একধরনের মেটাবলিক ডিজঅর্ডার হলো ডায়াবেটিস। আমাদের শরীরে যখন ইনসুলিন নষ্ট হয়ে যায় বা ইনসুলিন থেকেও কাজ করতে পারে না তখনই গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। খালি পেটে যদি গ্লুকোজের মাত্রা ৭-এর বেশি থাকে আর খাওয়ার পর যদি ১১-এর বেশি থাকে, তখন সেই অবস্থাকে ডায়াবেটিস বলে।
আমাদের শরীরে এই ইনসুলিন নানান কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তবে বেশিরভাগটাই দায়ী আমাদের অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। তাই আমাদের খাদ্যাভাস ও জীবনধারা কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাসে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ সম্ভব। চলুন ডায়াবেটিস প্রতিরোধের কয়েকটি উপায় জেনে নেই-
- স্থূলতা ডায়াবেটিসের একটি কারণ। অতিরিক্ত ওজন আমাদের শরীরে চর্বির পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। যার কারণে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায়। তাই আমাদের আদর্শ দৈহিক ওজন বজায় রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে ওজন যাতে বিএমআই ১৮.৫ থেকে ২২.৯ কেজি/মি.২।
- শরীরকে কর্মক্ষম রাখুন। প্রতিদিন নিয়ম করে এক ঘন্টা হাটুন। পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। খেলাধুলা বাড়ানো যেতে পারে। এতে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। কারণ, নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে ও রক্তে শর্করা কমায়।
- ডায়াবেটিসের জন্য দায়ী অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস। তাই ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে চাইলে প্রতিদিরেন খাবারে শাকসবজি থাকতেই হবে। এছড়া ভিটামিন সি আছে এমন খাবার, ফাইবার যুক্ত খাবার, ফল, গোটা শস্য এবং চর্বিহীন প্রোটিন রাখতে হবে। তবে অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার, চিনিযুক্ত পানীয় খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে। কারণ অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার শরীরে শর্করা ও ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
- খাবার যতই স্বাস্থ্যকর হোক না কেন খাবার গ্রহণে সচেতন হোন। অতিরিক্ত খাবার গ্রহণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- যাদের পরিবারে ডায়াবেটিস হওয়ার ইতিহাস রয়েছে, তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তাই তাদের বেশি সচেতন থাকতে হবে। এধরণের ঝুঁকিতে যারা আছে তাদের আগেই জীবনযাপনের ধরন পাল্টানো উচিত।
- আমাদের শরীরে দুই ধরণের চর্বি থাকে। একটা স্বাস্থ্যকর চর্বি আরেকটা অস্বাস্থ্যকর চর্বি। স্বাস্থ্যকর চর্বি শরীরের জন্য উপকারী। এক্ষেত্রে অ্যাভোকাডো, অলিভ অয়েল, বাদাম ও চর্বিযুক্ত মাছ থেকে অসম্পৃক্ত চর্বি ব্যবহার করুন। ভালো চর্বি কোলেস্টেরল কমায়।
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি (৭-৮ গ্লাস) পান করুন। শর্করা বা ক্যালোরিবিহীন পানি হলো সেরা। সঙ্গে পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি।
- দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। যার কারণে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায়। তাই মানসিক চাপ কমাতে হবে। এক্ষেত্রে যোগব্যায়াম করতে পারেন।
- শুধুমাত্র ডায়াবেটিস নয়, অনেক রোগের কারণ হতে পারে ধূমপান ও মদ্যপান। তাই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করুন।
- রক্তে চিনির মাত্রার ওপর নজর রাখুন। বয়স ৩৫ বছর হলেই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে।