মেন্সট্রুয়াল কাপ নামটির সঙ্গে ইতোমধ্যে অনেকেই পরিচিত। আগে মেয়েরা পিরিয়ড চলাকালে কাপড় ব্যবহার করত। এরপর আসলো স্যানিটারি ন্যাপকিন, ট্যাম্পন। কালের পরিক্রমায় পিরিয়ডের দিনগুলো আরও স্বস্থি নিয়ে এসেছে মেনস্ট্রুয়াল কাপ। এটি যেমন স্বস্থিকর তেমনি পরিবেশবান্ধবও। তবে পিরিয়ডের সময় ব্যবহৃত অন্যান্য সবকিছুর তুলনায় মেন্সট্রুয়াল কাপ আরামদায়ক হলেও এটি নিয়ে ভীতি এবং ভ্রান্তি রয়েছে এদেশের নারীদের মধ্যে। ফলে তারা এটি ব্যবহার করতে চান না বা ভয় পান। তাই সবার আগে মেনস্ট্রুয়াল কাপ নিয়ে কয়েকটি ভ্রান্ত ধারণা দূর করুন।
হাইমেন পর্দা ছিঁড়ে যায়
অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা আছে যে মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারে হাইমেন পর্দা ছিঁড়ে যায়, ফলে ভার্জিনিটি নষ্ট হয়। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। কারণ, কাপটি যোনিপথের সামনের দিকেই থাকে, হাইমেন পর্দার কাছেও যায় না। তাই ছেঁড়ার প্রশ্নই ওঠে না।
ব্যবহারে ভয়
অনেকেই মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারে ভয় পায়। তারা মনে করে মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করলে প্রস্রাবের সময়ে অস্বস্তি হয়। এই ধরনের কাপ এমন ভাবেই বানানো হয় যাতে সেটি শক্ত হয়ে যোনিতে আটকে থাকে। তাই মলমূত্র ত্যাগ করার সময়ে তা খুলে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা অনেকটাই কম।
যোনিপথে শরীরে ঢুকে যাওয়া ভয়
মেন্সট্রুয়াল কাপ যোনীপথে সেট করলে কোথাও হারিয়ে যাবে। সার্জারি করে বের করতে হবে। এরকম ভয় পান অনেকেই। এটিও সঠিক নয়। নারীদের যোনিপথ ৩-৬ ইঞ্চি লম্বা হয়। যার শেষপ্রান্তে জরায়ু অবস্থিত। অর্থাৎ, যোনীপথের সামনের দিকটিই খোলা। ফলে হারিয়ে যাওয়ার ভয় নেই।
ব্যবহার করা অস্বস্তির
মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করা নিয়ে অনেকের মনেই ভীতি থাকে। তবে এটি ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি এক বার জেনে গেলে মোটেই অস্বস্তি হয় না। প্রথম দিকে একটু অস্বস্তি মনে হলেও কয়েকদিন ব্যবহারে স্বস্তিদায়ক মনে হয়। সি-এর আকৃতিতে মেনস্ট্রুয়াল কাপ ভাঁজ করে যোনিপথে প্রবেশ করাতে হয়। প্রবেশ করানোর পর নিজে থেকেই কাপের ভাঁজ খুলে যায়। সাঁতার কাটা থেকে ভারী শরীরচর্চা— ‘মেনস্ট্রুয়াল কাপ’ পরে সব কাজই করা যেতে পারে। রাতে শোয়ার সময়েও নিশ্চিন্তে এই কাপ ব্যবহার করতে পারেন।
যোনিতে সংক্রমণের ঝুঁকি
যাদের এলার্জি বা এধরণের সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারে যোনির চারপাশে র্যাশ বেরিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হয়। কিন্তু মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহারের সময়ে যোনিতে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই কম। স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের মেনস্ট্রুয়াল কাপ যোনির ভিতরে থাকে। তাই র্যাশ বেরোনোর কোনও ভয় নেই। তবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।
দাম বেশি
আপত দৃষ্টিতে মেনস্ট্রুয়াল কাপের দাম বেশি। একটা কাপের দাম কোম্পানি ভেদে হাজারের বেশি। কিন্তু দেড়শো দিয়েই কেনা যায় স্যানিটারি ন্যাপকিন। তবে মেনস্ট্রুয়াল কাপ পুনর্ব্যবহারযোগ্য। প্রতি মাসে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে গড়ে ১৫০-২০০ টাকা হলে বছরে খরচ হয় ১৮০০-২৪০০ টাকা। ৫ বছরে খরচ হয় কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা। আর একটি মেন্সট্রুয়াল কাপ কিনতে পারবেন ৮০০-২০০০ টাকার মধ্যে, যা ব্যবহার করা যায় একটানা ৮-১০ বছর। এদিক থেকে মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহার সাশ্রয়ী।
তবে মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় সর্তক না হলে ইনফেকশন হতে পারে। তাই প্রথমবার ব্যবহারের সময় ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। কাপ কীভাবে ব্যবহার করতে হবে সেই সম্পর্কে আগে ভালোভাবে ধারণা নিতে হবে। কার ফ্লো কেমন তার উপর নির্ভর করে কাপ চেঞ্জ করতে হবে। অবশ্যই মেন্সট্রুয়াল কাপের মেয়াদ কতদিন আছে সেটি দেখে ততদিন তা ব্যবহার করতে হবে।