কর্মব্যস্ত এই সময়ে মনোযোগ ধরে রাখা খুব গুরত্বপূর্ণ। মনোযোগ হারালেই ব্যাঘাত ঘটে কাজে। কাজের চাপও কম কিছু নয়। একটা সময়ে গিয়ে মনে হয়, খুব ক্লান্তি আসছে। একঘেয়েমির জেরে কাজে মনও বসে না। ফলে কাজে ভুল ভ্রান্তি হয়ে যায়। যেকোনো কাজে সফলতা অর্জন করতে চাইলে সেই কাজে পুরোপুরি মনোযোগ দেওয়া চাই। তাই কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে নিজেকে উদ্বুদ্ধ রাখা জরুরি। আর এর জন্য কী করবেন জেনে নিন।
শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম
কাজ করতে করতে যদি মনোযোগ হারায় তবে মনোযোগ বাড়ানোর জন্য আগে নিজেকে শান্ত ও স্থির রাখতে হবে। এজন্য শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম খুব উপকারী। এজন্য মেরুদণ্ড সোজা করে বসে লম্বা করে নাকে শ্বাস নিন, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন এবং মুখ দিয়ে নিশ্বাস ছাড়ুন। এভাবে কয়েকবার করুন। দেখবেন আসতে আসতে আপনি স্থির হচ্ছেন ও মনোযোগ আসবে। সকালে বা দিনের কোনো নিদিষ্ট সময় মেডিটেশনের জন্য বরাদ্দ রাখা উচিত।
একসঙ্গে একটিমাত্র কাজই করার চেষ্টা করুন
অনেকেই হয়তো ভাবতে বহুমুখী কর্মদক্ষতা বা একসঙ্গে অনেকগুলো কাজ করার মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি সাফল্য অর্জন সম্ভব। কিন্তু এতে কাজে মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না। অনেকগুলো কাজের ওপর নিজের মনোযোগকে ভাগ করে কাজ করতে গেলে বরং আপনার কাজের গুনগত মান কমে আসবে এবং সময়ও বেশি লাগবে।
তালিকা করে কাজ করুন
সারা দিন কী কী কাজ করবেন, তার একটা তালিকা তৈরি করে নিন। কোন কোন কাজ জরুরি, কোনটা আগে করতে হবে তার ভিত্তিতে তালিকা করুন। তারপর সময়কে ছোট ছোট ভাগে ভেঙে নিন। সেই সময় ধরেই কাজ শেষ করুন। পরে করব বলে কাজ ফেলে রাখলে মন বিক্ষিপ্ত হতে বাধ্য। ফলে কাজে ভুলভ্রান্তি হতেই পারে।
কাজে নির্দিষ্ট সময় পর পর বিরতি নিন
বিশেষজ্ঞরা মনোযোগ বাড়ানোর জন্য শুরুতেই সহজ কিছু করার পরামর্শ দেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি উপযোগী হচ্ছে `পোমোডোরো` মেথড। এই মেথডের মূল কথা হচ্ছে, ২৫ মিনিট এক নাগাড়ে কাজ করে ৫ মিনিটের বিরতি নেওয়া। এভাবে ২৫ মিনিট করে তিনবার কাজ করার পর ২০ মিনিট বিরতি নেওয়া।
শুরু করাটা জরুরি
সুন্দরভাবে শুরু করাটা জরুরি। শুরু করলে ঠিকই পড়া বা কাজ এগিয়ে যায়, কিন্তু অনেক সময় এই শুরুটাই করা হয়ে ওঠে না। তাই আত্মবিশ্বাস নিয়ে শুরু করুন।
ইলেকট্রনিক ডিভাইস কিছু সময়ের জন্য দূরে রাখুন
মোবাইল ফোন, টেলিভিশনের মতো কিছু ডিভাইস কাজে মনোযোগ আনতে সবচেয়ে বেশি বাধা দেয়। জরুরি কাজ ফেলে আমরা মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করে দিই। অথবা ইউটিউবে কোনও ভিডিয়ো দেখে সময় নষ্ট করি। তাই গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু করার আগে ব্যক্তিগত ফোনটি কিছু সময়ের জন্য দূরে রাখাই শ্রেয়।
পর্যাপ্ত ঘুম
পর্যাপ্ত ঘুম খুব জরুরি। তা হলেই মন ও মস্তিষ্কের ক্লান্তি দূর হবে। একজন প্রাপ্তবয়স্কের সারা দিনে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা টানা ঘুম জরুরি বলেই মনে করেন মনোবিদেরা। ঘুম ভালো না হলে অল্পেই ক্লান্তি এসে যাবে। কাজেও মন বসবে না ঠিক করে।
নিজের ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগান
কোনো কাজ যদি সঠিক সময়ে শুরু করতে চান আর সেখান থেকে সফলতার মুখ দেখতে চান তবে কাজে লাগান নিজে ইচ্ছাশক্তিকে। কঠিন ভেবে কোনও কাজ ফেলে রাখবেন না। কঠিন কাজটা এড়িয়ে না গিয়ে সবার আগে তার সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। প্রয়োজনে কারও সহযোগীতা নিন।
সুষম খাবার গ্রহণ
উদ্ভিজ্জ খাবার, সবুজ শাকসবজি ফলমূল গ্রহণে উৎসাহী হোন। বাইরের ভাজা পোড়া, অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার খাদ্যতালিকা থেকে কমানোর চেষ্টা করুন। নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করুন।ওমেগা–৩ যুক্ত খাবার যেমন বাদাম, সামুদ্রিক মাছ মনোযোগ বাড়ায়। কখনোই খালি পেটে কাজ করতে বসবেন না, এতে মনোযোগ ধরে রাখা বেশ কঠিন। কাজ শুরুর আগে হালকা স্ন্যাকস জাতীয় খাবার খেয়ে নিতে পারেন। তবে পেট ভরে যাবেন না, এতে মনোযোগের বদলে চোখ জুড়ে আসবে ঘুম।
শরীরচর্চা
শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করলে আমাদের মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটে। গবেষণায় দেখা গেছে, একই রকম মেধাসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও সারাদিন শুয়ে বসে কাটানো শিক্ষার্থীদের তুলনায় যারা শারীরিক পরিশ্রম করেন, তাদের পরীক্ষায় ফলাফল ভালো হয়। মস্তিষ্কে আরও বেশি যোগাযোগ স্থাপিত হয়।
পানি পান করুন
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না খাওয়ার কারণে সহজেই দেহমনে ক্লান্তি এসে যায় এবং কাজের গতি কমে আসে। যথাযথ তরল ছাড়া মস্তিষ্কও শীর্ষ পারফর্মেন্স দেখাতে পারে না। সুতরাং কাজে মনোযোগ ধরে রাখার জন্য দিনের বেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।