• ঢাকা
  • সোমবার, ০৭ এপ্রিল, ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১, ৯ শাওয়াল ১৪৪৬

তীব্র গরমে নিজেকে সুস্থ রাখবেন কীভাবে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০২৫, ০৪:৫১ পিএম
তীব্র গরমে নিজেকে সুস্থ রাখবেন কীভাবে
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে গ্রীষ্মকাল অত্যন্ত উষ্ণ ও আর্দ্র থাকে। এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত তীব্র গরম, রোদে অতিরিক্ত ঘাম, পানিশূন্যতা, হিট স্ট্রোক হয়। এই সময় একটু অবহেলাতেই শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে।  তাই গরমে নিজেকে সুস্থ রাখতে হলে কিছু সচেতনতা অবলম্বন করা জরুরি। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পানি পানের নিয়ম, পোশাক নির্বাচন ও দৈনন্দিন জীবনের কিছু অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে সহজেই এই গরমে সুস্থ থাকা সম্ভব।

পর্যাপ্ত পানি পান করুন
গরমকালে শরীর প্রচুর ঘাম ঝরায়। এতে সহজেই পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তাই প্রতিদিন অন্তত ৮–১০ গ্লাস পানি পান করুন। ঘরের বাইরে বের হওয়ার আগে এবং ঘরে ফিরে পানি পান করুন। শুধু পানি নয়, সম্ভব হলে লেবুর শরবত, ডাবের পানি, স্যালাইন, ফলের রস ইত্যাদিও খাওয়া যেতে পারে। তবে বোতলজাত কোমল পানীয় বা অতিরিক্ত মিষ্টি শরবত এড়িয়ে চলুন।

পুষ্টিকর ও হালকা খাবার খান
গরমকালে ভারী খাবার হজম করতে শরীরকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। ফলে শরীরে অতিরিক্ত গরম লাগে। তাই এ সময় হালকা, সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড বা ফ্রোজেন খাবার খাওয়া যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। তাজা সবজি, টক জাতীয় ফল, দুধ, দই, শসা, তরমুজ, খিরসাপাত আম, পেয়ারা এসব খাবার তালিকায় রাখুন। এগুলো শরীর ঠান্ডা রাখে এবং পানির ঘাটতি পূরণ করে।

পোশাকের প্রতি যত্ন নিন
গরমে আরামদায়ক ও হালকা রঙের ঢিলেঢালা পোশাক পরা উচিত। তুলা বা লিনেনের তৈরি কাপড় এই সময়ে বেশি উপযোগী। কারণ এসব কাপড় শরীরের ঘাম শুষে নেয় এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। গা ঘেঁষা সিনথেটিক কাপড় এড়িয়ে চলুন। কারণ এগুলো ঘাম শুষে নেয় না এবং অস্বস্তির কারণ হয়। ছেলেরা হাফ হাতার শার্ট বা ফতুয়া এবং মেয়েরা কটনের কামিজ বা শাড়ি পরতে পারেন।

রোদ থেকে বাঁচুন
গ্রীষ্মের দুপুরে সূর্য সবচেয়ে তীব্র হয়, তাই বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সরাসরি রোদে বের হওয়া এড়ানো উচিত। যদি বের হতেই হয়, তাহলে ছাতা ব্যবহার করুন, সানগ্লাস পরুন এবং মাথায় সাদা রঙের ক্যাপ বা টুপি রাখুন। সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বক রক্ষা করতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করাও জরুরি।

ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন
ঘর যদি খুব গরম হয়, তবে স্বাভাবিকভাবেই শরীরেও ক্লান্তি আসবে। তাই ঘরের জানালা খোলা রাখুন, যেন বাতাস চলাচল করতে পারে। সম্ভব হলে ফ্যান, এসি বা কুলার ব্যবহার করুন। দিনের সবচেয়ে গরম সময়ে ঘরের পর্দা টেনে রাখলে তাপ কিছুটা কমানো যায়। রাতে ঘুমানোর সময় হালকা চাদর ব্যবহার করতে পারেন।

নিয়মিত গোসল করুন
গরমে ঘাম বেশি হওয়ায় শরীরে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে, যা চর্মরোগ সৃষ্টি করতে পারে। তাই দিনে অন্তত দুইবার গোসল করা স্বাস্থ্যকর। ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল শরীরকে ঠান্ডা রাখে, ক্লান্তি কমায় এবং মনকে সতেজ করে।

ঘাম ও দুর্গন্ধ প্রতিরোধ করুন
গরমকালে অতিরিক্ত ঘাম থেকে শরীরের দুর্গন্ধ, ফাংগাল ইনফেকশন বা র‍্যাশ হতে পারে। তাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা জরুরি। গরমে ডিওডোরেন্ট বা অ্যান্টিসেপটিক পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত কাপড় ধুয়ে পরিধান করুন এবং মোজা বা অন্তর্বাস একদিনের বেশি ব্যবহার করবেন না।

ব্যায়াম ও বিশ্রামের সঠিক সময়
গরমে শরীরচর্চা করলেও সেটা খুব সকালে বা সন্ধ্যায় করা উচিত, যখন পরিবেশ অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা থাকে। দুপুরে বা রোদের সময় বেশি পরিশ্রম করলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিশ্চিত করা উচিত, কারণ গরমে শরীর সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

শিশু ও বৃদ্ধদের প্রতি বিশেষ যত্ন
শিশু ও বয়স্কদের শরীর পানিশূন্যতার প্রতি বেশি সংবেদনশীল। তাদের পর্যাপ্ত পানি খাওয়ানো, হালকা খাবার খাওয়ানো ও আরামে রাখার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে দিনে একবার ঠাণ্ডা পানি দিয়ে তাদের গা মুছে দেওয়া যেতে পারে।

অসুস্থ বোধ করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

গরমে যদি মাথা ঘোরা, অতিরিক্ত ঘাম, দুর্বলতা, বমি, বুক ধড়ফড় করা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। কারণ এটি হিট স্ট্রোকের লক্ষণও হতে পারে, যা জীবনঘাতী হতে পারে।

Link copied!