বিদেশী ফল হলেও আমাদের দেশে এখন বেশ ভালো মানের কমলা পাওয়া যায়। মৌসুমি ফলগুলোর মধ্যে কমলা অন্যতম। টসটসে রসে ভরা, টকমিষ্টি স্বাদের কমলার রূপও কিন্তু নজরকাড়া। কোথাও কমলা রঙের ছিটেফোটাও যদি থাকে সবার আগে সেটিই নজরে আসে।
যদিও শীতকালীন ফল হিসেবেই এটি চিনতো সবাই কিন্তু এখন সারাবছরই পাওয়া যায় বাজারে। উল্লেখযোগ্য ব্যপার হলো এই ফল শুধু রূপে নয় গুণের শেষ নেই। আজ জানিয়ে দেব জনপ্রিয় এই ফলের কিছু পুষ্টিগুণ ও উপাকরিতা-
পুষ্টিগুণ
গবেষণায় উঠে এসছে, একটি মাঝারি আকারের কমলায় ৬২ ক্যালরি থাকে। ভিটামিন সি থাকে ৯৩ শতাংশ, ফাইবার থাকে ১১ শতাংশ, ফোলেট থাকে ১০ শতাংশ, ভিটামিন বি১ ৯ শতাংশ, কপার-পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম থাকে যথাক্রমে ৭, ৫ ও ৫ শতাংশ।
সব মিলিয়ে কমলা একটি দারুণ স্বাস্থ্যকর ফল। কমলার প্রায় ৮৭ শতাংশই পানি। আর শীতে যখন আমরা পানি পানে খুব অনাগ্রহী, তখন এই ফল আপনার শরীরের পানীর ঘাটতি মেটাবে।কমলায় থাকা প্রচুর আঁশ বাওয়েল মুভমেন্ট ভালো রাখে ও ক্ষুধা মেটায়। আর ওজন কমাতে হজম ঠিক রাখা কিন্তু খুব জরুরি।
কমলায় থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন বাড়ায়, তেমনি ত্বকের যত্নেও খুব উপকারী এটি। কমলা শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত কোষ পুনঃগঠনে সহায়তা করে। কমলার রসে থাকা ভিটামিন ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
উপকারিতা
প্রদাহ সারাতে কার্যকর
রক্তে থাকা ক্ষতিকর ও প্রোদাহজনক মৌল থেকে রক্ষা করে ভিটামিন সি। সাইট্রাস জাতীয় ফলে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে। আর কমলা হচ্ছে ভিটামিন সির অন্যতম উৎস।
ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে
কমলায় রয়েছে নারিজেনিনের মতো বায়োঅ্যাক্টিভ উপাদান যা উন্নত মানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিইনফ্লামাটর। এছাড়া রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে শরীরের অক্সিজেনের অণু স্থিতিশীল করতে এবং ফ্রি রাডিক্যালস নিষ্ক্রিয় করতে সাহায্য করে।
এই নিষ্ক্রিয় করার ক্ষমতার কারণে ত্বক পরিষ্কার হয় এবং বয়সের ছাপ সহজে পড়ে না। তাছাড়া ত্বক ভিতর থেকে উজ্জ্বল করতেও সাহায্য করে কমলা। তাই একটু বেশি বয়সি মহিলাদের জন্য কমলা খুবই উপকারী।
ত্বকের জন্য ভালো
কমলার ভিটামিন ত্বক নমীয়, কোমল এবং সুন্দর করতে সাহায্য করে। প্রসাধনী সামগ্রী তৈরি করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কমলা ব্যবহার করে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
কমলা ক্যালরি ফ্রি ফল হিসেবে পরিচিত, আর এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। তাই কমলার পুষ্টি উপাদানগুলো শরীরের বাড়তি মেদ কমাতে সাহায্য করে। মানুষের জন্য অত্যাবশ্যক পুষ্টি যেমন থিয়ামাইন, নিয়াসিন, ভিটামিন বি সিক্স, ম্যাগনেশিয়াম এবং কপার রয়েছে কমলায়।
ওষুধ শোষণ
শরীরে ওষুধ গ্রহণে সাহায্য করে কমলা। এই ফলের রস ওষুধের বায়োকেমিক্যাল ও সাইকলজিকাল প্রভাব শরীরে গ্রহণের মাধ্যমে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে।
দৃষ্টিশক্তি
চোখের জন্য ভিটামিন এ দরকার। আর কমলায় বেশ ভালো পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে।
হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করে
কমলায় আছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ উপাদান যা হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি নিয়মিত রাখতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম এবং ক্যালশিয়ামের মতো খনিজ উপাদানগুলো শরীরে সোডিয়ামের প্রভাব নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন ঠিক রাখতে সাহায্য করে। কমলার চর্বিহীণ আঁশ, সোডিয়াম মুক্ত এবং কোলেস্টেরল মুক্ত উপাদানগুলো হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে।
ক্যান্সার প্রতিরোধক
- কমলায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিনের পাশাপাশি রয়েছে আলফা ও বেটা ক্যারোটিনের মতো ফ্ল্যাভনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- কমলার উচ্চমাত্রার পুষ্টিগুণ হচ্ছে ফ্ল্যাভনয়েড যা ফুসফুস এবং ক্যাভিটি ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর।
শর্করা নিয়ন্ত্রণ
কমলার খোসায় চিনির পরিমাণ নেই বললেই চলে, তাই এটা রক্তে শর্করার মাত্রায় প্রভাব ফেলে। ডায়াবেটিস ও মেটাবলিক সিন্ড্রম রোগীদের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রেণ রাখতে হয়। তাই কমলার পুষ্টিগুণ ডায়াবেটিসে রোগীর জন্য উপকারী।