বাতের ব্যথা মূলত আর্থ্রাইটিস নামেও পরিচিত। শরীরের এক বা একাধিক জয়েন্টে প্রদাহের কারণে এটি হতে পারে। বাতের ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে দৈনন্দিন জীবনেও ব্যাঘাত ঘটে। সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এই ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। প্রাথমিক অবস্থায় ব্যথা কমানোর জন্য তাপ এবং ঠান্ডা প্রয়োগ, সঠিক ওষুধ গ্রহণ এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত বলে পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, যোগব্যায়াম এবং প্রাকৃতিক প্রতিকার ব্যবহার করে জীবনমান উন্নত করতে হবে। ব্যথা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, বাতের ব্যথা কমাতে কিছু প্রাথমিক পদক্ষেপ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। যেমন_
ব্যথা কমানোর জন্য তাপ এবং ঠান্ডা প্রয়োগ
বাতের ব্যথা কমানোর জন্য তাপ এবং ঠান্ডা প্রয়োগ একটি কার্যকর উপায়। ঠান্ডা প্রয়োগ মানে আইস প্যাক লাগিয়ে নিলে প্রদাহ এবং ফোলাভাব কমে। যদি ব্যথা তীব্র হয় তবে আইস প্যাক লাগাতে হবে। এটি ১০-১৫ মিনিটের জন্য প্রয়োগ করলেই হবে। অন্যদিকে তাপ প্রয়োগ বা হট প্যাক বা গরম পানির বোতল লাগিয়ে নিলে পেশী শিথিল করবে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়বে। তাপ এবং ঠান্ডার মধ্যে কোনটি বেশি উপকারী হবে তা নির্ভর করবে ব্যথার প্রকৃতি এবং ব্যক্তির অবস্থার উপরে।
মালিশ-ফিজিওথেরাপি
মালিশ বা ম্যাসাজ আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমাতে একটি উপকারী পদ্ধতি। অলিভ অয়েল বা সরিষার তেল ব্যবহার করে আক্রান্ত জায়গায় ধীরে ধীরে মালিশ করলে পেশী এবং জয়েন্টের নমনীয়তা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া ফিজিওথেরাপি বাতের ব্যথা ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একজন পেশাদার ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত ব্যায়াম বা থেরাপি করলে জয়েন্টের নড়াচড়া বাড়ে এবং ব্যথা কমে যায়।
জীবনধারা পরিবর্তন
বাতের ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রে জীবনধারা পরিবর্তন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত ওজন বাতের ব্যথা বাড়াতে পারে, কারণ এটি জয়েন্টের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত হালকা ব্যায়াম (যেমন হাঁটা, সাঁতার কাটা) ওজন কমাতে এবং জয়েন্টের নমনীয়তা বাড়াতে সহায়ক। তবে ব্যায়াম শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস
বাতের ব্যথা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের। এমন কিছু খাবার রয়েছে যা প্রদাহ কমায় এবং জয়েন্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। যেমন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার (মাছ, আখরোট), অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফলমূল (বেরি, ডার্ক চকলেট) এবং ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (দুধ, ডিম) বাতের ব্যথা কমাতে সহায়ক। এছাড়া অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনি, এবং লাল মাংস এড়িয়ে চলা উচিত। এগুলো প্রদাহ বাড়িয়ে দেবে।
যোগব্যায়াম এবং মেডিটেশন
যোগব্যায়াম এবং মেডিটেশন বাতের ব্যথা কমাতে কার্যকর পদ্ধতি। নিয়মিত যোগব্যায়াম করলে শরীরের নমনীয়তা বৃদ্ধি পায়। জয়েন্টের চাপ কমে। তাছাড়া মেডিটেশন মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক, যা পরোক্ষভাবে ব্যথা কমাতে পারে। যেহেতু মানসিক চাপ অনেক সময় ব্যথা বাড়িয়ে দেয়, তাই মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
প্রাকৃতিক প্রতিকার
বাতের ব্যথার জন্য কিছু প্রাকৃতিক প্রতিকারও ব্যবহার করা যেতে পারে। আদা এবং হলুদের মতো মশলা প্রাকৃতিকভাবে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এগুলো খাবারের সঙ্গে যোগ করা যেতে পারে অথবা চা হিসেবে পান করা যেতে পারে। এছাড়া অ্যাপল সিডার ভিনেগার, মধু এবং রসুনও প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ
যদি বাতের ব্যথা তীব্র হয় এবং উপরে উল্লেখিত ঘরোয়া প্রতিকারগুলো কাজ না করে, তবে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বাতের প্রকৃতি এবং তীব্রতা অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা দেন। এছাড়া নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ বাতের ব্যথার তীব্রতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক।
ওষুধের ব্যবহার
বাতের ব্যথা কমানোর জন্য কিছু ওষুধও ব্যবহৃত হয়। সাধারণত পেইন কিলার এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে ব্যবহার করা হয়। প্যারাসিটামল, আইবুপ্রোফেন, বা ডাইক্লোফেনাকের মতো ওষুধ সাধারণত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করা যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এই ওষুধগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।