শিশুরা যেসব সমস্যায় ভোগে তার মধ্যে কৃমির সমস্যা অনেক বেশি দেখা যায়। কৃমি এক ধরনের পরজীবী। মানুষের শরীর থেকে পুষ্টি নিয়ে বেঁচে থাকে, বৃদ্ধি পায়, বংশবিস্তার করে। সাধারণত খাদ্যনালীর নিচের অংশে, বা কখনো কখনো লিভারে কৃমির সংক্রমণ বাড়তে পারে। বিভিন্ন প্রকার কৃমির মধ্যে গোলকৃমি, ফিতা কৃমি ও গুঁড়া কৃমির প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। কখনও কখনও গোলকৃমি শিশুর নাক-মুখ দিয়েও বেরিয়ে আসে। কৃমির কারণে শিশু অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়। এছাড়াও দেখা যায় আরও কিছু উপসর্গ।
শিশুর কৃমি হয়েছে কীভাবে বুঝবেন
- পেটব্যথা, পেট ফোলা-ফাঁপা, রক্ত বা রক্তযুক্ত ডায়রিয়া।
- শিশুর খাবারে রুচি কমে যায়, বমি ভাব বা বমি হতে পারে।
- ক্ষুধামান্দ্য, ওজন কমা, জ্বর, ক্লান্তি, হাত-পায়ের ব্যথা এবং মাথাব্যথা হতে পারে।
- পেট ফুলে যায়, বদ হজম হয় ও ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হয়।
- শিশু ফ্যাকাশে হয়ে যায়, রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।
- মলদ্বারে প্রচুর চুলকানি হয়, ইনফেকশনও হতে পারে।
কৃমি হওয়ার কারণ-
সাধারণত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবেই শিশুদের কৃমির সংক্রমণ বেশি হয়। পরিবারে একজনের কৃমি হলে অন্যদেরও হতে পারে। অপরিষ্কার খাবার, দূষিত পানি ও অপরিষ্কার হাত মুখে দিলে এটা বেশি ছড়ায়। যেমন-
- খালি পায়ে চলাফেরা করলে বা অপরিষ্কার থাকলে।
- শিশু নোংরা মাটিতে খালি পায়ে হাঁটলে কৃমির সংক্রমণের ঝুকি থেকে। কারণ নোংরা মাটি থেকে কিছু কৃমি পায়ের ত্বকের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে।
- অস্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবহার করলে।
- প্রস্রাব-পায়খানা করার পর ঠিকমতো হাত না ধোয়ার কারণে।
- বাইরের খাবার খেলে। আবার খাওয়ার আগে হাত না ধুয়ে খাবার খাওয়ার আগে হাত না ধোয়ার কারণে।
- হাতের নখ বড় রাখা, দাঁত দিয়ে নখ কাটলেও নখে লেগে থাকা কৃমি পেটে যেতে পারে।
চিকিৎসা
শিশুর অপুষ্টির একটি বড় কারণ কৃমি। গবেষণায় দেখা গেছে, ১০ বছরের নিচে প্রায় ৩৯ শতাংশ শিশু কৃমিতে আক্রান্ত। তাই কৃমি প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। আর যদি একবার হয়েই যায় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ দিতে হবে। সাধারণত Albendayole বা Mebendayole অথবা Pyrental pamoate দেওয়া হয়। এছাড়া আমাদের দেশে বছরে দু’বার জাতীয় টিকা দিবস পোলিও টিকার পাশাপাশি এক বছর থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের কৃমিনাশক ওষুধ (Albendyaole) খাওয়ানো হয়।
কৃমির ঔষধ পরিবারের সবাইকে খেতে হয়। কারণ যদি একজনের পেটে কৃমি থেকে যায়, তাহলে তার কাছ থেকে যেকোনোভাবেই আবার কৃমির ডিমগুলো শিশুর পেটে চলে যেতে পারে, সেখান থেকে আবার কৃমির সংক্রমণ হতে পারে।
অবশ্যই সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। শিশুরা যাতে প্রত্যেকবার মলত্যাগ ও প্রস্রাবের পরে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সব সময় শিশুকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।