বাংলা নববর্ষ, অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ, বাঙালির জীবনে একটি বিশেষ উৎসব। নতুন বছরের প্রথম দিনে সবাই চায় বন্ধু-পরিবারসহ কোথাও ঘুরে বেড়াতে। বৈশাখ মানেই রঙিন জামা-কাপড়, পান্তা-ইলিশ, শোভাযাত্রা, মেলা, বাউল গান—সব মিলিয়ে এক প্রাণবন্ত পরিবেশ। তবে এই আনন্দঘন পরিবেশেও স্বাস্থ্যের কথা ভুলে গেলে চলবে না। কারণ বৈশাখের এই সময়টাতে গরম ও রোদের তীব্রতা বেশি থাকে। সেই সঙ্গে ভিড়, ধুলোবালি এবং খাবারে অনিয়মের কারণে শারীরিক সমস্যাও হতে পারে।
বাংলা বর্ষবরণে ঘুরাঘুরির সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে শরীর থাকবে সুস্থ, মন থাকবে ফুরফুরে।
সঠিক পোশাক
বৈশাখে সাধারণত প্রচণ্ড গরম থাকে। এই সময় রঙিন জামা-কাপড় পরতে ইচ্ছে করলেও খেয়াল রাখতে হবে পোশাক যেন আরামদায়ক ও হালকা হয়। সুতি বা লিনেন কাপড়ের পোশাক বেছে নিন, যা শরীরের ঘাম সহজে শুষে নেয়। গাঢ় রঙের কাপড়ের পরিবর্তে হালকা রঙের পোশাক পরুন, কারণ এটি গরম কম ধরে। মেয়েরা যদি শাড়ি পরে থাকেন, তবে চেষ্টা করুন হালকা শাড়ি বেছে নিতে, যাতে চলাফেরা সহজ হয়। ছেলেদের ক্ষেত্রে পাঞ্জাবি, ফতুয়া বা কুর্তা বেছে নেওয়া যেতে পারে, তবে আরাম যেন অগ্রাধিকার পায়।
রোদ থেকে নিজেকে রক্ষা করুন
পহেলা বৈশাখের বেশিরভাগ অনুষ্ঠান সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হয়, যখন রোদের তাপ তীব্র থাকে। ছাতা, সানগ্লাস ও ক্যাপ ব্যবহার করুন। বাড়ি থেকে বের হওয়ার ৩০ মিনিট আগে মুখে ও শরীরে সানস্ক্রিন লাগান। রোদে বেশি সময় থাকলে মাঝে মাঝে ছায়ায় বিশ্রাম নিন। শিশু ও বৃদ্ধদের রোদে বেশি সময় থাকতে দেবেন না।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন
গরমে শরীর ঘামার কারণে শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হয়। যা থেকে ক্লান্তি, মাথা ব্যথা, এমনকি হিট স্ট্রোকও হতে পারে। তাই সবসময় সঙ্গে পানির বোতল রাখুন। ফ্যান্সি বেভারেজের পরিবর্তে ডাবের পানি, লেবু পানি, সরবত কিংবা স্যালাইন পান করুন। বাইরে খোলা পানি বা বরফমিশ্রিত পানীয় এড়িয়ে চলুন।
খাবারের বিষয়ে সচেতন থাকুন
বৈশাখ মানেই হরেক রকম খাবার, যেমন_পান্তা-ইলিশ, হালুয়া, পুরি, জিলাপি, ফুচকা, চটপটি ইত্যাদি। এসব খাবার খোলা পরিবেশে বিক্রি হয়। চেষ্টা করুন পরিচ্ছন্ন জায়গা থেকে খাবার খেতে। অতিরিক্ত তেল বা ঝাল খাবার কম খান, কারণ গরমে হজমে সমস্যা হতে পারে। বাসায় তৈরি পান্তা ভাত, ভর্তা, ইলিশ মাছই সবচেয়ে নিরাপদ ও সুস্বাদু হয়। শিশুদের বাইরের খাবার না দিয়ে বাসার হালকা খাবার দিন।
ভিড় এড়িয়ে চলুন
বৈশাখী মেলা ও শোভাযাত্রায় প্রচুর ভিড় হয়। এতে ঠেলাঠেলি, ধুলোবালি এবং ঘাম থেকে নানা অসুবিধা হতে পারে। তাই মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন ধুলোবালি বা ভাইরাস থেকে বাঁচতে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা অ্যালকোহলযুক্ত টিস্যু সঙ্গে রাখুন।
শিশু বা বয়স্কদের ভিড়ের মধ্যে না রাখাই ভালো। চোখ বা মুখে বারবার হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম
অনেকেই বৈশাখের আগের রাত জেগে পোশাক বা সাজগোজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। আবার দিনের পুরো সময় ঘুরে বেড়িয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। এটা একদমই ঠিক নয়। বরং আগের রাতে পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে নেওয়া জরুরি। দিনভর ঘুরাঘুরির মাঝে একটু বিশ্রামের সময় রাখুন। সন্ধ্যার পর ক্লান্ত লাগলে মেলা বা উৎসবে না গিয়ে বিশ্রাম নিন।
প্রয়োজনীয় ওষুধ ও প্রাথমিক চিকিৎসা
যারা ডায়াবেটিস, প্রেসার বা অন্য কোনো রোগে ভুগছেন, তাদের নিয়মিত ওষুধ সঙ্গে রাখা উচিত।
গ্যাসের সমস্যা বা ডায়রিয়ার জন্য ওষুধ নিতে পারেন। ছোটখাটো কাটা-ছেঁড়ার জন্য ব্যান্ডেজ ও অ্যান্টিসেপটিক সঙ্গে রাখুন। শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ আলাদা করে ব্যাগে রাখুন।
সচেতনতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও নিজের স্বাস্থ্যের দিকে একটু খেয়াল রাখলেই বৈশাখের দিনটি হয়ে উঠতে পারে আরও উপভোগ্য।