বডি ম্যাসাজ শরীরের বিভিন্ন স্থানের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। একটি পরিপূর্ণ ম্যাসাজ দিতে পারে শিশুর পূর্ণ তৃপ্তিময় ঘুম। শিশুর বডি ম্যাসাজের মাধ্যমে ওজন বৃদ্ধি, শিশুর বদ হজম থেকে শুরু করে অনেক সমস্যার সমাধান করা যায়। ভয় পাবেন না, শিশুকে ম্যাসেজ করার জন্য আপনাকে বিশেষজ্ঞ হতে হবে না। আপনি যদি শিশুর অভিভাবক হয়ে থাকেন তবে জেনে নিন সাধারণ কিছু নিয়ম—
ম্যাসাজের সময় নির্বাচন
শিশুর বডি ম্যাসাজ যেন কখনই ভরা পেটে না হয়। তাই বলে শিশুর খালি পেটেও যেন না হয় কারণ আমরা সবাই জানি শিশুরা ক্ষুধা পেটে ও ঘুমের সময় একটু খিটখিটে হয়ে যায়। তাই সব চেয়ে ভালো হয় যদি শিশুর খাওয়ার এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর শুরু করা যায়।
ম্যাসাজের সবচেয়ে ভালো সময় গোসল করার আগে ১/২ ঘণ্টা আগে বা রাতের ঘুমের ১/২ ঘণ্টা আগে। অবশ্যই খেয়াল করতে হবে শিশু যেন অন্য সময়ের চেয়ে বেশি শান্ত থাকে কারণ শিশুর শান্ত থাকাটা খুবই জরুরি। তাহলে শিশুর ম্যাসাজ পরিপূর্ণ উপভোগ করতে পারবে। তাই সম্ভব হলে টিভি বন্ধ রাখুন এবং শিশু গান শুনতে ভালোবাসলে অল্প ভলিউমে গান চালিয়ে রাখতে পারেন। সব সময় চেষ্টা করুন রুমের পরিবেশ শান্ত রাখার। আপনি চাইলে বেবির সাথে গুন গুন করে গানও গাইতে পারেন। মোট কথা বেবি যেটা বেশি উপভোগ করবে তাই করতে হবে।
যা যা প্রয়োজন
আপনি চাইলে কুসুম গরম তেল ব্যবহার করতে পারেন তার জন্য গরম পানির বাটির মধ্যে তেলের বাটি রেখে দিন এমনিতেই গরম হয়ে যাবে। সেটা শিশুর জন্য বেশি উপভোগ্য হবে এবং ম্যাসাজ শুরু করার আগে যা যা প্রয়োজন তা হলো—
- একটি চাদর বা তোয়ালে ( বিছানোর জন্য )
- তেল বা ক্রিম ( ম্যাসাজের জন্য )
- বাটি (তেল রাখার জন্য )
- নরম তোয়ালে (বডি মোছার জন্য )
- গরম পানি (তেল গরম করার জন্য বা গোসলের জন্য )
- পর্যাপ্ত সময়
শিশুর ম্যাসাজ
প্রথম বেবিকে কোনো পাটি বা তোয়ালের ওপর শুয়ে দিন। প্রথমে বেবির পায়ের ম্যাসেজ করতে হবে। আর এটা করতে হবে আপনার দুই হাত দিয়ে। প্রথমে বেবির পায়ের ওপর থেকে (মানে রানের কাছ থেকে) এক হাত দিয়ে টেনে নামিয়ে গোড়ালির কাছে থামতে হবে। এইবার অন্য হাত দিয়ে একইভাবে টেনে নামাতে হবে। এই ম্যাসাজটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ম্যাসাজ। এই ম্যাসাজটি শিশুর জড়তা কাটিয়ে তাড়াতাড়ি হাঁটতে সাহায্য করে এবং শিশুর হাড় মজবুত করে। তাই এই ম্যাসাজটি সম্ভব হলে ৫ বার করবেন।
প্রথমে আপনার শিশুর পায়ে কয়েক ফোঁটা অয়েল ড্রপ করুন। এরপর আপনার বৃদ্ধ আঙুল দিয়ে শিশুর পায়ের পাতায় গোড়ালি থেকে উপরের দিকে টেনে তুলুন এবং ওপর থেকে টেনে নামান।
এবার রানের কাছ থেকে ম্যাসাজ করে নামিয়ে এসে পায়ের আঙুলের কাছে থামুন এবং বেবির পায়ের আঙুলগুলো একটা একটা করে আস্তে আস্তে টান দিন। এই ম্যাসাজটি ৩ বার করুন।
কাঁধের ওপরের অংশ থাকে ম্যাসাজ শুরু করে বুকের মাঝামাঝিতে এসে শেষ করুন। হালকা চাপের সাথে এই ম্যাসাজ করতে হবে। এই ভাবে আরও ৩/৪ বার করুন এবং শেষ বারও বুকের কাছে এসে হাত উঠাতে হবে।
কাঁধ থেকে ম্যাসাজ করতে করতে হাতে এসে শেষ করুন। এরপর হাতে এসে, প্রথমে আপনার বৃদ্ধাঙ্গুলে সাহায্যে বেবির হাতের তালায় চাপ দিয়ে ম্যাসাজ করুন এবং বেবির আঙুলগুলোকে একটা একটা করে আস্তে আস্তে টান দিতে হবে।
পেটের নিচের ডানপাশ থেকে ম্যাসাজ শুরু করে (ঘড়ির কাঁটার দিকে) পেটের বামপাশে এসে শেষ করুন। এতে করে আপনার শিশু সকল প্রকার পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে। এই ম্যাসাজটি ৩/৪ বার করুন।
কপালের মাঝখান থেকে তর্জনী বা মধ্যমা আঙুল দিয়ে ম্যাসাজ শুরু করে গালে এসে শেষ করুন। এই ম্যাসাজ করতে হবে আঙুল দিয়ে বৃত্তাকার করে।
এইবার আপনার শিশুর ম্যাসাজ শেষের দিকে, তাই বেবিকে উপুড় করে শুয়ে দিন এবং রিল্যাক্স হতে দিন। এরপর শিশুর মেরুদণ্ডে আপনার হাতের সাহায্য পিঠের ওপর থেকে লম্বাভাবে টেনে নামান এবং আপনার হাতের আঙুল দিয়ে শিশুর মেরুদণ্ডে হাঁটুন। এইভাবে ৫ বার করুন।
যদি বাচ্চা কোনোভাবে ম্যাসাজে ব্যথা পায় বা কান্নাকাটি শুরু করে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ম্যাসাজ বন্ধ করুন। পরের দিন আবার চেষ্টা করুন।
আপনার শিশুর প্রতিদিনের রুটিনের মধ্যে ম্যাসাজের জন্য কিছু সময় রাখুন। প্রথম দিকে বাচ্চা ম্যাসাজ উপভোগ নাও করতে পারে। আর একদিনেই সম্পূর্ণ ম্যাসাজ সম্ভব না তাই, একটু একটু করে ম্যাসাজ বাড়ান। তাহলে দেখবেন বাচ্চা এক সময় নিজেই ম্যাসাজের জন্য প্রস্তুত হবে এবং বেবির সাথে মধুর সময় কাটান।