বন্যা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বছরের মাঝামাঝি সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। এই সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বন্যার কারণে পানি, খাদ্য এবং স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে নানা সমস্যা দেখা দেয়। যা সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। বন্যা চলাকালীন এবং এর পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে সচেতনতা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপও নিতে হবে। যেমন_
বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা
বন্যার সময় এবং এর পরবর্তী সময়ে পানির সরবরাহ দূষিত হয়ে পারে। যা পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। বন্যার পূর্বাভাস পেলেই আগে থেকে বোতলজাত পানি সংগ্রহ করুন এবং তা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করুন। যদি সঞ্চিত পানি শেষ হয়ে যায়, তাহলে পানি ফুটিয়ে পান করুন। ফুটানোর মাধ্যমে পানির মধ্যে থাকা জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায। পানির ফিল্টার ব্যবহার করতে পারেন। পরিশোধন ট্যাবলেট বা তরল ব্যবহার করেও পানি বিশুদ্ধ করতে পারেন। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে বন্যার পানি যাতে কুয়া বা পাম্পের সঙ্গে মিশে না যায়, তা নিশ্চিত করতে সেগুলো ঢেকে রাখুন। বন্যার পানি সরাসরি পান করার ঝুঁকি কখনোই নেবেন না।
সঠিক খাদ্য গ্রহণ এবং সংরক্ষণ
বন্যার চলাকালীন এবং এর পরবর্তী সময়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খাদ্য সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে তা দূষিত হয়ে পড়ে। যা খাদ্যবাহিত রোগের কারণ হতে পারে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শুকনো এবং প্যাকেটজাত খাবার সংরক্ষণ করতে পারেন। চাল, ডাল, চিঁড়া, মুড়ি, বিস্কুট ইত্যাদি শুকনো খাবার সংরক্ষণ করুন। কারণ প্যাকেটজাত খাবার বন্যার সময় সহজেই সংরক্ষণযোগ্য। বন্যার পর ফলমূল এবং সবজি ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া জরুরি। যেকোনো ধরনের রাসায়নিক বা জীবাণু দূর করতে এগুলো ফুটানো পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। কোনো খাবার পঁচা মনে হলে তা এড়িয়ে চলুন।
বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা
বন্যার পর বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং সংযোগগুলো বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। পানি এবং বিদ্যুৎ একসঙ্গে মিশে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। তাই বন্যার পূর্বাভাস পেলে, ঘরের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামগুলো উঁচু স্থানে সরিয়ে রাখুন। বন্যার পর বৈদ্যুতিক সংযোগ ব্যবহার করার আগে একজন পেশাদারের মাধ্যমে তা পরীক্ষা করিয়ে নিন। কোনো বিদ্যুতিক তার বা সংযোগ পানিতে ডুবে থাকলে তা নিজে থেকে পরীক্ষা করবেন না। এতে বিপদ আরও বাড়তে পারে।
ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা
বন্যার সময় এবং এর পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দূষিত পানি এবং অসচেতনতার কারণে রোগের ঝুঁকি বাড়ে। প্রতিবার খাবার আগে, টয়লেট ব্যবহারের পরে এবং দূষিত বস্তু স্পর্শ করার পরে সাবান এবং পরিষ্কার পানি দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন। সাবান না থাকলে অ্যালকোহল বেসড হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। বন্যার সময় অস্থায়ী টয়লেট ব্যবহার করা যেতে পারে। যেকোনো ধরনের মলমূত্র যেন খোলা জায়গায় না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
বন্যায় প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা ডায়রিয়া। ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা শুরু হলে পরিমাণমতো খাওয়ার স্যালাইন খেতে হবে।দুই বছরের কম শিশুকে প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ১০-১২ চা চামচ এবং ২ থেকে ১০ বছরের শিশুকে ২০ থেকে ৪০ চা চামচ খাওয়ার স্যালাইন দিতে হবে। স্যালাইন না থাকলে বিকল্প হিসেবে লবণ-গুড়ের শরবত খাওয়াতে হবে। পাশাপাশি ভাতের মাড়, চিঁড়ার পানি, ডাবের পানি খাওয়াতে হবে। কিছুই পাওয়া না গেলে শুধু নিরাপদ পানি খাওয়ানো যেতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখা
বন্যা এবং এর পরবর্তী পরিস্থিতি মানসিক চাপের কারণ হতে পারে। পরিবার এবং প্রিয়জনদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ এবং সম্পদহানির কারণে মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। মানসিক চাপ কমাতে পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে সময় কাটান। সমস্যাগুলো শেয়ার করুন এবং একে অপরকে সাহায্য করুন। স্থানীয় সমাজ বা স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের সাহায্য নিন। এ ধরনের সাহায্য মানসিক এবং শারীরিক উভয়ভাবেই সহায়ক হতে পারে।
জরুরি চিকিৎসা সহায়তা
বন্যার সময় বা পরে যদি কারো অসুস্থতা দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা নিন। স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন এবং প্রয়োজন হলে সেখান থেকে পরামর্শ নিন।
স্যানিটেশন ও মশা নিয়ন্ত্রণ
বন্যার পর পানি জমে থাকে, যা মশার বংশবৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই জমে থাকা পানি সরিয়ে ফেলুন। বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখুন। মশারি ব্যবহার করুন এবং দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন। প্রয়োজন হলে স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য নিন।