গরমে আরাম পেতে অনেকেই মেঝেতে শুয়ে থাকেন। কিন্তু মেঝেতে শোয়া বা সরাসরি ফ্লোরে ঘুমানো অনেকে মানুষের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। বিশেষত যারা শারীরিকভাবে অসুস্থ, বয়সজনিত সমস্যায় ভুগছেন বা বিশেষ শারীরিক অবস্থার মুখোমুখি হয়েছেন, তারা মেঝেতে একেবারেই শোবেন না। নয়তো শরীরের জটিলতা আরও বেড়ে যাবে। মেঝেতে শোয়া নিয়ে কারা সতর্ক থাকবেন চলুন জেনে নেই এই আয়োজনে।
বয়স্ক মানুষ
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের হাড় ও জয়েন্টগুলো দুর্বল হয়ে যায়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে মেঝেতে শোয়া অস্বস্তিকর হতে পারে এবং কোমর বা পিঠে ব্যথার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাছাড়া, বয়সের কারণে র নীচুতে বা মেঝেতে ওঠানামা করাও কঠিন হতে পারে। এমনকি পড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে।
আরথ্রাইটিস বা জয়েন্টের সমস্যা থাকলে
যাদের আরথ্রাইটিস বা জয়েন্টের অন্যান্য সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য মেঝেতে শোয়া বেশ কষ্টদায়ক। মেঝে সাধারণত শক্ত হয়। যা তাদের জয়েন্টগুলোর উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। ব্যথা বাড়িয়ে দেয়। এ ধরনের ব্যক্তিদের জন্য একটি উপযুক্ত ম্যাট্রেস বা বিছানা ব্যবহার করা উচিত। যা তাদের শরীরকে সাপোর্ট দিতে পারে।
পিঠে বা কোমরে ব্যথা থাকা মানুষ
পিঠে বা কোমরে ব্যথা থাকলেও মেঝেতে শোয়া আরও খারাপ হতে পারে। একটি হার্ড এবং ফ্ল্যাট পৃষ্ঠে শোয়া পিঠের মুভমেন্টে বাধা সৃষ্টি করে। যা পেশি এবং জয়েন্টে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে। পিঠে ব্যথা থাকলে, নরম বা মাঝারি সাপোর্টযুক্ত ম্যাট্রেস ব্যবহার করা উচিত। যা স্পাইনকে ঠিকভাবে সাপোর্ট দিবে।
হাড়ের ঘনত্ব কমে গেলে
যাদের হাড়ের ঘনত্ব কম, যেমন অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য মেঝেতে শোয়া বিপজ্জনক হতে পারে। শক্ত মেঝেতে শোয়া তাদের হাড়ের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। যা হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এদের জন্য এমন একটি বিছানা বা ম্যাট্রেস ব্যবহার করা উচিত যা যথেষ্ট সাপোর্ট দিতে পারে।
শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা থাকলে
যাদের শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমা আছে, তাদের জন্য মেঝেতে শোয়া ভালো না। কারণ, মেঝের ধুলা, ময়লা এবং অন্যান্য অ্যালার্জেনের কারণে শ্বাসকষ্ট বাড়তে পারে। এ ধরনের ব্যক্তিদের উঁচু এবং পরিচ্ছন্ন বিছানায় ঘুমানো উচিত। যাতে তাদের শ্বাস-প্রশ্বাসে কোনও সমস্যা না হয়।
সার্জারি পরবর্তী রোগী
যেসব রোগীর সম্প্রতি কোনো অস্ত্রোপচার হয়েছে, তাদের জন্যও মেঝেতে শোয়া উপযুক্ত নয়। অস্ত্রোপচারের পর শরীর দুর্বল থাকে। মেঝেতে শোয়া হলে সার্জারির সাইটে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। যা চিকিৎসার গতি কমাতে পারে এবং জটিলতা সৃষ্টি করে।
গর্ভবতী নারী
গর্ভবতী নারীদের জন্যও মেঝেতে শোয়া কঠিন হতে পারে। বিশেষ করে দ্বিতীয় বা তৃতীয় ট্রাইমেস্টারের সময় এটি আরও কষ্টদায়ক হতে পারে। গর্ভবতীদের শরীরের ওজন বৃদ্ধির কারণে মেঝেতে শোয়া আরও অস্বস্তিকর হয়। পিঠের বা কোমরের ব্যথার ঝুঁকি বাড়তে পারে। এছাড়াও মেঝে থেকে ওঠার সময় ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হতে পারে। যা দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়ায়।
মেঝেতে শোয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতাও রয়েছে। তবে উল্লেখিত শারীরিক সমস্যাগুলো বা ঝুঁকিগুলোর যাদের মধ্যে রয়েছে তাদের জন্য মেঝেতে শোয়া বিপদজ্জনক হতে পারে। তাদের বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সঠিক বিছানা বা ম্যাট্রেস নির্বাচন করা উচিত।