শরীরের জন্য পানি একটি অপরিহার্য উপাদান। খাবার হজম, শরীরের বিপাক হার নিয়ন্ত্রণ, ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স ইত্যাদি শরীরের সব কাজেই পানি প্রয়োজন। তবে তাই বলে একজন মানুষ যখন খুশি যতটুকু খুশি ঢকঢক করে পানি পান করবে না। একজন মানুষের কতটুকু পানি প্রয়োজন, তা তার শারীরিক অবস্থা, পরিশ্রম, আবহাওয়া ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে।
কিন্তু শুধু পর্যাপ্ত পানি পান করলেই হবে না, আমরা সবাই পানি পানের সময় কিছু সাধারণ ভুল করে থাকি, যা আমাদের সমস্যায় ফেলতে পারে। আর এই পানি খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
- বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা যখন শিশুকে খাওয়াতে বসি সঙ্গে পানি নিয়ে বসেন। খাওয়ার মাঝখানে পানি খাওয়ান। কিংবা বাচ্চা খেতে না চাইলেও পানি দিয়ে খাবার খাওয়ান। এরকম কাজ বড়রাও করে থাকে। খাওয়ার মাঝে পানি খাওয়া কিংবা খাওয়া শেষ হলেই পানি খেয়ে নেয়। এসব কিছুই আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতির। কারণ খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি খেলে হজমের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। সাধারণত আমরা যখন আমরা খাবার খাই, তখন হজমপ্রক্রিয়ার জন্য আমাদের শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে এসময় পানি পানে গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রসকে পাতলা করে দেয়। তাতে পেট ফাঁপা, গ্যাস ও অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা দেখা দেয়।
- অনেকেই দাঁড়িয়ে পানি পান করেন। দাঁড়িয়ে পানি পান করলে তা সরাসরি পাকস্থলীতে গিয়ে আঘাত করে। স্টমাক থেকে নিঃসৃত অ্যাসিডের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়, নার্ভ উত্তেজিত হয়ে যায়, উদ্বেগ বাড়তে থাকে। এমনকি কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কিডনি সঠিকভাবে ছাঁকনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে না দাঁড়িয়ে পানি পান করলে। এতে কিডনির কর্মক্ষমতা কমে।
- বাইরে থেকে ফিরলেন, প্রচন্ড তৃষ্ণায় ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলেন। কিন্তু জানেন কী এভাবে নিজের কত ক্ষতি করছেন? কারণ এভাবে পানি পান করলে শরীর তা ঠিকভাবে শোষণ করতে পারে না। এর ফলে কোনো কাজ না করে তা প্রস্রাব আকারে বের হয়ে যায়। তাই পানি অল্প অল্প করে চুমুক দিয়ে পান করুন। প্রয়োজনে বড় ছিপির পরিবর্তে ছোট ছিপিযুক্ত বোতল ব্যবহার করুন।
- পানি পান করা জরুরি বলে অনেকে আবার বেশি বেশি করে ফেলেন। কিন্তু অতিরিক্ত পানি পানের কোনো উপকারিতা নেই। বরং ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। ইলেক্ট্রোলাইটগুলো পাতলা হয়ে যায় বলে শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে যায়। শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ হ্রাস বা বৃদ্ধি অনেক ক্ষতিকর। এতে দুর্বলতা, খিঁচুনি এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা তৈরি হয়।
- ঠান্ডা পানি খাওয়ার ফলে গলাব্যথা, রক্তনালি সংকুচিত হওয়াসহ বদহজমের মতো সমস্যা সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া জয়েন্টে ব্যথা ও হৃৎস্পন্দন কমে যাওয়ার সমস্যাও দেখা যায় ঠান্ডা পানি পান করার ফলে। তাই স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি পান করুন। কুসুম-গরম পানি হলে আরও ভালো।