বাদলার দিনে ঝরো ঝরো বৃষ্টি কার না ভালো লাগে। ঘরে বসে বৃষ্টের ঝড়ে পড়া দেখতে দেখতে পেট জানান দেয় খাওয়ার কথা। তখন গিয়ে খেতে বসে গেলেন সামনে যা আছে তাই দিয়ে। কিন্তু জানেন কী প্রকৃতিতে যখন যা রাজত্ব করে তখন শরীর সুস্থ রাখতে খাদ্যতালিকা হওয়া চাই ঋতু উপযোগী। এমন খাবার খেতে হবে যাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। এসময় নানান রকমের পানি বাহিত রোগ বেড়ে যায়। তাই এসময় খাবার নির্বাচন একটু বুঝেশুনেই করা দরকার।
বর্ষায় সুস্থ থাককে পাতে রাখতে পারেন যেসব খাবার-
কালো গোলমরিচ
ভিটামিন কে, ভিমাতিন ই, ভিটামিন এ, থায়ামিন, রিবোফ্লেভিন, ভিটামিন বি৬, ম্যাংগানিজ, কপার, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সেলেনিয়াম ও জিঙ্ক মেলে কালো গোলমরিচে। গোলমরিচ প্রকৃতির অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হিসেবে ঠান্ডা এবং কাশি নিরাময় করতে সহায়তা করে। এছাড়া গোলমরিচ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, তাই এটি ভালো অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবেও কাজ করে। বর্ষায় হুট করেই ফূসফুসের নানা সংক্রমণ, কাশির প্রবণতা থাকে অনেকেই। তাই এসময় রান্নায় বা স্যুপে হালকা করে গোলমরিচ দিয়ে কেতে পারেন।
লবঙ্গ
১ চামচ গুঁড়া লবঙ্গতে আছে ৬ ক্যালরি, ১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১ গ্রাম ফাইবার, দৈনন্দিন চাহিদার ৩ শতাংশ ভিটামিন সি, ২ শতাংশ ভিটামিন কে এবং ৫৫ শতাংশ ম্যাঙ্গানিজ। এতে কিছু পরিমাণ ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ভিটামিন ই–ও আছে। যাদের ঘন ঘন মাথাব্যথা হয়, যাদের সাইনোসাইটিসের সমস্যা আছে তারা লবঙ্গ চিবিয়ে খেলে উপকার মিলবে। এছাড়া লবঙ্গের চাও পান করতে পারেন।
আচারি খিচুড়ি
খিচুড়ি তো খেয়েছেন নানান ধরণের। নামও ভিন্ন ভিন্ন। এতো সব খিচুড়ির মধ্যে নতুন আরেক ধরণের খিচুড়ির স্বাদ নিতে পারেন। নাম তার আচারি খিচুড়ি। চাল-ডালের মিশ্রণে তৈরি খিচুড়িতে অ্যামাইনো অ্যাসিড সম্পূর্ণরূপে পাওয়া যায়। যা আমাদের দেহ গঠন ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করে। সঙ্গে একটু আচার যোগ করে নিতে পারেন। এসময় অনেকের খাবারে অরুচি তৈরি হয়। আচাড়ি খিচুরি তাদের ক্ষেত্রে উপকারী।
মৌসুমি ফল
বর্ষাকালে নানারকমের ফলমূল পাওয়া যায়, যেমন- আপেল, নাশপাতি, ডালিম, বেরি ইত্যাদি। এগুলো আঁশ, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রাকৃতিক চিনি সমৃদ্ধ। সুস্বাদু হওয়ার পাশাপাশি এসব ফল পুষ্টি উপাদানে ভরপুর।
স্যূপ ও স্টু
বর্ষাকালে উষ্ণ স্বাদ নিতে স্যূপ ও স্টু বেশ উপকারী। সবজি, ডাল ও চর্বিহীন মাংসের তৈরি স্যূপ খেতে মজাদার ও পুষ্টিকর। এটা পেট ভরার পাশাপাশি শরীর আর্দ্র রাখে এবং পুষ্টি যুগিয়ে সার্বিক সুস্থতা নিশ্চিত করে।
- এছাড়া বর্ষাকালে সুস্থ থাকতে ডায়েটে কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার যেমন- হলুদ, তুলসী, আদা, এলাচ রাখা চাই। ত্বকের সুস্থতায় গাজর, টমেটো, ক্যাপসিকাম রাখা যেতে পারে খাদ্যতালিকায়।
- তবে এসময় সবুজ শাকসবজি না খাওয়ায় ভালো। কারণ স্যাঁতসেঁতে এবং আর্দ্র অবস্থা এই সবজি ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য রোগজীবাণুর জন্য একটি আদর্শ প্রজনন স্থল। তাই যেকোনও শাক এসময় না খাওয়াই ভাল। বৃষ্টির কারণে বর্ষায় শাক-পাতা বেশির ভাগ সময়েই ভেজা অবস্থায় থাকে। ভেজা অবস্থার কারণে পাতাযুক্ত শাক সহজেই ময়লা, জীবাণু এবং পোকার ডিম দ্বারা দূষিত হতে পারে। এগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করা কঠিন, ফলে পেটের সংক্রমণ এবং ডায়রিয়ার মতো খাদ্যজনিত অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়তে পারে। এসময় স্যালাড আকারে কাঁচা শাকসবজি খাওয়া অস্বাস্থ্যকর।
- আবার যাদের গরমে ঠান্ডা পানি খাওয়ার অভ্যাস আছে তাদের সেটা বর্জন করাই ভালো। কারণ বর্ষার শুরুতে তা ধরে রাখলে গলা খুসখুস, গা ব্যথা ইত্যাদি সমস্যায় পড়তে পারেন।