বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক। প্রতি বছর অত্যন্ত দ্রুত গতিতে এই রোগ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। ডায়াবেটিস সাধারণত তিন প্রকারের হয়। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে গেলে ডায়াবেটিসের শিকার হতে হয়। ইনসুলিন হরমোনের উৎপাদন রক্তে কমে গেলে ডায়াবেটিস জাঁকিয়ে বসে শরীরে।
টাইপ-১ ডায়াবেটিস খুব কমবয়সে হতে পারে। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর তা কিছুটা নির্ভর করে। অন্যদিকে টাইপ-২ ডায়াবেটিস সাধারণত চল্লিশের কোঠা পেরোনোর পর হয়ে থাকে।
ডায়াবেটিসের সবচেয়ে খারাপ দিকটি হলো, ওষুধ, শরীরচর্চা এবং খাওয়া-দাওয়া নিয়ম মেনে করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে কিন্তু তা কোনোভাবেই পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব নয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক, শরীরে সুগারের মাত্রা বেড়ে গেলে কীভাবে সেটি বুঝবেন-
- চিকিৎসকদের মতে, শরীরে সুগারের মাত্রা বেড়ে গেলে তা কিডনিতে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে শরীর থেকে সুগার বের করে দেয়ার জন্য। সে কারণেই ঘন ঘন প্রস্রাব পায়।
- সামান্য কাজ করলেই হাঁপিয়ে ওঠা শরীরে সুগারের মাত্রা বৃদ্ধির লক্ষণ। সুগারের মাত্রা বেড়ে গেলে শরীরে পানির ঘাটতি হয়। আর ডিহাইড্রেশনের ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।
- ডায়েট বা ব্যায়াম না করেই হুট করে অনেক বেশি ওজন কমতে থাকা শরীরে সুগারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
- যদি দেখেন যে আপনার এই জলের তেষ্টা স্বাভাবিক মাত্রার থেকে অনেক বেশি বেড়ে গেছে, তাহলে বুঝতে হবে যে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা কমতে শুরু করেছে।
- ডায়াবেটিসের একটি সাধারণ লক্ষণ হলো ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া। যেকোনো ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর ক্ষুধাভাব স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। এই ধরণের লক্ষণ দেখলে অবশ্যই ডায়াবেটিস টেস্ট করা উচিৎ।
- শরীরে জখম, কাটা ছেঁড়া বা ঘা যখন তখন হতে পারে, কিন্তু শরীরের রক্তকণিকা এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট খুব সহজেই সেগুলো নিজে থেকে শুকিয়ে ও সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস হলে এসব ঘা সহজে শুকাতে চায়না।
- শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা কম হতে শুরু করলে চোখের দৃষ্টিশক্তি ক্রমশ আবছা হয়ে আসে। ফলে চোখের পাওয়ার বেড়ে যেতে পারে। এই সময় ডায়াবেটিস পরীক্ষা অবশ্যই করানো প্রয়োজন।
- যাদের টাইপ-১ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে তাদের মধ্যে ঘনঘন মেজাজ পরিবর্তন, বিরক্তি বা রেগে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। আবার যাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে তাদের মধ্যে সারাক্ষণ বিষন্নতা, হাত পা কাঁপা এবং ধীর গতিতে কাজ করার প্রবণতা দেখা দেয়।
- ডায়াবেটিস রোগে মুখের ভেতরের অংশ বারবার শুকিয়ে যায়। ডায়াবেটিসের ফলে শুকনো মুখ হলে তা আরও নানা সমস্যা তৈরি করে। দাঁত ও মাড়ির সমস্যা হয় শুকনা মুখে।
- এই রোগে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কমে যায়। ফলে যেকোনো রোগের সংক্রমণ সহজেই হতে পারে শরীরে।
- গলা, কুঁচকি, বগল ইত্যাদি জায়গার চামড়ার রঙ গাঢ়় হয়ে যায়। ডায়াবেটিস হলে ত্বকে চুলকানি অনুভূত হয়।
- ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর যৌন অক্ষমতা তৈরি হয়। তিন-চতুর্থাংশ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিক পুরুষরা সন্তানের জন্ম দিতে অক্ষম হন।
এসব লক্ষণগুলো যদি আপনার মধ্যে দেখতে পান তাহলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। ডায়াবেটিসের ধরণ দেখে চিকিৎসকই আপনাকে জানিয়ে দেবেন কীভাবে চলতে হবে।