• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ঈদে মাংস কতটুকু খাবেন, হজমে সমস্যা হলে যা করবেন


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২৪, ০৪:০৯ পিএম
ঈদে মাংস কতটুকু খাবেন, হজমে সমস্যা হলে যা করবেন
ছবি : সংগৃহীত

কোরবানি ঈদে প্রায় সময় আমাদের মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরতে থাকে, তা হলো মাংস বিশেষ করে রেড মিট (গরু, মহিষ,খাসি, ভেড়া, দুম্বা,উট ইত্যাদির মাংস) খেতে পারব কি না? খেতে পারলে কতটুকু খাব? এ সময় কমবেশি সব বাড়িতেই মাংস থাকে। যে কারণে স্বাভাবিক সময়ের থেকে মাংস বেশি খাওয়া হয়। কিন্তু মাংস বেশি খাওয়ার কারণে অনেকেরই হজমে সমস্যা হয়।
মাংস সম্পর্কে আমাদের সবার মধ্যে অনেক ধারণা প্রচলিত আছে, যেমন– মাংস খেলে আমাদের শরীরে মেদ বা কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়, যা থেকে হতে পারে হৃদ্রোগ, হাইপারটেনশন, স্ট্রোক ইত্যাদি অসুখ। অথচ এর চেয়ে বেশি সমস্যা হতে পারে আমরা যদি বেশি বেশি সাদা চাল, সাদা আটা ময়দা, অতিরিক্ত তেলেভাজা খাবার, প্যাকেটজাত রেডিমেড খাবার, বোতলজাত এনার্জি ও কোল্ড ড্রিংক ইত্যাদি খাবার হিসেবে গ্রহণ করি। প্রতি ১০০ গ্রাম ডিমে যতটুকু কোলেস্টেরল থাকে, ১০০ গ্রাম মাংসে এর চেয়ে অনেক কম কোলেস্টেরল থাকে।
সঠিক নিয়মে রান্না করে পরিমিত পরিমাণে মাংস খাবার হিসেবে গ্রহণ করলে, মাংস থেকে আমরা প্রচুর পুষ্টি উপাদান পাব। যা অন্য অনেক খাবারে পাওয়া যায় না। মাংসের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রথম শ্রেণির আমিষ, ভিটামিন (এ, বি২, বি৩, বি৬, বি১২)ও মিনারেল (জিংক,আয়রন, ফসফরাস, সেলেনিয়াম)। আমিষ দেহের বৃদ্ধিসাধন ও ক্ষয়পূরণে সহায়তা করে। ভিটামিন বি খাদ্য থেকে শক্তি তৈরি, স্নায়ুর গঠন ঠিক রাখে এবং খাবারের রুচি বাড়াতে সাহায্য করে। রক্তের হিমোগ্লোবিনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে আয়রন, যা সারা শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে। ফসফরাস হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়তা করে এবং ক্ষয়রোধ করে।
মাংসে থাকা এসেন্সিয়াল ফ্যাটি এসিড (লিনোলিক এসিড) ডায়াবেটিস ও ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সাধারণত এক বছর বয়স থেকে মানুষ পরিমিত পরিমাণে মাংস গ্রহণ করতে পারে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১ থেকে ৫ গ্রাম আমিষ গ্রহণ করতে হয়। যা পাওয়া যেতে পারে মাছ, মাংস, দুধ,ডিম, ডাল, বাদাম, বিচিজাতীয় খাবার থেকে। এগুলো বিভিন্ন খাবার থেকে নিতে পারলে ভালো হয়।
১০০ গ্রাম হাড় ছাড়া মাংস থেকে ২০ গ্রাম মতো আমিষ পাওয়া যায়। একজন ৫০ কেজি ওজনের মানুষের প্রতিদিন ৫০-৭৫ গ্রাম আমিষের প্রয়োজন। এই পরিমাণ আমিষ পেতে প্রায় ২৫০ থেকে ৩৭৫ গ্রাম মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ডাল, বাদাম, বিচিজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। এর তিন ভাগের এক ভাগও মাংস থেকে গ্রহণ করতে চাইলে প্রতিদিন ১০০ গ্রাম মাংস খুব সহজেই খাওয়া যায়। তবে যাদের বিভিন্ন রোগ আছে, যেমন: হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, স্ট্রোক, হার্টের অসুখ ইত্যাদি, তাদের ক্ষেত্রে ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে ঠিক করতে হবে কতটুকু আমিষ নিতে হবে। 
মাংস খাওয়ার সময় প্রচুর শাকসবজি ও সালাদ খেতে হবে। এতে হজম ভালো হবে। পোলাও, বিরিয়ানি, পরোটা, লুচি ইত্যাদির সঙ্গে মাংস না খেয়ে, বাদামি চালের ভাত ও বাদামি আটার রুটির সঙ্গে মাংস খেতে পারলে ভালো হবে। এ সময়ে ডেজার্ট, যেমন: ফিরনি, পায়েস, পুডিং, কাস্টার্ড, জর্দা, মিষ্টিদই ইত্যাদি খাওয়া বাদ দেওয়াই ভালো, তবে টক দই খাওয়া যাবে।  
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাংসে উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন ও ফ্যাট থাকায় এটি হজমে বেশি সময় লাগে। তবে প্রাকৃতিককিভাবে খাবারে কিছু হজমকারী এনজাইম বা উপাদান থাকে, যা হজম প্রক্রিয়াকে অনেক সহজ করে তোলে। এবার তাহলে হজমে সমস্যা হলে করণীয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
পেঁপে : এতে প্যাপেইন নামক একপ্রকার উপাদান থাকে, যা দ্রুত মাংস হজম করতে সহায়তা করে। এ কারণে খাবার টেবিলে সালাদের সঙ্গে পেঁপে রাখতে পারেন।
আনারস: এই ফলে ব্রেমেলেইন নামক উপাদান রয়েছে, যা প্রোটিন ভাঙতে সহায়তা করে। তাই খাদ্যতালিকায় আনারস রাখলে হজমে উপকার পেতে পারেন।
দই : দই বা দই দিয়ে তৈরি খাবার রাখতে পারেন খাবার টেবিলে। কেননা, দইয়ে উপকারী ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। যা মাংস বা মাংসজাতীয় খাবার হজম করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
এছাড়া কোল্ড ড্রিংকসের পরিবর্তে বোরহানি রাখা যেতে পারে। আর হজমে যদি বেশি সমস্যা হয় তাহলে কালক্ষেপণ না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে একদমই ভুলবেন না।

Link copied!