দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা। পরিবার পরিজনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে মানুশ ছুটছে গ্রামের দিকে। বাস,ট্রেন বা লঞ্চে করে নানা ভোগান্তির শিকার হয়েও মানুষ থেমে নেই। প্রচণ্ড ভিড় আর ঠেলাঠেলি করে ক্লান্তিকর ও দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে বাড়ি পৌঁছাতে হয়, আবার ছুটি শেষে কাজে যোগদান করতে হয়। সবাই চায় নির্বিঘ্নে আর নিরাপদে ঘরে ফিরতে। ঈদ ভ্রমণে স্বাস্থ্যঝুঁকির খুঁটিনাটি জানা থাকলে ভ্রমণটি হতে পারে আনন্দময়। তাই জেনে রাখুন, কী কী পদক্ষেপ নিলে ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন হবে।
ভ্রমণের জন্য ব্যাগ গোছানো
গোছগাছের ব্যাপারটির সঙ্গে কোথায় যাওয়া হচ্ছে এবং কতদিন থাকতে হবে তা জড়িত। অবশ্যই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ এমনকি ছোটো বাচ্চা বা বয়স্কদের জন্য যা যা দরকার, তা সঙ্গে রাখা উচিত। দরকারি ওষুধপত্র হিসাব করে সঙ্গে নিন। একটা ফার্স্ট এইড ব্যাগও গুছিয়ে নিতে পারেন।
আরামদায়ক পোশাক পরিধান করা
বাইরে প্রচণ্ড গরম আবার যেকোনও সময় বৃষ্টি । তাই আবহাওয়া বুঝে আরামদায়ক ও সহজে বাতাস চলাচল করতে পারে এমন পোশাক পরিধান করুন। যাত্রার সময় নরম জুতা, স্যান্ডেল অথবা কেডস ব্যবহার করুন। একেবারে নতুন জুতা পরে কোথাও রওনা দেবেন না। এতে পায়ে ফোসকা পড়তে পারে। নারীরা হাই হিলের জুতা এড়িয়ে চলুন।
যানবাহনে সতর্কতা
জানালা দিয়ে মাথা বা হাত বের করে রাখবেন না। শিশুরা যেন জানালা দিয়ে মাথা বা হাত বের করে না রাখে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে বাস, ট্রেন বা লঞ্চে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকুন। বাস বা ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করা খুবই বিপজ্জনক, তাই ছাদে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকুন।
খাবার নিয়ে সতর্কতা
বাইরের খাবার এবং পানীয় কোনোভাবেই গ্রহণ করা ঠিক হবে না। ঘরের তৈরি খাবার ও পানির বোতল সঙ্গে নেওয়া উচিত। কিছুক্ষণ পরপর বিশুদ্ধ পানি পান করুন। শিশুদেরও পানি পান করতে উৎসাহিত করুন। এ সময় খাবার ও পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে সচেষ্ট থাকতে হবে।
জরুরি ওষুধ
কিছু কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধ, যেমন শরীরব্যথার জন্য প্যারাসিটামল, ডায়রিয়ার জন্য খাবার স্যালাইন, সাধারণ সর্দি–কাশির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন, পেটব্যথা, পেট ফোলা বা গ্যাসের সমস্যার জন্য সঙ্গে ওষুধ রাখুন। এ ছাড়া তুলা, গজ, ব্যান্ডেজ, অ্যান্টিসেপটিক মলম সঙ্গে রাখুন। শিশুদের বিভিন্ন মেয়াদি অসুখ যেমন: বাতরোগ, অ্যাজমা বা অ্যালার্জির প্রয়োজনীয় ওষুধ নিতেও ভুলবেন না।
দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগছেন যারা তাদের ক্ষেত্রে
যারা বিভিন্ন রোগে ভোগেন, যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হূদেরাগ, বাতরোগ, অ্যাজমা বা অ্যালার্জি, তারা অবশ্যই ঈদভ্রমণে প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে নিতে ভুলবেন না। ইনহেলার, ইনসুলিন ইত্যাদিও সঙ্গে রাখবেন। ডায়াবেটিস রোগীরা লজেন্স, সুগার কিউব সঙ্গে নেবেন। ওষুধ গুলো এমন জায়গায় রাখুন যাতে সহজেই পাওয়া যায়। ছোট ব্যাগে বা হাত ব্যাগে রাখতে পারেন। প্লেনে ভ্রমণ করলে ঘন ঘন পা ম্যাসাজ করতে হবে, না হলে পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস হতে পারে। তারা পায়ে রক্ত জমা প্রতিরোধকারী মোজা পরতে পারেন। যাদের ওজন বেশি, তারাও এ কাজটি করতে পারেন।
শিশুদের জানালার পাশে বসা থেকে বিরত রাখুন
শিশুরা সব সময় জানালার পাশে বসতে চায়। এতে অতিরিক্ত বাতাসের কারণে ভ্রমণের ঠিক পরই তারা আক্রান্ত হয় সর্দি-জ্বর অথবা সাধারণ কাশিতে। তাই শিশুদের জানালার পাশে বসা থেকে বিরত রাখুন। ঝাঁকুনির সময় শিশুকে শক্ত করে ধরে রাখবেন।
বমির প্রবাণতা থাকলে ভ্রমণের আগেই ব্যবস্থা নিন
অনেক শিশুই বাসে বা যানবাহনে উঠলে বমি বমি ভাব হয়। অনেকে বমি করেও ফেলে। সঙ্গে মাথা ঘোরার সমস্যাও থাকতে পারে, যাকে বলে ভ্রমণজনিত ‘মোশন সিকনেস’। যাত্রা শুরুর ৩০ মিনিট আগে ট্যাবলেট বা সিরাপ অটোসিল অথবা স্টিমিটিল জাতীয় ওষুধ খাওয়ালে এই অসুবিধা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এ ছাড়া বাসে, ট্রেনে চলাচলের সময় শিশুদের চোখ বন্ধ করে রাখলে অথবা ঘুমিয়ে পড়লে এই সমস্যা এড়ানো যায়।
বয়স্কদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা
দীর্ঘ ভ্রমণ বয়স্কদের জন্য বেশি কষ্টসাধ্য। বিভিন্ন রোগসহ অনেকেই বাতজ্বর বা আরথ্রাইটিসে ভোগেন। তাদের জন্য বাসে বা ট্রেনে ওঠাও সহজ নয়। তাদের দিকে বাড়তি সতর্কতা নিন। বয়স্করা যাত্রাপথে যেন একই অবস্থায় বেশিক্ষণ বসে না থাকেন, সেদিকে খেয়াল রাখুন। বয়স্কদের প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধ যেমন ইনহেলার, ইনসুলিন, উচ্চরক্তচাপের ওষুধ ইত্যাদি সঙ্গে নিতে ভুলবেন না।
অন্তঃসত্ত্বা নারীর ভ্রমণ
অন্তঃসত্ত্বা নারীরা অতিরিক্ত ঝাঁকুনির পথে ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন। বিশেষ করে প্রথম তিন মাস এবং সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য সময়ের এক মাস আগে থেকে ভ্রমণ এড়িয়ে চলাই ভালো। গর্ভাবস্থায় একাকী ভ্রমণ করবেন না।
অজ্ঞান পার্টি থেকে সাবধান
যাত্রাপথে অজ্ঞান পার্টি ও ছিনতাইকারীদের আনাগোনা বেশি থাকে তাই সতর্ক থাকুন। যানবাহনে অপরিচিত কেউ খাদ্য বা পানীয় দিলে খাবেন না।
জরুরি প্রয়োজনে পরিচিত চিকিৎসক ও ভ্রমণরত এলাকার থানার ফোন নম্বর সঙ্গে রাখুন। পুলিশের সাহায্য নিতে যেকোনো জায়গা থেকে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলেই সুবিধা মিলবে। এ সময় নিজের ও অন্যদের প্রতি সর্বোচ্চ যত্নবান ও সতর্ক থাকলেই ঈদ আনন্দটি সার্থক হতে পারে।