বছরের উষ্ণতম মাস এপ্রিল। এ সময় সাধারণত শিশুরা ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের চর্মরোগ, ভাইরাস জ্বর, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়। তবে এ বছর তাপমাত্রা আরও বেড়েছে। দেশজুড়ে চলছে হিট অ্যালার্ট। পরিবেশের এই তাপমাত্রার প্রভাব পড়ে শিশুর শরীরে। ফলে শিশুর সাধারণত এ সময় যেসব সমস্যায় পড়ে তার চেয়ে বড় ঝুঁকিতে থাকে হিট ক্র্যাম্পের। এতে শরীর থেকে বেশি মাত্রায় ঘাম বেরিয়ে যায়, সঙ্গে লবণও। পরের ধাপে শিশুর যে সমস্যা দেখা দিতে পারে, তার নাম ‘হিট এক্সোসশন’। এ পর্যায়ে ব্যথার সঙ্গে যুক্ত হবে ক্লান্তি, অবসাদ। শিশু এ অবস্থায় নিস্তেজ হয়ে যেতে পারে। পরের স্তর ‘হিটস্ট্রোক’। এটা বেশ খারাপ পরিস্থিতি। তাই এ সময়ে শিশু ও নবজাতকের প্রতি বেশি যত্নশীল হতে হবে এবং কিছু বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
নবজাতকের যত্নে করণীয়
- ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের এ সময়ের সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখা উচিত।
- নবজাতক শিশুদের ঘন ঘন মায়ের দুধ দিতে হবে, অন্য কিছু নয়। তাই দুধ বাড়াতে মা একটু বেশি পানি, ডাবের পানি, তরমুজ, শসা, শাকসবজি খাবেন।
- নবজাতকে হালকা রঙের ও ঢিলে পোশাক পরাতে হবে। নবজাতকদের কাপড়ে মুড়িয়ে না রাখার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।
- নবজাতকের ঘাম শুকানোর পর পানি দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে। এতে শরীরের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে পারে।
- শিশুর প্রস্রাব ঠিকমতো হচ্ছে কি না, খেয়াল রাখতে হবে।
শিশুর যত্নে করণীয়
- এ সময় শিশুরা সাধারণত ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় কারণ গরমের সময় ভাইরাসগুলো বেশি জন্মায়। এ সময় খাবারে অল্পতেই পচন ধরে। সেই খাবার যখন কেউ খেয়ে ফেলে, তাহলে তার ডায়রিয়া হয়ে যায়। তাই শিশুদের খাবার খাওয়ানোর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। বাইরের ফুচকা, চটপটি কিংবা ফাস্টফুড খাবার থেকে দূরে রাখতে হবে।
- ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, প্যারাসাইটজনিত রোগ তাপমাত্রার সাথে সংক্রমণ বৃদ্ধির সম্পর্ক আছে। তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ধরনের রোগ বেশি হয়। তাই এ সময় শিশুকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
- শিশুকে পর্যাপ্ত পানি পান করাতে হবে। খাওয়ার স্যালাইন খাইয়ে বা পানি বেশি আছে, এমন ফল দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যাতে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে মুক্তি পেতে পারে।
- সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি দ্বারা ১৮ বছরের নিচের শিশুদের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই এ সময় শিশুদের ছায়ায় রাখতে হবে। যত দিন তাপমাত্রা বেশি থাকবে অন্তত তত দিন বাইরে খেলা থেকে দূরে রাখতে হবে। প্রয়োজনে বিভিন্ন ইন্ডোর গেইমসের ব্যবস্থা করতে হবে।
- কোনো কারণে শিশুকে বাইরে বের করতে হলে সে সময় তাদের সানস্ক্রিন ও সূর্যের আলো থেকে সুরক্ষা দিবে, এমন পোশাক পরানো উচিত। সেই সঙ্গে, তাদেরকে ছাতার নিচে রাখতে হবে।
- গরমকালে শিশুর পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা জরুরি। এ সময় তাদেরকে সাবান দিয়ে নিয়মিত গোসল করাতে হবে এবং গোসলের পর পরিষ্কার কাপড় দিয়ে তার শরীর মুছিয়ে দিতে হবে।
- গরমে শিশুর ত্বকের বাড়তি যত্নে নজর দিতে হবে। অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীরের লোমকূপ বন্ধ হয়ে ত্বকে র্যাশ, ঘামাচি, ফুসকুড়ি হতে পারে। তাই শিশুদের সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ধূলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে।
- অতিরিক্ত গরমে শিশু বারবার ঘেমে গেলে অবশ্যই একটি পাতলা কাপড় বা গামছা দিয়ে বারবার তার ঘাম মুছে দিতে হবে। কারণ ঘাম যদি শরীরেই শুকিয়ে যায়, তাহলে তা থেকে তার জ্বর হতে পারে।
- ফ্যান বা এসির তাপমাত্রা শিশুর জন্য আরাম ও স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- চিনিজাতীয় ও বেশি প্রোটিনজাতীয় খাবার না দেওয়াই ভালো। শসা বা পানিজাতীয় যেসব খাবার এনার্জি তৈরি করবে, সেসব দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।