• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩০, ২৮ শা'বান ১৪৪৬

ডায়াবেটিসের রোগীরা রোজা রাখার আগে জেনে নিন


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৫, ০৮:২২ পিএম
ডায়াবেটিসের রোগীরা রোজা রাখার আগে জেনে নিন
সূত্র: সংগৃহীত

রোজা মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় দায়িত্ব। তবে ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য রোজা রাখা কিছুটা চ্যালেঞ্জের হতে পারে। রোজা রেখে দীর্ঘক্ষণ খাবার ও পানি না খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ কমে যাওয়া (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) কিংবা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার (হাইপারগ্লাইসেমিয়া) মতো  জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই ডায়াবেটিসের রোগীদের রোজা রাখার আগে সঠিক প্রস্তুতি ও সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।

চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ

রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক রোগীর  ডায়াবেটিসের ধরণ, নিয়ন্ত্রণের অবস্থা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলো বিবেচনা করে রোজা রাখা নিরাপদ কিনা তা মূল্যায়ন করবেন। বিশেষ করে যাদের কিছু সমস্যা থাকে তাদের রোজা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। বারবার হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়া, হাইপারগ্লাইসেমিয়া বা ডায়াবেটিক কিটো এসিডোসিসের ইতিহাস থাকলে, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস, কিডনিজনিত সমস্যা, হৃদযন্ত্র বা চোখের জটিলতা থাকলে রোজা রাখার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।

ওষুধের সময়সূচী ও ডোজ পরিবর্তন

রোজার সময় ডায়াবেটিসের ওষুধের সময়সূচী ও ডোজ পরিবর্তন করা প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষ করে  যারা ইনসুলিন নেন, তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। সাধারণত সেহরির আগে ও ইফতারের পর ওষুধ গ্রহণের সময় নির্ধারণ করা হয়। দ্রুত কাজ করে এমন ইনসুলিনের পরিবর্তে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে এমন ইনসুলিন ব্যবহার করতে হবে। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি এড়াতে ওষুধের ডোজ কমানো হতে পারে। চিকিৎসকের নির্দেশনা ছাড়া ওষুধের ডোজ পরিবর্তন করা উচিত নয়।

খাদ্য পরিকল্পনা

রোজার সময় সঠিক খাদ্য পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাহরিতে ধীরে হজম হয় এমন জটিল শর্করা (যেমন ওটস, বাদাম, লাল আটা, সবজি) খেতে পারেন।  যা রোজার সময় দীর্ঘক্ষণ শক্তি জোগাবে। অতিরিক্ত লবণ ও তেলযুক্ত খাবার একেবারেই খাবেন না। ইফতারে খুব বেশি মিষ্টি বা তেলযুক্ত খাবার না খেয়ে, খেজুর দিয়ে রোজা ভাঙুন। এরপর হালকা খাবার গ্রহণ করতে পারেন। ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। চা, কফি বা কোল্ড ড্রিংক এড়িয়ে চলুন। এগুলো ডিহাইড্রেশন বাড়িয়ে দেবে।

রক্তে শর্করা নিয়মিত পরিমাপ

রোজার সময় রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরিমাপ করা অত্যন্ত জরুরি। রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করুন। রোজার সময় যদি রক্তে শর্করার মাত্রা ৭০ মিগ্রা/ডেসি লিটারের কম হয় বা ৩০০ মিগ্রা/ডেসি লিটারের বেশি হয়, তাহলে রোজা ভাঙতে হতে পারে। ইফতারের পর অতিরিক্ত শর্করা বেড়ে যাচ্ছে কি না তা নিশ্চিত হতে ইফতারের পর গ্লুকোজ পরীক্ষা করুন।

শারীরিক কর্মকাণ্ড ও ব্যায়াম

রোজার সময় অতিরিক্ত পরিশ্রম বা ভারী ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন। এতে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি বাড়বে। ইফতারের পর হালকা হাঁটা উপকারী হতে পারে।

হাইপোগ্লাইসেমিয়া ও হাইপারগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ

রোগীদের হাইপোগ্লাইসেমিয়া ও হাইপারগ্লাইসেমিয়ার উপসর্গ সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন। হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে ঘাম, দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, হাত কাঁপা, দৃষ্টি ঝাপসা ও বিভ্রান্তি হতে পারে। হাইপারগ্লাইসেমিয়া হলে অতিরিক্ত পিপাসা, ঘন ঘন প্রস্রাব, ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে রোজা ভাঙা এবং দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

রোজা ভাঙার সিদ্ধান্ত

স্বাস্থ্য জীবন থেকে গুরুত্বপূর্ণ। যদি রোজার সময় অস্বাভাবিক কোনো শারীরিক সমস্যা অনুভব করেন, তবে ইসলাম ধর্মেও অসুস্থ অবস্থায় রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোজা ভাঙার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য রোজা রাখা সতর্কতার সঙ্গে করলে নিরাপদ হতে পারে। তবে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যগত অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ, সঠিক খাদ্য পরিকল্পনা, ওষুধের সময়সূচী ঠিক রাখা  এবং নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা মাপা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Link copied!