নিপাহ ভাইরাস একটি জুনোটিক ভাইরাস। জুনোটিক ভাইরাস হচ্ছে সেই সকল ভাইরাস যারা প্রাণীদেহ থেকে মানবদেহে রোগ ছড়াতে পারে। দুই দশকের বেশি সময় ধরে এই ভাইরাস বিশ্ব ব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়ে যাচ্ছে। এতে মৃত্যুর হার ৫০-৭০ শতাংশ।
১৯৯৯ সালে কামপুং সুংগাই নিপাহ নামে একটি গ্রামে এই ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয়। ড. কো বিং চুয়া প্রথম শুকরের শরীরে প্রথমবারের মতো নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত করেন। আর যেহেতু নিপাহ নামক গ্রাম থেকে এই ভাইরাস শনাক্ত করা হয় তাই গ্রামের নামানুসারে এর নামকরণ হয় নিপাহ ভাইারস।
বাংলাদেশে এই ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় ২০০১ সালে। প্রথম মেহেরপুরে অজ্ঞাতনামা মস্তিষ্কের প্রদাহরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়। এরপর ২০০৩ সালে ফরিদপুরে অনেক বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়। এরপর ২০০৫ সালে টাঙ্গাইলে আউটব্রেক হয়।
নিপাহ ভাইরাস যেভাবে ছড়ায়
যেহেতু নিপাহ ভাইরাস একটি জুনোটিক ভাইরাস, এটি পশুর মাধ্যমেই ছড়ায়। তবে সাধারণত এই ভাইরাস বাদুড় আর শূকরের মাধ্যমে ছড়ায়। আমাদের দেশে বাদুড়ের মাধ্যমেই ছড়ায়। প্রাকৃতিকভাবেই বাঁদুড়ের দেহে নিপাহ ভাইরাস থাকে। কিন্তু তারা নিজেরা আক্রান্ত হয় না। যদি কোনোভাবে মানুষের মধ্যে আসে এই ভাইরাস তখনই মানুষ আক্রান্ত হয়।
প্রতিরোধের উপায়
- নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে দূরে থাকতে হবে, আলাদা থাকতে হবে। এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তি যদি মারা যায় তাহলে সেই মৃতদেহ কবর দেওয়া, গোসল করানো, সৎকার করা ও মৃত ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার সময়ও যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
- খেজুর বা তালের রস গাছ থেকে নামিয়ে সঙ্গে সঙ্গে কাঁচা খাওয়া যাবে না। খেতে হলে আগে ফুটিয়ে নিতে হবে। রস না খাওয়ায় ভালো।
- যারা খেজুর বা তালের রস গাছ থেকে সংগ্রহ করেন তাদের সতর্ক হতে হবে। কারণ অনকে সময় খেজুরের রসের হাড়িতেও বাদুড়ের লালা লেগে থাকতে পারে। তাই তালের রস সংগ্রহের সময় অবশ্যই মাস্ক পড়তে হবে। রস গাছ থেকে নামিয়ে এনে হাত সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুতে হবে।
- অনেক সময় গাছেই অর্ধেক ফল খাওয়া অবস্থায় থাকে। সেসব ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- নিপাহ ভাইরাস প্রাদুর্ভাব সম্পূর্ণ এলাকায় অবস্থান কালে সতর্ক থাকতে হবে।