আফ্রিকার কয়েকটি দেশে কিছুটা স্মলপক্সের মতো এক ধরণের সংক্রমণ জনিত রোগের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আফ্রিকার দেশ কঙ্গোতে প্রথম শনাক্ত হলেও বর্তমানে বুরুন্ডি, উগান্ডা, রুয়ান্ডা, কেনিয়া ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে ইউরোপের সুইডেন ও এশিয়ার পাকিস্তানেও। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিইএইচও)।
মাঙ্কিপক্সের ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয়েছিল একটি বানরের শরীরে। এ কারণেই এটি ‘মাঙ্কিপক্স’ নামে পরিচিতি পায়। এটি স্মলপক্স বা গুটিবসন্তের জন্য দায়ী ভাইরাসের একই শ্রেণিভুক্ত। তবে তা গুটিবসন্তের ভাইরাসের চেয়ে অনেকটাই কম ক্ষতিকর। মাঙ্কিপক্স শুধু বানর নয়, ইঁদুর, বন্য কুকুর, কাঠবিড়ালি ও খরগোশের শরীর থেকেও ছড়ায়। এমনকি মানুষের শরীর থেকেও ছড়ায় মাঙ্কিপক্স। ত্বকের ফোসকা সম্পূর্ণরূপে ভালো না হওয়া পর্যন্ত আক্রান্ত ব্যক্তি অন্যদের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে লক্ষণ দেখা দেওয়ার এক থেকে চার দিন আগে থেকেই অন্যদের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারে।
যেভাবে ছড়ায়
এমপক্স শরীরে প্রবেশ করে ভঙ্গুর ত্বক, শ্বাসপ্রশ্বাস, চোখ, নাক বা মুখের মধ্য দিয়ে। এমপক্স আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে গেলে এটি ছড়ায়। যেমন-
- সংক্রমিত ব্যক্তির সরাসরি যেকোনো ধরনের সংস্পর্শ বা যৌন সম্পর্ক করলে
- সংক্রমিত ব্যক্তির ত্বকের সংস্পর্শে
- সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহার করা কাপড়, সুই বা অন্যান্য জিনিসপত্রের মাধ্যমে
- কথা বলা বা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।
- ম্যাঙ্কিপক্সে সংক্রমিত ব্যাক্তি যদি গর্ভবতী হয় তাহলে তার থেকে তাদের অনাগত শিশুর কাছেও ভাইরাসটি যেতে পারে।
- এমনকি আক্রান্ত প্রাণীর মাংস যদি কম তাপমাত্রায় রান্না করে খাওয়া হয় তাতেও সংক্রমিত হতে পারে।
উপসর্গ
প্রাথমিক পর্যায়ে জ্বর, মাথাব্যথা, পিঠে ব্যথা, মাংসপেশিতে টান দেখা দিতে পারে। এছাড়াও এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বরের পাশাপাশি শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুরুতে মুখে ফুসকুড়ি ওঠে। পরে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে হাতের তালু ও পায়ের তলায়। ফুসকুড়িগুলো অত্যন্ত চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। পরবর্তীতে পুঁজ ও ক্ষত সৃষ্টি হয়। সাধারণত এ সংক্রমণ নিজে থেকে সেরে ওঠে এবং তা ১৪ থেকে ২১ দিন স্থায়ী হয়। গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে সারা শরীর, বিশেষ করে মুখমণ্ডল, চোখ ও যৌনাঙ্গে ক্ষত দাগ দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা
এই রোগের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। চিকিৎসকের পরামর্শে জ্বর, মাথাব্যথা বা অন্যান্য সমস্যার জন্য ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। তবে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করে আইসোলেশনে রেখে ক্ষত না শুকানো পর্যন্ত চিকিৎসা করা গেলে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা কমে যাবে। যেসব দেশে ঝুঁকি বেশি তাদের গুটিবসন্তের টিকা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। গুটিবসন্তের টিকা মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে ৮৫ শতাংশ কাজ করে।