মাতৃত্বের স্বাদ পেতে চায় প্রত্যেক নারীই। তবে শারীরিক কিছু জটিলতায় সেই স্বাদ অপূর্ণে থেকে যেতে পারে। বর্তমান সময়ে নারীদের শারীরিক জটিলতার মধ্যে একটি হচ্ছে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম (পিসিওএস)। এই রোগের কারণে নারীদের অনিয়মিত ঋতুস্রাব, বাড়তি ওজন, মুখে রোমের আধিক্যের মতো শারীরিক জটিলতা দেখা যায়। এর মধ্যে বেশি জটিল হয়ে যায় হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখা। হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে যাওয়ার কারণে ডিম্বস্ফোটনের ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়ে। যার ফলে পিসিওএস-এ আক্রান্ত নারীরা সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তাই এই অসুখকে নিয়ন্ত্রণ রাখা প্রয়োজন। পিসিওএস নিয়ন্ত্রণ রাখার একমাত্র উপায় হচ্ছে সুস্থ ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা। সুস্থ জীবনযাত্রার জন্য নিয়মের ছকে বাঁধতে হবে নিজেকে। চলুন জেনে নেই পিসিওএস নিয়ন্ত্রণে কেমন হবে জীবনযাত্রা।
ওজন বেড়ে যাওয়া নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তায় থাকেন। পিসিওএস থাকলে ওজন বেড়ে যাওয়া আরও ভয়ংকর হতে পারে। ওজন বেশি হলে সন্তানধারণের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। অতিরিক্ত বিএমআই থাকলে গর্ভধারণের আগেই তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নয়তো প্রিএক্লাম্পসিয়ার মতো জটিল সমস্যা, রক্ত জমাট বাঁধা, গর্ভপাত ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। তাই পিসিওএস নিয়ন্ত্রণে ওজন কমানো জরুরি। খাওয়া দাওয়া নিয়ম মেনে করতে হবে। ডায়েট চার্ট অনুযায়ী ৩ বেলার খাবার খেতে হবে। অতিরিক্ত ফাইবারযুক্ত, জিংক ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যাবে। কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমিয়ে প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি ও ফল খেতে হবে। বাইরের খাবার যেমন জাঙ্ক ফুড খাওয়ার অভ্যাসকে বিদায় জানাতে হবে।
মানসিকভাবে চাপের মধ্যে থাকলেও পিসিওএস-এর সমস্যা বাড়বে। যা গর্ভধারণের ওপরও প্রভাব ফেলে। তাই গর্ভধারণের আগে কোনো অবস্থাতেই মানসিক চাপ নেওয়া যাবে না। বিশেষজ্ঞরা এই সময় মন ভাল রাখতে গান শোনা, ব্যায়াম বা যোগাভ্যাসের ওপর জোর দিতে বলেন। এগুলো মনকে চাপমুক্ত রাখবে। যা সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক।
অতিরিক্ত মদ্যপান ও ধূমপান গর্ভধারণের ওপর প্রভাব ফেলে। এই অভ্যাস থাকলে শরীরে হরমোনের ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটে। যা পিসিওএস- এর সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। তাই যত শিগগিরই সম্ভব এই অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
জীবনযাত্রা নিয়মের মধ্যে এনে নিলেই ৬০ শতাংশ সমাধান হয়ে যাবে। বাকি ৪০ শতাংশ সমাধান হবে ওষুধ সেবন করে। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে। ওষুধগুলো ডিম্বস্ফোটনকে নিয়মিত করবে। ডিম্বস্ফোটনের সমস্যা থেকেই বন্ধ্যত্বের আশঙ্কা তৈরি হয়। তাই সময় অপচয় না করে চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন জরুরি।