বর্ষা আসার আগেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। গ্রামে শহরে সবখানেই ডেঙ্গু মশার উপদ্রব যেন বাড়ছেই। এছাড়াও ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত রোগ হওয়ায় দ্রুত সংক্রমণও বেড়ে চলেছে। সাধারণত স্ত্রী এডিস ইজিপ্টি মশার কামড়েই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়। এই মশা দিনের আলোতে কামড়ায়। মশা কামড়ানারোর অন্তত ৩ থেকে ১৪ দিন পরই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয় মানুষ। যা ধীরে ধীরে শরীরে বিভিন্ন অঙ্গেরও ক্ষতি করে।
কয়েকবছর ধরেই এদেশে ডেঙ্গু মহামারি চলছে। বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক ডেঙ্গু মহামারিতে আক্রান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডেঙ্গু প্রতিরোধে টিকা প্রদানের প্রাথমিক অনুমোদর দিয়েছে। তবুও যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন তাদের সঠিক চিকিৎসা এবং সঠিক খাদ্যাভাস জরুরি বলেও জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও ডায়েট চার্টে প্রয়োজনীয় পুষ্টি, ভিটামিন ও সুপারফুড রাখতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ডেঙ্গু প্রতিরোধে এবং দ্রুত সুস্থ করতে কিছু সুপারফুড খাওয়া জরুরি। যেমন—
ভেষজ উপাদান
ভেষজ উপাদান যেকোনো রোগ সারাতেই ভালো উপকারী। একসময় রোগের চিকিৎসা হতো ভেষজ উপাদান দিয়ে। ভেষজ উপাদানে ঔষুধ তৈরি করে খাওয়ানো হতো এবং রোগী দ্রুত সেরে উঠতো। তাই ডেঙ্গু কিংবা যে কোনো ভাইরাস জ্বর প্রতিরোধের জন্য় ভেষজ উপাদান খাদ্যতালিকায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তুলসিপাতা, অশ্বগন্ধা, আদা, আমলা ও অ্যালোভেরা অ্যান্টি ভাইরাল বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। শরীরে ডেঙ্গু রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে এসব উপদান সুপারফুড হতে পারে। এই উপাদানগুলো দিয়ে ভেষজ চা তৈরি করে ঘন ঘন খেতে পারেন। এতে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে।
ফল
অসুস্থ হলে রোগীকে ফল খাওয়ানো হয়। কারণ ফলে দ্রুত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তবে কিছু রোগে ফল খাওয়া নিষেধ। যদিও ডেঙ্গু জ্বরে ফল খাওয়ায় মানা নেই। তবে অন্যান্য ফলের চেয়ে ডালিম, কমলালেবু, পেয়ারা বেশি উপকারী। ডালিম আয়রন সমৃদ্ধ। যা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর রক্তের প্লেটলেটের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে কমলার রস অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। যা ডেঙ্গু ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করে। পেয়ারাও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। এছাড়াও প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি যৌগও আছে এতে। ডেঙ্গু জ্বর হলে এবং শরীরের প্রচণ্ড ব্যথার উপশম করবে পেয়ারা।
পেঁপে পাতা
ডেঙ্গু জ্বরে রোগীর রক্তে প্লাটিলেট কমে যায়। তাই প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়াতে পেঁপে পাতার রস উপকারী। পেঁপের পাতা প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়। যা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করে। তাই ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেই পেঁপে পাতার রস প্রতিদিন খেতে হবে।
ডাবের পানি
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে তরল খাবার বেশি খেতে বলে। আর তরল খাবারের মধ্যে ডাবের পানি সবচেয়ে উপকারী। ডাবের পানি ইলেক্ট্রোলাইট ও অত্যাবশ্যক পুষ্টিসমৃদ্ধ। এটি প্রচণ্ড জ্বরে শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখে।
শাক-সবজি খান
খাওয়া দাওয়া শাক সবজি রাখলে অনেক রোগ থেকেই মুক্তি পাওয়া যায়। বিশেষ করে সবুজ শাক সবজি বেশি খেতে হবে। ব্রোকোলি, পালং শাক ও অন্যান্য সবুজ শাকসবজিতে অপরিহার্য ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে। পাশাপাশি এটি অ্যান্টি অক্সিডেন্টের চমৎকার উৎস। এসব সবজি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
কিউই
ডেঙ্গু রোগীকে কিউই খাওয়ালে উপকার পাবে। এতে রোগীর ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, পলিফেনল ও গ্যালিক অ্যাসিডের মতো অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পাবে। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিবে। এটি নানা ধরনের সংক্রমণও কমায়।
সূত্র: বোল্ডস্কাই