চোখ দিয়ে আমরা চারপাশের সৌন্দর্যকে উপভোগ করি। চোখের জ্যোতি ভালো থাকলে খালি চোখেই সবকিছু দেখা যায়। নয়তো চোখের সমস্যা চশমা পড়তে হয়। কিংবা চোখের লেন্স বদলে নিতে হয়। সাধারণত চোখের মধ্যে প্রাকৃতিক লেন্স বা হিউম্যান লেন্স থাকে। যা আলোর প্রতিসরণের মাধ্যমে দেখার কাজে সহায়তা করে। বয়স বাড়লে কিংবা কোনো রোগের কারণে ধীরে ধীরে চোখের এই প্রাকৃতিক লেন্স অস্বচ্ছ বা ঘোলাটে হয়ে যেতে পারে। সেটাকেই চোখে ছানি বলা হয়। চোখে ছানি পড়লে তা অপারেশনের মাধ্যমে অপসারণ করতে হয়। নতুন লেন্স চোখে বসিয়ে দেওয়া হয়। যা দিয়ে আবারও স্বচ্ছভাবে দেখতে পারে মানুষ।
বিভিন্ন কারণে ছানি পড়তে পারে। বয়সজনিত ছানি বা সেনাইল ক্যাটারেক্ট, আঘাতজনিত ছানি (ট্রমাটিক ক্যাটারেক্ট), চোখের প্রদাহ, বিভিন্ন ধরনের রেডিয়েশনের কারণে কমপ্লিকেটেড ছানি, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য মেটাবলিক ডিজঅর্ডারজনিত ছানি এবং কনজেনিটাল ক্যাটারেক্ট বা জন্মগত ছানি।
চোখে সফল অস্ত্রোপচারের পর রোগী দৃষ্টি ফিরে পায়। চোখ খুবই স্পর্শকাতর। তাই চোখের ছানি অপারেশন করলেও খুবই সাবধান থাকতে হয়। অপারেশনের পর কিছু ভুলের কারণে চোখ স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই চোখের ছানি অস্ত্রোপচারের পর কিছু বিষয়ে সচেতনতা প্রয়োজন।
- ছানি অপারেশনের পর কয়েক সপ্তাহ পোস্টঅপারেটিভ কেয়ারে থাকতে হয়। চোখে নিয়মমাফিক ওষুধ দিতে হয়। কালো চশমা পরতে হয়।
- সবচেয়ে সতর্ক থাকতে হয় যেন চোখে পানি না যায়। আবার উপুড় হয়ে বা নিচের দিকে তাকিয়ে কোনো কাজ করাতেও নিষেধাজ্ঞা থাকে।
- ছানি অপারেশনের পর চোখে পানি লাগানো নিষেধ। বিশেষ করে ময়লা পানিতে চোখ ধোয়া বা গোসল করা যায় না। এতে চোখে সংক্রমণ হতে পারে। স্থায়ীভাবে চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- এছাড়াও ডায়াবেটিসের রোগীরা ছানি অপারেশনের পরবর্তী সময়ে হাঁটাহাঁটি না করার কারণে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে। যা নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে চোখ ভালো নিরাময় হয় না।
- অপারেশনের ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত গোসল করা যাবে না। কিংবা গোসল করলেও চোখে পানি যেন না লাগে তা খেয়াল রাখতে হবে।
- চোখে কোনো ধরণের অস্বস্তিবোধ হলেও আঙুল দিয়ে ঘষা যাবে না। চোখ দিয়ে পরিষ্কার ও স্বচ্ছভাবে না দেখা পর্যন্ত গাড়ি ড্রাইভ করা যাবে না। এছাড়াও অপারেশনের অন্তত এক মাস পর পর্যন্ত চোখে কোনো মেকআপ ব্যবহার করা যাবে না। আর ভারী কোনো ব্যায়াম করা থেকেও বিরত থাকতে হবে।
- অস্ত্রোপচারের পর হঠাৎ প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হলে বা চোখ অতিরিক্ত লাল হলে কিংবা দৃষ্টি কমে গেলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।