• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৬

যেসব খাবারে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৪, ২০২৫, ০৮:৫৩ পিএম
যেসব খাবারে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে
ছবি: সংগৃহীত

ক্যান্সার বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ এবং প্রাণঘাতী রোগ। প্রতি বছর কোটিরও বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন এবং লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারান। যদিও জিনগত ও পরিবেশগত কারণেও ক্যান্সার হতে পারে। তবে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে ক্যান্সারের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। অনেক খাবার আছে, যেগুলো নিয়মিত বা অধিক পরিমাণে খাওয়ার ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যায়।

চলুন জেনে নেওয়া যাক, ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে সহায়ক কিছু খাবার ও উপাদান সম্পর্কে।

প্রক্রিয়াজাত মাংস
প্রক্রিয়াজাত মাংস নিয়মিত খেলে কোলোরেক্টাল (বৃহদান্ত্র ও মলাশয়) ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) প্রক্রিয়াজাত মাংসকে গ্রুপ-১ কার্সিনোজেন (অর্থাৎ, মানুষের ক্যান্সার হওয়ার নিশ্চিত প্রমাণ রয়েছে) হিসেবে ঘোষণা করেছে।
এ ধরনের মাংসে সাধারণত নাইট্রেট ও নাইট্রাইট নামক রাসায়নিক সংযোজন করা হয়। যা শরীরে গিয়ে কার্সিনোজেনিক যৌগে পরিণত হতে পারে।

অতিরিক্ত লাল মাংস
গরু, খাসি বা ভেড়ার মাংস নিয়মিত ও অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার সঙ্গে কোলোরেক্টাল, প্রস্টেট ও প্যানক্রিয়াস ক্যান্সারের ঝুঁকি যুক্ত রয়েছে। লাল মাংসে থাকা হেম আয়রন উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না হলে ক্ষতিকর যৌগ উৎপন্ন করতে পারে। এ কারণে সপ্তাহে ১–২ বার খাওয়া নিরাপদ হলেও প্রতিদিন বা অধিক পরিমাণে খেলে তা ঝুঁকিপূর্ণ।

অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার
চিপস, পাকোড়া, ফ্রাইড চিকেন, পরোটা বা বারবার পুনঃব্যবহৃত তেলে ভাজা খাবারে অ্যাক্রিলামাইড নামক ক্ষতিকর রাসায়নিক তৈরি হয়। যা বিশেষ করে কিডনি, লিভার ও গলার ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার কেবল ক্যান্সারই নয়, স্থূলতা এবং হৃদরোগেরও মূল কারণ।

চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার
যদিও সরাসরি চিনি ক্যান্সার তৈরি করে না, তবে অতিরিক্ত মিষ্টিজাত খাবার খাওয়ার ফলে স্থূলতা দেখা দেয়। যা স্তন ক্যান্সার, কোলোরেক্টাল ক্যান্সার ও জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। সুগার-সুইটেনড বেভারেজ (যেমন সফট ড্রিংক, বটলজাত জুস, ফ্লেভারড ইয়োগার্ট) নিয়মিত পান করাও ক্যান্সার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার
অতিরিক্ত লবণ খেলে পাকস্থলীর আস্তরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যা পরে গ্যাস্ট্রিক বা পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। পিকল, সয়াসস, চিপস, ইনস্ট্যান্ট নুডলস প্রভৃতি অতিরিক্ত লবণজাত খাবার প্রতিনিয়ত খাওয়া উচিত নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দৈনিক লবণ গ্রহণমাত্রা ৫ গ্রাম বা এক চা চামচের কম হওয়া উচিত।

সংরক্ষিত বা ক্যানজাত খাবার
ফ্রোজেন মিট, ক্যানড ফুড, প্যাকেটজাত স্যুপ বা সবজি সংরক্ষণ করতে ব্যবহৃত রাসায়নিক প্রিজারভেটিভ অনেক সময় কার্সিনোজেন হিসেবে কাজ করে। এদের মধ্যে সালফাইটস, সোডিয়াম নাইট্রেট ও কিছু কৃত্রিম রঙ রয়েছে, যেগুলো দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।

অ্যালকোহল
অ্যালকোহল পানের সঙ্গে মুখ, গলা, অন্ননালী, লিভার, স্তন ও কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি সরাসরি যুক্ত। WHO অ্যালকোহলকে গ্রুপ-১ কার্সিনোজেন হিসেবে ঘোষণা করেছে। বিশেষ করে ধূমপান ও অ্যালকোহল একসঙ্গে গ্রহণ করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যায়।

ট্রান্সফ্যাট ও কৃত্রিম চর্বি
মার্জারিন, বেকারি পণ্য (যেমন কুকিজ, কেক, পাফ), ফাস্টফুডে থাকা ট্রান্সফ্যাট শরীরে কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে। যা দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সারের জন্ম দিতে পারে।

পচা বা ছাঁচ ধরা খাবার
চাল, বাদাম, আটা, ডাল ইত্যাদি দীর্ঘদিন সংরক্ষিত থাকলে তাতে অ্যাফ্লাটক্সিন নামক ছাঁচ জন্মায়। যা লিভার ক্যান্সারের জন্য দায়ী একটি মারাত্মক বিষাক্ত উপাদান।

ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য সচেতন খাদ্যাভ্যাস এবং স্বাস্থ্যবান জীবনধারাই হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরক্ষা।

Link copied!