সুস্থ থাকার অন্যতম শর্ত শরীরচর্চা। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুস্থ জীবনযাপনের জন্য স্বাস্থ্যকর খাওয়া- দাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চাও করতে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা করলে দেহের অধিকাংশ রোগবালাই দূরে থাকে। সবার জন্যই শরীরচর্চা অত্যন্ত জরুরি।
কিন্তু জানেন কি, পৃথিবীর সবচেয়ে স্বাস্থ্যবান মানুষরাই নিয়মিত শরীরচর্চা করেন না। হ্যা, তারা কখনও জিমেও যান না। এরপরও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষের তুলনায় তারা সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যবান। তাদের রোগবালাই কম হয়। তাদের গড় আয়ুও বেশি থাকে।
বিশ্বের যেসব দেশের মানুষের গড় আয়ু বেশি এবং দীর্ঘমেয়াদী রোগবালাই কম হয় সেসব দেশকে ব্লু জোন বলা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, গ্রিস ও কোস্টারিকার মতো উন্নত দেশগুলোর কিছু অংশ। এসব স্থানে বার্ধক্যে পৌছালেও সুস্থই থাকেন অধিকাংশ মানুষ। তাই তাদের গড় আয়ু বেশি হয়। অধিকাংশ মানুষেরই বয়স ৯০ পার হয়। তাদের অসুস্থ হওয়ার প্রবণতাও কম থাকে। এর পেছনের কারণ হচ্ছে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা। শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের কারণেই তারা জিমে না গিয়েও সুস্থ থাকেন।
ব্লু জোন-এর এসব অঞ্চলের মানুষগুলো স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করেন। তাদের পুরো দিনই থাকে কর্মমুখর। তারা বেশিরভাগ সময়ই কায়িক পরিশ্রম করে কাটান। নিয়মিত হাঁটাচলা করেন। বাড়িতে বাগান করতে পছন্দ করেন। আর ঘরের কাজ নিজেরাই সেরে নেন।
নিয়মিত হাঁটা এবং কায়িক শ্রম করায় এসব অঞ্চলের মানুষদের আলাদা করে জিমে যেতে হয় না। শরীরচর্চার জন্য আলাদা সময়ও বের করতে হয় না। সম্প্রতি গবেষণায়ও উঠে এসেছে, যত বেশি দূরত্বে হাঁটবেন কিংবা যত বেশি সিঁড়ি ভেঙে উঠঠেন, আয়ু ততই বেশি হবে। অর্থাত্ দীর্ঘসময় বসে কাজ করার চেয়ে হাঁটাচলা করা এবং কায়িক শ্রম করলে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা যায়।
ব্লু জোন-এর মানুষদের নিয়ে বেশ কয়েকটি গবেষণাও পরিচালিত হয়েছে। সম্প্রতি ইতালির ব্লু জোনের মানুষদের ওপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মানুষ খামারে কাজ করেন, খাড়া পাহাড়ি ঢালে বসবাস করেন, প্রতিদিন অনেকটা পথ হেঁটে কাজে যাচ্ছেন, তাদের আয়ু বেশি থাকে। তারা অন্যদের তুলনায় বেশিদিন বেঁচে থাকেন।
এছাড়া আরও গবেষণার ফলাফলে উঠে এসেছে, যারা নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম করেন তাদের ক্যানসার ও হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।
এসব অঞ্চলের মানুষ স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস নিয়েও সচেতন। তারা অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। দ্রুত খাবার শেষ করেন না। বরং ধীরে ধীরে খাবার খান। পুরো পেট ভরেও খাবার খান না এসব অঞ্চলের মানুষ। তারা পাকস্থলীর ১০ ভাগের ৮ ভাগ পূর্ণ করে খাবার খাবেন। যার পুরোটাই থাকে স্বাস্থ্যকর খাবার।
ব্লু জোন অঞ্চলের মানুষদের খাবারের ৯৫ শতাংশই আসে উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে। তারা লাল মাংস এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস খাবার এড়িয়ে চলেন। এর পরিবর্তে অধিকাংশ সময় গোটা শস্য, সবজি, বীজ, ডাল এবং বাদাম খেতে বেশি পছন্দ করেন।
স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুমও নিশ্চিত করেন এসব অঞ্চলের মানুষেরা। তারা দৈনিক ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে-এই নিয়ম মানেন না। বরং যার শরীরে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই ঘুমান। তারা মানসিকভাবেও সুস্থ থাকেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একসঙ্গে বাস করেন। একই পরিবারে বয়োজ্যেষ্ঠ ও খুদে সদস্যরা থাকেন। তাই হাসিখুশিভাবেই জীবন পার করেন তারা। সবমিলিয়ে শরীরচর্চা না করেও তারা সুস্থ, সুন্দর জীবনধারণ করে থাকেন। তাই তারাই পৃথিবীর সবচেয়ে স্বাস্থ্যবান মানুষ হিসেবে পরিচিত পান।
সূত্র: হেলথলাইন