শরীরের কোথাও ব্যথা হলে সাধারণত আমরা নানা রকম পেইন কিলার বা ব্যথানাশক ঔষধ খেয়ে থাকি। তবে এসব ওষুধের গ্যাস্ট্রিক আলসারেশন এবং কিছু ক্ষেত্রে মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন এবং স্ট্রোকের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও থাকতে পারে বলে গবেষকরা বলছেন। তবে ব্যথানাশক ঔষধ ছাড়া ব্যথা দূর করতে পারবেন আপনার রান্না ঘরে থাকা উপাদান দিয়েই। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রাকৃতিক ব্যথানাশক ব্যবহারে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এতে একদিকে যেমন ব্যথা সেরে যায়, তেমনি স্বাস্থ্য থাকে ভালো। চলুন জেনে নেই সেসব প্রাকৃতিক ঔষধ সম্পর্কে-
আদা
রান্নার নানা পদে ব্যবহার হয় আদা। রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ে আদা প্রাচীনকাল থেকে জনপ্রিয়। পুষ্টিবিদরা আদাকে প্রকৃতির প্রদাহ বিরোধী যোদ্ধা হিসাবে উল্লেখ করেছেন। শক্তিশালী যৌগ দিয়ে পূর্ণ আদা প্রদাহ কমায়। আদার উপাদানগুলো পেশির কাজে গতি আনে। আবার ব্যথা প্রশমনেও কার্যকর। একই সঙ্গে হাড়ের সংযোগস্থলগুলোর ব্যথাও দূর করতে পারে। অনেক কারণে মানুষ মানসিক চাপ ও অস্থিরতায় ভুগে, মানসিক চাপ কমাতেও আদা গুরত্বপোর্ণ ভূমিকা রাখে। ব্যথা নাশ করার পাশাপাশি আদার আরও কিছু গুণ আছে। খাওয়ার পরে হজমে সমস্যা হলে আদা বা আদা চা খেতে পারেন। শ্বাসকষ্টের বিরুদ্ধে লড়াই করার অসাধারণ এক ক্ষমতা আছে আদা বুকে কফ জমে বা ঠান্ডা লেগে যাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেয়, তাদের জন্য প্রাকৃতিক ওষুধ হলো আদা। রক্ত সঞ্চালনের গতিকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাকেও বাড়িয়ে দিতে পারে এই মসলা।
চেরি
প্রাকৃতিক ব্যথানাশক চেরি। চেরিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান প্রদাহবিরোধী হিসেবে কাজ করে এবং ব্যথা উপশম করে। এই ফল বাতের ব্যথায়ও উপশম করে। এছাড়া চেরি শরীরের উপকারী সেলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।
হলুদ
হলুদের ব্যথানাশক ভূমিকার কথা সবাই জানে। হলুদে থাকা কুরকুমিন নামের উপাদান প্রদাহবিরোধী হিসেবে কাজ করে। আর এই উপাদান অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে। অস্থিসন্ধির ব্যথা বা পেশির ব্যথা উপশম করতে পারে হলুদ। কাঁচা হলুদই হোক আর গুঁড়া হলুদ, দুটোরই আছে গুণ। প্রতিদিন এক গ্লাস হালকা গরম দুধের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন দ্রুতই। হলুদ হজমের জন্যও খুব উপকারী। হলুদের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
লাল আঙুর
আঙুরে রয়েছে ভিটামিন কে, সি, বি১, বি৬ এবং খনিজ পদার্থ ম্যাংগানিজ ও পটাশিয়াম এবং রেসভেরাট্রল নামের একধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ থাকে। এই যৌগের প্রভাবে কোমরব্যথা বা অস্থিসন্ধির ব্যথা সারাতে কাজ করে। চোখ ভালো রাখতে কার্যকর এই ফল। আঙুরের ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস নিয়মিত রক্ত সঞ্চালনের সহায়ক ও ইনসুলিন বৃদ্ধি করে।
মৌরি
মৌরিতে থাকা কারমিনেটিভ বৈশিষ্ট্য প্রদাহ এবং ব্যথার দূর করে। এটি পেটের গ্যাস বের করে দিতে সাহায্য করে এবং ফোলাভাব, অ্যাসিডিটি এবং অন্যান্য অন্ত্রের জ্বালাও কমিয়ে দেয়। খাবার খাওয়ার পর কিছুটা মৌরি চিবিয়ে খেতে পারেন আবার মৌরি চা তৈরি করেও খেতে পারেন। তবে খুব বেশি পরিমাণে খাবেন না।
দই
দইয়ে থাকা স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া হজমশক্তি বাড়ায় এবং পেটের ব্যথা উপশম করে। বিশেষ করে অ্যাসিডেটি জনিত ব্যথা উপশম করে। নিয়মিত দই খেলে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এ ছাড়া দই দেহের রক্তের শ্বেতকণিকা বাড়িয়ে দেয়, যা জীবাণু সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
লাল মরিচ
লাল মরিচে থাকা ক্যাপসিসিন নামের বিশেষ উপাদান স্নায়ুর প্রান্তগুলো শান্ত করে এবং এর রাসায়নিক উপাদান ব্যথা দূর করে। স্যুপ বা রান্নায় আধা চা চামপ লাল মরিচ নিতে পারেন।
দারুচিনি
দারুচিনিতে রয়েছে ফাইবার, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক। এছাড়াও থাকে নানা ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্টও। প্রতিদিন সকালে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস আর দারুচিনি গুঁড়ো চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে ব্যথার উপশম হবে।
কফি
অনেকেই কফি খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু এইটা জানেন না এই কফিই আপনার ব্যথার সংবেদনশীলতা কমাতে পারে। কফিতে থাকে ক্যাফেইন মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে খিঁচুনিও কমাতে পারে। কফি শরীরে উদ্যম ও উৎসাহ তৈরি করে।