রমজান মাসে সারা দিন রোজা রাখা হয়। এই সময় আমাদের শরীর তুলনামূলক কম ক্যালরি গ্রহণ করে। শরীর ডিহাইড্রেড হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় নিয়মিত ব্যায়াম করা কষ্ট হয়ে যায়। তবে শরীরকে ফিট রাখতে রোজার সময়ও ব্যায়াম করা জরুরি। রোজা রেখে ব্যায়ামে কষ্ট হলে সাহরির সময়টা বেছে নিতে পারেন ব্যায়ামের জন্যে। পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রতিদিন হালকা কিছু ব্যায়াম করে নিতে পারেন। বিশেষ করে এই সময় যোগব্যায়াম করা যেতে পারে।
রমজান মাসে নিয়মিত ব্যায়াম করার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক আপনার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জেনে বুঝে আপনাকে সঠিক নির্দেশনা দিবেন। পুষ্টিবিদরা জানান, রোজার সময় অপেক্ষাকৃত হালকা ব্যায়ামই আপনার জন্য উপকারী। রোজার সময়, আপনার শরীর গ্লাইকোজেন আকারে সঞ্চিত শক্তির ওপর নির্ভর করে। তাই শরীরে সঞ্চিত শক্তি ধীরে ধীরে খরচ করার জন্য হাঁটার মতো ব্যায়াম বেছে নিন। এছাড়াও করতে পারেন যোগব্যায়াম। যা শরীর ও মনকে চাঙা রাখবে।
শরীর ও মন ভালো রাখতে যোগব্যায়াম চর্চা করতে পারেন। সাহরির সময়ের একটু আগে ঘুম থেকে উঠেও যোগব্যায়াম করে নিতে পারেন। এই সময় যে যোগব্যায়াম করতে পারেন_
অর্ধ-উত্তাসন
সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাত সোজা করে মাথার ওপরে তুলে নিন। এরপর মাথা ও পিঠ সোজা রেখে সামনে ঝুঁকে ৯০ ডিগ্রি কোণ করুন। এভাবে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ৩০ সেকেন্ড থেকে আগের আসনে ফিরে হাত নামিয়ে নিন। এই আসনে পেটের সমস্যা কমবে। শারীরিক শক্তি ও স্মৃতিশক্তি বাড়বে।
গোমুখাসন
এই আসনে দুই পা সামনে ছড়িয়ে সোজা হয়ে বসতে হবে। বাম পা হাঁটুর কাছ থেকে ভেঙে ডান পায়ের নিচে বাঁ পা এনে বা গোড়ালি দিয়ে ডান কোমরের নিচে স্পর্শ করুন। এবার ডান পা হাঁটুর কাছ থেকে ভেঙে বাঁ পায়ের ওপর দিয়ে নিয়ে গিয়ে ডান পায়ের গোড়ালি দিয়ে বা কোমরের নিচে স্পর্শ করে মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন। এবার ডান হাত মাথার ওপর তুলে কনুইয়ের কাছ থেকে ভেঙে ডান দিকে ঘুরিয়ে ডান হাতের আঙুল ধরুন। ৩০ সেকেন্ড এভাবে থাকুন। এরপর পা-হাত বদলে আবারও একইভাবে করুন। এই আসনে আপনার ঘুমের সমস্যা দূর হবে এবং শরীরের ব্যথা কমাবে।
বৃক্ষাসন
দুই পায়ের ওপর সমানভাবে ভর রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ান। ডান পা হাঁটুর কাছে ভেঙে বাঁ দিকে নিয়ে বা জানুর মূলদেশে ডান পা রাখুন। এবার দুই হাত কান বরাবর সোজা মাথার ওপর তুলে দুই তালু মিলিয়ে নিন। এভাবে ৩০ সেকেন্ড রাখুন। এরপর পা বদলে আবার করুন। এই আসন আপনার পা, কোমর, মেরুদণ্ডের শক্তি বাড়াবে এবং ফুসফুসের কার্যকারিতাও বাড়বে।
উষ্ট্র্রাসন
প্রথমে হাঁটুর ওপর ভর দিয়ে শিরদাঁড়া সোজা রেখে দাঁড়ান। পায়ের পাতা থেকে হাঁটু পর্যন্ত পায়ের নিম্নাংশ মাটির সঙ্গে লেগে থাকবে। এবার দুই হাত দিয়ে দুই পায়ের গোড়ালি বা গোড়ালির ঠিক ওপরের অংশটি ধরুন। এরপর বুক ও পেট একসঙ্গে যতটা সম্ভব ওপর দিকে নিয়ে মাথা কিছুটা পেছন দিকে নিন, যেন দেহভঙ্গি ধনুকের মতো হয়। চোখ থাকবে আকাশের দিকে। স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিন এবং ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড থাকুন। এরপর আগের অবস্থায় এসে হাঁটুর ওপর দাঁড়িয়ে পড়ুন। এই আসন হজম শক্তি ঠিক রাখে। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে। এছাড়া ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়বে। দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, অবসাদ, ঘুমের সমস্যা, মাথাব্যথা কমবে।
অর্ধকোটি চক্রাসন
দুই পায়ের পাতা এক জায়গায় করে সোজা হয়ে দাঁড়ান। দুই হাত কোমর বরাবর সোজা থাকবে। এবার ডান হাত কাঁধ বরাবর সোজা করুন। এরপর মাথার ওপর দিয়ে যতটা সম্ভব হাত বাঁ দিকে নিয়ে কোমর বাঁকা করুন। স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিন। ২০ সেকেন্ড এভাবে থাকার পর আগের অবস্থানে ফিরে আসুন। এই আসন পাকস্থলীর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করবে এবং মেদ কমাবে।