বিশ্বজুড়ে পুরুষাঙ্গের ক্যানসারে আক্রান্তের হার উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বয়স্করা। এতে মৃত্যুর হারও বেড়ে চলেছে। সাধারণত, বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পুরুষাঙ্গের ক্যানসারের উচ্চ প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি মৃত্যুর হারও বাড়ছে। ইউরোপীয় দেশে বেড়ে চলেছে পুরুষাঙ্গের ক্যানসারের ঘটনা।
জেএমআইআর পাবলিক হেলথ অ্যান্ড সার্ভিল্যান্স জার্নাল বিশ্বের ৪৩টি দেশের পুরুষাঙ্গের ক্যানসারের সর্বশেষ তথ্যসংবলিত বড় মাপের বিশ্লেষণের ফলাফল প্রকাশ করেছে ২০২২ সালে। তাতে দেখা গেছে, ২০০৮ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে পুরুষাঙ্গের ক্যানসারে আক্রান্তের সর্বোচ্চ ঘটনা ঘটেছে পূর্ব আফ্রিকার দেশ উগান্ডায়। যেখানে প্রতি ১ লাখ পুরুষের মধ্যে ২ দশমিক ২ জন আক্রান্ত ছিলেন।
উগান্ডার পরের অবস্থানেই দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। যেখানে প্রতি ১ লাখ পুরুষের মধ্যে ২ দশমিক ১ জন আক্রান্ত। এরপর দক্ষিণ এশিয়ার থাইল্যান্ডে প্রতি ১ লাখ পুরুষের মধ্যে ১ দশমিক ৪ জন আক্রান্ত ছিলেন। এসব দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল মধ্যপ্রাচ্যের কুয়েত। যেখানে প্রতি ১ লাখ পুরুষের মধ্যে শূন্য দশমিক ১ জন আক্রান্ত ছিলেন।
গবেষণাটি করেছিলেন চীনের সান ইয়াত-সেন বিশ্ববিদ্যালয়ের লেইওয়েন ফু ও তিয়ান তিয়ানের নেতৃত্বে একদল গবেষক। তারা বলছেন, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখনও পুরুষাঙ্গের ক্যানসারের উচ্চ প্রকোপ ও মৃত্যুর হার বেশি হলেও বেশির ভাগ ঘটছে ইউরোপীয় দেশগুলোতে।’
গবেষকেরা আরও বলছেন, ইংল্যান্ডে পুরুষাঙ্গের ক্যানসারে আক্রান্তের হার বেড়ে চলেছে। ১৯৭৯ থেকে ২০০৯ সালে প্রতি ১ লাখ পুরুষের মধ্যে ১ দশমিক ১ জন থেকে বেড়ে ১ দশমিক ৩ জনে দাঁড়িয়েছে। আর জার্মানিতে বেড়েছে ৫০ শতাংশ হারে। দেশটিতে ১৯৬১ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে প্রতি ১ লাখ পুরুষের মধ্যে ১ দশমিক ২ জন থেকে বেড়ে ১ দশমিক ৮ জনে দাঁড়িয়েছে।
গ্লোবাল ক্যানসার রেজিস্ট্রি প্রেডিকশন টুলের তথ্য অনুসারে, উচ্চতর ক্যানসার ঝুঁকির কারণে এ বিষয়ে গবেষণা করা হয়েছে। গবেষকরা ধারণা করছেন, বিশ্বব্যাপী পুরুষাঙ্গের ক্যানসারের ঘটনা আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে ৭৭ শতাংশের বেশি বেড়ে যাবে। আর আক্রান্তের বড় ঝুঁকিতে রয়েছেন বয়স্ক পুরুষরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ৬০ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে পুরুষাঙ্গের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা সবচেয়ে বেশি।
যে কারণে পুরুষাঙ্গের ক্যানসার
এসব পরিসংখ্যান আর ঝুঁকির বিশ্লেষণ শেষে একটাই প্রশ্ন, পুরুষাঙ্গের ক্যানসারের পেছনের কারণ কী? কেনই বা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এমন কৌতুহলের জবাব দিয়েছেন ফ্রিমলি হেলথ এনএইচএস ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের ইউরোলজি বিভাগের ক্লিনিক্যাল লিড নিল বারবার। তিনি বলেছেন, “মূলত অরক্ষিত শারীরিক সংসর্গ, বিশেষত কনডম ব্যবহার না করা এবং দুর্বল স্বাস্থ্যবিধি পুরুষাঙ্গের ক্যানসার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।”
লক্ষণ
একটি ঘা দিয়ে পুরুষাঙ্গের ক্যানসারের লক্ষণ শুরু হয়। যা কিছুতেই নিরাময় হয় না। সেই ঘা থেকে তীব্র গন্ধযুক্ত স্রাব বের হতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে আবার রক্তপাতও হয়। এতে পুরুষাঙ্গের রং পরিবর্তিত হয়ে যায়।
চিকিৎসা
পুরুষাঙ্গের ক্যানসার প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ক্ষত অপসারণ, রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপির মতো চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হওয়ার ভালো সম্ভাবনা থাকে। তবে যদি চিকিৎসা করা না হয়, তাহলে পুরুষাঙ্গের আংশিক বা সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ এবং আশপাশের যেমন অণ্ডকোষও কেটে ফেলার প্রয়োজন হতে পারে।
পুরুষাঙ্গের ক্যানসার আক্রান্ত ব্রাজিলে জোয়াও তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “এটা এমন একধরনের ক্যানসার, যা নিয়ে আপনি মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। কারণ, মানুষ এটি নিয়ে রসিকতা করতে পারে।”