জনপ্রিয় সবজি বেগুন আর আলুর পর এবার প্রধান খাদ্যশস্য চালেও পাওয়া গেল হেভি মেটাল বা ভারী ধাতুর উপস্থিতি। আমরা সবচেয়ে বেশি খাই সেই মিনিকেট আর নাজিরশাইলের মতো চালের নমুনাতে ক্ষতিকারক মাত্রায় আর্সেনিক, সিসার মতো ভারী ধাতু পাওয়া গেছে।
“কার্সিনোজেনিক অ্যান্ড নন-কার্সিনোজেনিক হেলথ হ্যাজার্ডস অব পোটেনশিয়াল টক্সিক এলিমেন্টস ইন কমনলি কনজিউমড রাইস কাল্টিভার্স ইন ঢাকা সিটি, বাংলাদেশ” শীর্ষক এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. নাজমা শাহীনের নেতৃত্বে পরিচালিত একদল গবেষকের এ বিষয়ে গবেষণাপত্র গত ১৪ মে ‘প্লস ওয়ান’ নামের একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব হেভি মেটাল নিয়মতিভাবে খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে ক্যানসারের মতো প্রাণঘাতী রোগ হতে পারে। পাশাপাশি মানুষের শরীরে বাসা বাঁধতে পারে উচ্চরক্তচাপ, কার্ডিওভাসকুলার রোগ, ডায়াবেটিস, হিমোগ্লোবিন সংশ্লেষণে বাধা, প্রস্রাবে সমস্যা, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি, মূত্রনালির সংক্রমণসহ গুরুতর রোগ।
ঢাকা শহরের চারটি পাইকারি বাজার থেকে সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয় এমন ১০ ধরনের চালের নমুনা সংগ্রহ করেন গবেষকরা। সেসব নমুনার মধ্যে রয়েছে— নাজিরশাইল, মিনিকেট, পাজাম, কাটারী, বাসমতি, কালীজিরা চিনিগুড়া, ব্রি-৩২, বাশফুল ও লালবিরুই চাল।
এসব চালের নমুনা পরীক্ষা করে গবেষকরা আর্সেনিক, সিসা, ক্রোমিয়াম, কপার, ক্যাডমিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ, মার্কারি, নিকেলের মতো ভারী ধাতু এবং বিষাক্ত উপাদান ক্ষতিকর মাত্রায় পেয়েছেন।
গবেষকরা বলছেন, ইউনাইটেড স্টেটস এনভাইরনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সির (ইউএসইপিএ) মানদণ্ড অনুযায়ী, সীসার স্বাভাবিক মাত্রা কেজিতে ০.০০০০০১ মিলিগ্রাম হলেও বিভিন্ন প্রকারের চালের মধ্যে পাওয়া গেছে সর্বনিম্ন ০.০১ থেকে সর্বোচ্চ ১.০৮ মিলিগ্রাম।
একইভাবে, আর্সেনিকের মাত্রা প্রতিকেজিতে ০.০৪ থেকে ০.৩৫ মিলিগ্রাম পর্যন্ত পাওয়া গেছে। এই দুটি ভারী ধাতুই মানুষের শরীরে ক্যানসার তৈরিতে ভূমিকা রাখে। এছাড়া, বাকিগুলো নন-কার্সিওজেনিক নানান রোগের জন্য দায়ী হয়।
গবেষকদলের প্রধান অধ্যাপক ডা. নাজমা শাহীন বলেন, “চালে সীসা এবং আর্সেনিকের যে পরিমাণ পাওয়া গেছে, তা অ্যালাওয়েবল লিমিট বা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি। এগুলো দীর্ঘ সময় ধরে কনজিউম করলে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।”
অধ্যাপক ডা. নাজমা আরও বলেন, “আমাদের গবেষণার উদ্দেশ্য হলো সরকারকে একটি পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া, যাতে এসব খাদ্যে ভারী ধাতু দূষণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।”