শিশু ঢেঁকুর তুলছে।

শিশুর জিহ্বা পরিষ্কার রাখুন
দুধ খাওয়ার কারণে শিশুর জিহ্বায় সাদা একটি আস্তর পড়তে দেখা যায়। আর সাদা এই আস্তরকে বলা হয় ওরাল থ্রাস। ওরাল থ্রাস পরিষ্কার না করলে শিশুদের জিভে ঘা হয়ে যেতে পারে। তাই এটি পরিষ্কারে নরম শুকনো কাপড় ব্যবহার করুন। সপ্তাহে একদিন  মুছে দিন ছোট্ট সোনাবাবুর জিভ।

নবজাতকের নখ কাটা
ছোট শিশুদের নখ খুব দ্রুত বড় হয়ে থাকে৷ আর নিজের নখের আঁচড়েই শিশুর ত্বকে লাগতে পারে গভীর আঁচড়। শিশুদের ত্বক খুবই সেনসিটিভ হয়, তাই আঁচড় থেকে ত্বকে ঘা হবার সম্ভাবনাও থাকে৷ তাই  শিশুদের নখ সুন্দর করে কেটে রাখতে হবে৷ শিশু ঘুমিয়ে গেলে সাবধানে নখগুলো কেটে নিন। এতে নড়াচড়ার বা কেটে যাওয়ার ভয় থাকবে না ৷ নখ কাটতে বেবি নেইলকাটার বা কাঁচির মতো বেবি নেইল ক্লিপার ব্যবহার করুন। তবে যেটাই ব্যবহার করুন না কেন ব্যবহারের আগে তা জীবাণুনাশক মেশানো পানিতে একবার ধুয়ে নিন৷ বাচ্চাদের নখ সাধারণত নরমই থাকে তবে শক্ত মনে হলে গোসলের পরপরই নখ কাটুন৷

শিশুর চোখের যত্ন
শিশুদের চোখের প্রায়ই ময়লা দেখা যায়। বাচ্চার চোখের ময়লা পরিষ্কার করতে ভুলেও খালি হাত ব্যবহার করা যাবে না। কুসুম গরম পানিতে নরম কাপড় ভিজিয়ে নিন। এবার হালকা করে চেপে পানি ঝরিয়ে বাচ্চার চোখ আলতোভাবে মুছে নিতে হবে।

শিশুদের কান ও নাক পরিষ্কার রাখা
বাচ্চাদের কান ও নাক পরিষ্কার করার জন্য কটন বাডস ব্যবহার করুন। বাচ্চা ঘুমিয়ে গেলে সতর্কতার সাথে কান ও নাক পরিষ্কার করুন। খেয়াল রাখুন কানের পর্দায় বা নাকের খুব বেশি ভেতরে যেন আঘাত না লাগে। পরিষ্কার করার আগে কটন বাডসে হালকা অলিভ অয়েল লাগিয়ে নিন। অনেক সময় শিশুদের নাকে সর্দি বা ময়লা জমে বন্ধ হয়ে যায়, এর ফলে শিশুদের শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং দুধ টানতে চায় না। সুতরাং এ ব্যাপারে বিশেষ সতর্ক থাকুন।

মালিশ করা
শিশুর শরীর মালিশ করা  তাদের জন্য উপকারী। এটি শিশুকে ঘুমাতে সাহায্য করে এবং রক্ত সঞ্চালন ও হজম বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। শিশুকে গোসল করানোর আগে হাতে অল্প পরিমাণে বেবি অয়েল বা লোশন নিয়ে আসতে আসতে  মালিশ করুন। এতে শিশুর শরীরের ব্লাড সার্কুলেশন ভালো হয় এবং আরাম অনুভব করে। এতে শিশুদের ঘুমেও ভালো প্রভাব পড়ে।

সূর্যের সংস্পর্শে আনা
সূর্যের আলোতে আছে ভিটামিন-ডি। এটি শিশুদের হাড়ের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়। ক্যালসিয়াম, যা শিশুদের হাড় গঠনে সহায়তা করে।

গোসলের সময়
নবজাতককে গোসল করানোর কাজটি খুবই সাবধানতার সাথে করতে হয়। কেননা শিশু যদি নড়াচড়া করে তাহলে কানে কিংবা চোখে পানি অথবা সাবান চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গোসল করাতে সাবধানতা অবলম্বন করুন যেন চোখে কিংবা কানের ভেতর পানি না যায়। আলতো ভাবে শিশুর ত্বক পরিষ্কার করুন এবং গোসল শেষে নরম তোয়ালে দিয়ে জড়িয়ে নিন। এরপর বেবি অয়েল কিংবা শিশুদের বিশেষ বডি লোশন হালকা মাস্যাজ করে নিন। চেষ্টা করবেন দুপুর ১২টার মাঝেই বাচ্চাকে গোসল করিয়ে ফেলতে।

ডায়পার পরানো
নবজাতক শিশুর যত্ন নেওয়ার  আরেকটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ডায়পার পরিবর্তন করা।  শিশুরা যেহেতু দুধ বা ফর্মুলা খেয়ে থাকে, তাই দিনে কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ টি ডায়পার চেঞ্জ করা লাগে। তাই খেয়াল করে সময় মতো ডায়পারটি বদলে দিন। ভেজা কিংবা নোংরা ডায়পার শিশুর জন্য খুবই ক্ষতিকর। এছাড়া ডায়পারের কারণে র‍্যাশ হলে বেবি ডায়পার ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। আর ডায়পার চেঞ্জ করার পর শিশুর ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।

বেবি ওয়াইপস
নবজাতক শিশুর জন্য ভালো মানের বেবি ওয়াইপস ব্যবহার করুন। অনেক সময় কিন্তু ভালো মানের বেবি ওয়াইপস ব্যবহার না করার কারণে শিশুর র‍্যাশ বা ইচিং হতে পারে। খেয়াল রাখবেন বেবি ওয়াইপসের কারণে শিশুর কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না।

নবজাতকের পোশাক
নবজাতকের পোশাক নির্বাচনে বিশেষ সতর্ক থাকা উচিত। গরমে সুতি কাপড়ের পোশাক নির্বাচন করুন। সিনথেটিক বা মোটা কাপড়ের ব্যবহারে শিশুর ত্বকে সমস্যা দেখা দিতে পারে। শিশুকে পোশাক পরানোর আগে খেয়াল রাখুন কোনো পোকা বা ময়লা আছে কি না।

কোমল ডিটারজেন্ট 
শিশুর জন্য নতুন কেনা পোশাক এবং চাদর ব্যবহারের আগে সব সময় ধুয়ে নিন। জীবাণুমুক্ত করার জন্য মৃদু এবং কোমল ডিটারজেন্ট ব্যবহার করুন।

নবজাতকের আবহাওয়া থেকে শুরু করে অনেক কারণে শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই না ঘাবড়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। 

Link copied!