মধ্যরাতে হঠাৎ আপনার ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম ভাঙার পরেই মনে হচ্ছে আপনার বুকের ওপর ভারী কিছু বসে। এত ভারী কিছু যে ঠিকঠাক নিশ্বাসই নিতে পারছেন না। সবকিছু শুনতে পেলেও কোনো ধরনের নড়াচড়া করা সম্ভব হয় না। এমনটা ঘটলে বুঝবেন স্লিপ প্যারালাইসিস হয়েছে।
স্লিপ প্যারালাইসিস ঘুম এবং জাগরণের মধ্যবর্তী একটি অবস্থান যা ঘুমানোর মুহূর্তে অথবা ঘুম থেকে জেগে উঠার আগমুহূর্তে হতে পারে। নানা কারণে স্লিপ প্যারালাইসিস হতে পারে। মানসিক চাপ, পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব এবং অনিয়মিত ঘুমের কারণে স্লিপ প্যারালাইসিস হতে পারে। এ ছাড়া আরও কিছু প্রভাবক আছে যেগুলোকে স্লিপ প্যারালাইসিসের অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয়। ২০১১ সালে পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণা বলছে, বিশ্বের ৭ দশমিক ৬ ভাগ মানুষ স্লিপ প্যারালাইসিসে ভোগেন।
স্লিপ প্যারালাইসিস কাদের হয়
স্লিপ প্যারালাইসিস হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। এমন সমস্যা যেকোনো বয়সী ব্যক্তির সঙ্গেই ঘটতে পারে। তবে মায়ো ক্লিনিকের গবেষণা অনুযায়ী, ১০-২৫ বছর বয়সীদের ভেতর বেশি দেখা যায় সমস্যাটি।
স্লিপ প্যারালাইসিস দুটি সময়ে হতে পারে। প্রথমত ঘুমের ভেতর হতে পারে, যেটাকে হিপনাগোজিক বা প্রিডরমিটাল স্লিপ প্যারালাইসিস বলে। দ্বিতীয়ত ঘুম থেকে ওঠার পর হতে পারে যেটাকে হিপনোপম্পিক বা পোস্টডর্মিটাল স্লিপ প্যারালাইসিস বলে।
মুক্তির উপায়
- সবকিছু রুটিন অনুযায়ী চললে কমবে স্লিপ প্যারালাইসিসের সমস্যা। দিনে কতটুকু সময় কাজ করবেন আর কতটুকু বিশ্রাম নেবেন তার আনুমানিক হিসাব লিখে রাখুন। যত কাজই থাকুক না কেন, রাতে অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমের অভ্যাস করুন।
- প্রতি রাতে একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং সকালে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করা। এই অভ্যাস ছুটির দিনেও বহাল রাখতে
হবে। - ঘুমের আগে ফোন ব্যবহার ও টেলিভিশন দেখা অনেকেরই অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই অভ্যাস স্লিপ প্যারালাইসিসের পেছনে কারণ হিসেবে কাজ করতে পারে। তাই ঘুমের অন্তত দুই ঘণ্টা আগে সব ধরনের গ্যাজেট ব্যবহার বাদ দিন। হাতের কাছ থেকে সরিয়ে রাখুন স্মার্টফোন। স্ক্রিনটাইম যত কম হবে তত ঘুম ভালো হবে।
- দিনের বেলা ঘুমানোর অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করা এবং দিনে লম্বা ঘুম না ঘুমানো।
- রাতে ঘুমানোর আগে ভারী খাবার খাওয়ার অভ্যাস এড়িয়ে যাবেন। রাতের খাবার খেতে হবে ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ঘণ্টা তিনেক আগে। কারণ রাতের খাবার দেরিতে খেলে তা ঘুমে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে এবং দেখা দিতে পারে স্লিপ প্যারালাইসিসের মতো সমস্যা।
- স্লিপ প্যারালাইসিস হয়েই যায় তখন শরীর অহেতুক নাড়াচাড়া করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে হবে।